দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা মোবাইল ফোন সিম নম্বরের বিপরীতে নতুন সংযোগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মোবাইল অপারেটরদের বিরুদ্ধে। একই নম্বরে একাধিক সংযোগ দেওয়ার ঘটনাও ঘটছে। সাধারণ মানুষসহ সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রীর সিম নম্বরও বাদ পড়ছে না। এসব ঘটনায় থানায় মামলা করাসহ বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনেও (বিটিআরসি) অভিযোগ হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে গ্রাহকরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গেও যোগাযোগ করেছেন।
অন্যদিকে বন্ধ সিমে নতুন সংযোগ দেওয়ায় সরকারের রাজস্ব ক্ষতি বাড়ছে। এই ক্ষতি বন্ধ করতে মাঠে নেমেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড
(এনবিআর)।
ইতিমধ্যে তারা মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোকে চিঠি দিয়ে হুশিয়ার করেছে। নিয়মানুসারে সিমপ্রতি সরকারকে ৮শ’ টাকা রাজস্ব দেওয়ার কথা। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এ রাজস্ব বাঁচাতেই বন্ধ সংযোগে নতুন সংযোগ দেওয়ার কৌশল নিয়েছে অপারেটররা। ইতিমধ্যে একটি শীর্ষ মোবাইল ফোন অপারেটর অন্য দুই অপারেটরের বিরুদ্ধে বিটিআরসিতে এ অভিযোগ করেছে।
র‌্যাব জানিয়েছে, বিক্রির পর বেশ কিছুদিন ধরে বন্ধ আছে এমন সিমের সংখ্যা কোটির বেশি হবে। সুযোগ বুঝে অপারেটররা বন্ধ এসব সিম নম্বরের বিপরীতেই আবার নতুন সংযোগ দিচ্ছে। কখনও আবার একটা চালু নম্বরেই একাধিক ব্যক্তিকে সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। দুই মাস আগে পানিসম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন এমন ঘটনার শিকার হয়েছেন। তার ব্যবহৃত নম্বরটি হঠাৎ করে অন্য একজন ব্যবহার করতে শুরু করেন। বুঝতে পেরে মন্ত্রী সংশ্লিষ্ট অপারেটরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে তিনি রাজধানীর রমনা থানায় একটি মামলাও করেন। একই সঙ্গে অভিযোগ করেন বিটিআরসির কাছেও।
মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোঃ সাইফুল্লাহ এ বিষয়ে সমকালকে জানান, গত ১০ জুন বাজেট ঘোষণার আগে মন্ত্রী ওই নম্বরের মোবাইল ফোনটি ব্যবহার করতেন। ওই দিন বিকেলের পর থেকে তিনি দেখতে পান যে তার মোবাইলে আর কোনো ফোন আসছে না। একই সঙ্গে ফোনও করা যাচ্ছে না। বিষয়টি অপারেটরকে জানালে তারা জানান ফোনটি অন্য আরেকজন ব্যবহার করছেন। তবে অভিযোগ পাওয়ার পরপরই নম্বরটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
জানা যায়, টাঙ্গাইল থেকে একই নম্বরের সিমটি তোলা হয়। তবে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্ট এক মহিলা এবং সখীপুরের ইয়ামিন মিয়া নামের অপর একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অপর একজন পলাতক রয়েছে।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ওই নম্বরটি তোলার পরপর মন্ত্রী সেজে এখান থেকে বিভিন্ন জায়গায় ফোন করা হয়। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ইঞ্জিনিয়ারদের কাছে অর্থও দাবি করা হয়। এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, লজ্জার বিষয় হওয়ায় এ নিয়ে তিনি কোনো উচ্চবাচ্য করেননি।
র‌্যাব বলছে, অনেক দিন বন্ধ থাকা নম্বরগুলো বেছে নিয়ে অপারেটররা সেগুলোতে আবারও সংযোগ দেয়। র‌্যাবের ইন্টেলিজেন্স উইংয়ের পরিচারক লে. কর্নেল জিয়াউল আহসান সমকালকে বলেন, এ বিষয়ে তারা অনেক প্রমাণ পেয়েছেন। এর মাধ্যমে সরকারের কোটি কোটি টাকার কর ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে এক নম্বরে একাধিক সংযোগ দিয়ে কাউকে কাউকে অপরাধে জড়িয়ে পড়ার সুযোগ করেও দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এক্ষেত্রে তাদের কিছুই করার নেই। কেবল বিটিআরসি এবং এনটিআর এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পারে।
এনবিআরের সদস্য আবদুল মান্নান পাটোয়ারী বলেন, বন্ধ সিম নম্বরের বিপরীতে নতুন সংযোগ দেওয়ার খবর তারাও পেয়েছেন। কর ফাঁকি দেওয়ার জন্যই এমন ঘটনা ঘটছে। তিনি জানান, ইতিমধ্যে এনবিআরের কয়েকটি টিম এ বিষয়ে কাজ করছে। মোবাইল ফোন অপারেটরদের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, কোন অপারেটর কত সিম আমদানি করেছে, কতটা বাজারে ছেড়েছে এবং সরকারকে কত টাকা কর দিয়েছে সেই হিসাব মেলালেই আসল তথ্য পাওয়া যবে।
অপারেটরগুলোর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ সম্পর্কে গ্রামীণফোনের চিফ কমিউনিকেশন অফিসার কাজী মনিরুল কবীর বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি যাতে কোনো অবস্থায় সিম পুনঃবিক্রি না হয়। সে কারণে আমরা বিক্রেতাদের গুনে গুনে সিম দিই এবং পরে হিসাব বুঝে নেই। তবে কয়েকটি অপারেটর এমন কাজ করছে বলে খবর পেয়েছি।’
জানা গেছে, এর মধ্যে কয়েক দফা বিটিআরসির কাছে একই সংযোগ একাধিকবার বিক্রির অভিযোগ জমা পড়েছে। একটি বড় অপারেটর অন্য দুটি বড় অপারেটরের নাম উল্লেখ করে অভিযোগ করেছে। অভিযোগ পাওয়ার পর বিটিআরসি বাজার থেকে সিম কিনে পরীক্ষা করে দেখেছে অভিযোগ সত্য। তবে এ বিষয়ে বিটিআরসি এখনও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) জিয়া আহমেদ সমকালকে বলেন, সