আজ ১০ জানুয়ারি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪০তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে একটি অবিস্মরণীয় দিন। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দীর্ঘ ১০ মাস পশ্চিম পাকিস্তানে কারাবাস শেষে ১৯৭২ সালের এইদিনে বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের মহানায়ক স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলার মাটিতে ফিরে আসেন। মহান এই নেতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে স্বাধীনতা সংগ্রামের বিজয় পূর্ণতা লাভ করে। এ কারণেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এটি একটি অবিস্মরণীয় ও ঐতিহাসিক দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে রয়েছে।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তত্কালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু দীপ্তকণ্ঠে ঘোষণা দিয়েছিলেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ বঙ্গবন্ধুর এ ঘোষণার পর মুক্তিকামী বাঙালি স্বাধীনতা সংগ্রামেরর প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। ২৫ মার্চ কালোরাতে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। অপারেশন সার্চলাইট নামের এ অভিযানের শুরুতেই পাকহানাদাররা বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তাঁর ধানমন্ডিস্থ বাসা থেকে আটক করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যায়। গ্রেফতারের পূর্ব মুহূর্তে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান। তাঁর এই ঘোষণা তত্কালীন ইপিআরের ওয়ারলেসের মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর গোটা বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বাঙালি যখন প্রতিরোধ যুদ্ধ গড়ে তুলেছে, বঙ্গবন্ধু তখন পাকিস্তানের কারাগারে প্রহসনের বিচারে ফাঁসির আসামি হিসেবে মৃত্যুর প্রহর গুনছিলেন। কারাগারে বঙ্গবন্ধুর সেলের পাশে তাঁর জন্য কবর পর্যন্ত খোঁড়া হয়েছিল। কিন্তু বাঙালির স্বাধীনতা, মুক্তির প্রশ্নে ফাঁসির আসামি হয়েও বঙ্গবন্ধু ছিলেন অবিচল, আপোষহীন। স্বাধীনতাকামী জনতা দীর্ঘ নয় মাস মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে দেশকে স্বাধীন করার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতেও বিশ্বব্যাপী জনমত গড়ে তোলে। বিশ্বনেতারা বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠেন।

পরে পরাজিত পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী শেষ পর্যন্ত বন্দিদশা থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর লন্ডন-দিল্লী হয়ে তিনি ঢাকায় পৌঁছান ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি। বিমানবন্দর থেকে বঙ্গবন্ধুকে তত্কালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) আনা হয়। সেদিন বিমানবন্দর থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পর্যন্ত ছিল লোকে লোকারণ্য। লাখ লাখ মানুষ তেজোদীপ্ত ‘জয় বাংলা’ শ্লোগানে তাদের অবিসংবাদিত প্রিয় নেতাকে স্বাগত জানায়। স্বাধীন প্রিয় বাংলাদেশের মাটিতে পা রেখেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন বঙ্গবন্ধু। দীর্ঘ ৯ মাস পাকহানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরদের গণহত্যার সংবাদ শুনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি। সেদিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লাখো জনতার উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঘোষণা দেন, ‘রক্ত দিয়ে হলেও আমি বাঙালি জাতির এই ভালোবাসার ঋণ শোধ করে যাব।’ কথা রেখেছেন জাতির পিতা। হিংস্র পাকহানাদাররাও যাঁর গায়ে আঁচড় দেয়ার সাহস দেখাতে পারেনি, স্বাধীন দেশে বাঙালি নামক একশ্রেণীর কুলাঙ্গার-বিশ্বাসঘাতকের হাতে তাঁকে জীবন দিতে হয়েছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে নিজের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে বঙ্গবন্ধু তাঁর কথা রেখে গেছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার খুনিদের ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী  বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি তাঁর বাণীতে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, স্বাধীনতার ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর অবদান অবিস্মরণীয়। ফাঁসির মঞ্চ থেকে ফিরে তত্কালীন রেসকোর্স ময়দানে বাংলার এই অবিসংবাদিত নেতা আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘আমার সারাজীবনের স্বপ্ন আজ পূরণ হয়েছে।

আমার বাংলাদেশ আজ স্বাধীন হয়েছে। একজন বাঙালি বেঁচে থাকতেও এ স্বাধীনতা নষ্ট হতে দেব না’। বঙ্গবন্ধু সেদিন সবাইকে ‘সোনার বাংলা’ গড়ার ডাক দিয়েছিলেন। আমি আশা করি দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে আমরা সে লক্ষ্য অর্জনে সফল হবো ইনশাল্লাহ। সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে দল-মত নির্বিশেষে সকলকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের নিভৃত কারাগারে অসহনীয় নির্যাতনের শিকার হন। প্রহসনের বিচারে ফাঁসির আসামি হিসেবে তিনি মৃত্যুর প্রহর গুনছিলেন। বাঙালি জাতির বিজয়ের ফলেই জাতির পিতা আমাদের মধ্যে ফিরে আসেন। স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের পর তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে পুনর্গঠনে সর্বশক্তি নিয়োগ করেন। ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সদস্যদের দ্রুত দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং বন্ধু দেশসমূহ দ্রুত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে। বঙ্গবন্ধুর ঐন্দ জালিক নেতৃত্বে অতি অল্পদিনের মধ্যেই বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের দৃঢ় অবস্থান তৈরি হয়। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকেরা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে স্তব্ধ করে দেয়। বন্দুকের জোরে ক্ষমতা দখলকারীরা গণতন্ত্র হত্যা করে, রুদ্ধ করে দেয় প্রগতি ও উন্নয়নের ধারা। অনেক সংগ্রাম আর ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে দেশে আজ গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে চলছে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতির পথে। কোন অপশক্তি যাতে গণতন্ত্র ও উন্নয়নের এ ধারাকে ব্যাহত করতে না পারে, জাতির পিতার স্বদেশ প্রত্যার্বতন দিবসে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসুন সকলে মিলে আমরা জনগণের জন্য একটি গণতান্ত্রিক, সুখী-সমৃদ্ধ, অসামপ্রদায়িক, কল্যাণকর এবং শান্তিপূর্ণ সোনার বাংলা গড়ে তুলি।

আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সংগঠন বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য বিস্তারিত কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকাল সাড়ে ৬টায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবনসহ সারাদেশে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন এবং বিকেল তিনটায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনাসভা। সভায় প্রধান অতিথি থাকবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে এ আলোচনাসভায় দেশের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী ও জাতীয় নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করবেন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং স্থানীয় সরকার, পল্ল¬ী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এমপি এক বিবৃতিতে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ সকল শ্রেণী-পেশা এবং সর্বস্তরের জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন।

জ ১০ জানুয়ারি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪০তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে একটি অবিস্মরণীয় দিন। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দীর্ঘ ১০ মাস পশ্চিম পাকিস্তানে কারাবাস শেষে ১৯৭২ সালের এইদিনে বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের মহানায়ক স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলার মাটিতে ফিরে আসেন। মহান এই নেতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে স্বাধীনতা সংগ্রামের বিজয় পূর্ণতা লাভ করে। এ কারণেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এটি একটি অবিস্মরণীয় ও ঐতিহাসিক দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে রয়েছে।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তত্কালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু দীপ্তকণ্ঠে ঘোষণা দিয়েছিলেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ বঙ্গবন্ধুর এ ঘোষণার পর মুক্তিকামী বাঙালি স্বাধীনতা সংগ্রামেরর প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। ২৫ মার্চ কালোরাতে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। অপারেশন সার্চলাইট নামের এ অভিযানের শুরুতেই পাকহানাদাররা বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তাঁর ধানমন্ডিস্থ বাসা থেকে আটক করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যায়। গ্রেফতারের পূর্ব মুহূর্তে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান। তাঁর এই ঘোষণা তত্কালীন ইপিআরের ওয়ারলেসের মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর গোটা বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বাঙালি যখন প্রতিরোধ যুদ্ধ গড়ে তুলেছে, বঙ্গবন্ধু তখন পাকিস্তানের কারাগারে প্রহসনের বিচারে ফাঁসির আসামি হিসেবে মৃত্যুর প্রহর গুনছিলেন। কারাগারে বঙ্গবন্ধুর সেলের পাশে তাঁর জন্য কবর পর্যন্ত খোঁড়া হয়েছিল।

কিন্তু বাঙালির স্বাধীনতা, মুক্তির প্রশ্নে ফাঁসির আসামি হয়েও বঙ্গবন্ধু ছিলেন অবিচল, আপোষহীন। স্বাধীনতাকামী জনতা দীর্ঘ নয় মাস মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে দেশকে স্বাধীন করার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতেও বিশ্বব্যাপী জনমত গড়ে তোলে। বিশ্বনেতারা বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠেন। পরে পরাজিত পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী শেষ পর্যন্ত বন্দিদশা থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর লন্ডন-দিল্লী হয়ে তিনি ঢাকায় পৌঁছান ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি। বিমানবন্দর থেকে বঙ্গবন্ধুকে তত্কালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) আনা হয়। সেদিন বিমানবন্দর থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পর্যন্ত ছিল লোকে লোকারণ্য। লাখ লাখ মানুষ তেজোদীপ্ত ‘জয় বাংলা’ শ্লোগানে তাদের অবিসংবাদিত প্রিয় নেতাকে স্বাগত জানায়। স্বাধীন প্রিয় বাংলাদেশের মাটিতে পা রেখেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন বঙ্গবন্ধু। দীর্ঘ ৯ মাস পাকহানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরদের গণহত্যার সংবাদ শুনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি। সেদিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লাখো জনতার উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঘোষণা দেন, ‘রক্ত দিয়ে হলেও আমি বাঙালি জাতির এই ভালোবাসার ঋণ শোধ করে যাব।’ কথা রেখেছেন জাতির পিতা। হিংস্র পাকহানাদাররাও যাঁর গায়ে আঁচড় দেয়ার সাহস দেখাতে পারেনি, স্বাধীন দেশে বাঙালি নামক একশ্রেণীর কুলাঙ্গার-বিশ্বাসঘাতকের হাতে তাঁকে জীবন দিতে হয়েছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে নিজের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে বঙ্গবন্ধু তাঁর কথা রেখে গেছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার খুনিদের ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি তাঁর বাণীতে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, স্বাধীনতার ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর অবদান অবিস্মরণীয়। ফাঁসির মঞ্চ থেকে ফিরে তত্কালীন রেসকোর্স ময়দানে বাংলার এই অবিসংবাদিত নেতা আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘আমার সারাজীবনের স্বপ্ন আজ পূরণ হয়েছে। আমার বাংলাদেশ আজ স্বাধীন হয়েছে। একজন বাঙালি বেঁচে থাকতেও এ স্বাধীনতা নষ্ট হতে দেব না’। বঙ্গবন্ধু সেদিন সবাইকে ‘সোনার বাংলা’ গড়ার ডাক দিয়েছিলেন। আমি আশা করি দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে আমরা সে লক্ষ্য অর্জনে সফল হবো ইনশাল্লাহ। সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে দল-মত নির্বিশেষে সকলকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের নিভৃত কারাগারে অসহনীয় নির্যাতনের শিকার হন। প্রহসনের বিচারে ফাঁসির আসামি হিসেবে তিনি মৃত্যুর প্রহর গুনছিলেন। বাঙালি জাতির বিজয়ের ফলেই জাতির পিতা আমাদের মধ্যে ফিরে আসেন। স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের পর তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে পুনর্গঠনে সর্বশক্তি নিয়োগ করেন। ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সদস্যদের দ্রুত দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং বন্ধু দেশসমূহ দ্রুত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে। বঙ্গবন্ধুর ঐন্দ জালিক নেতৃত্বে অতি অল্পদিনের মধ্যেই বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের দৃঢ় অবস্থান তৈরি হয়। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকেরা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে স্তব্ধ করে দেয়। বন্দুকের জোরে ক্ষমতা দখলকারীরা গণতন্ত্র হত্যা করে, রুদ্ধ করে দেয় প্রগতি ও উন্নয়নের ধারা। অনেক সংগ্রাম আর ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে দেশে আজ গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে চলছে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতির পথে। কোন অপশক্তি যাতে গণতন্ত্র ও উন্নয়নের এ ধারাকে ব্যাহত করতে না পারে, জাতির পিতার স্বদেশ প্রত্যার্বতন দিবসে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসুন সকলে মিলে আমরা জনগণের জন্য একটি গণতান্ত্রিক, সুখী-সমৃদ্ধ, অসামপ্রদায়িক, কল্যাণকর এবং শান্তিপূর্ণ সোনার বাংলা গড়ে তুলি।

আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সংগঠন বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য বিস্তারিত কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকাল সাড়ে ৬টায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবনসহ সারাদেশে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন এবং বিকেল তিনটায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনাসভা। সভায় প্রধান অতিথি থাকবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে এ আলোচনাসভায় দেশের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী ও জাতীয় নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করবেন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং স্থানীয় সরকার, পল্ল¬ী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এমপি এক বিবৃতিতে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ সকল শ্রেণী-পেশা এবং সর্বস্তরের জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন।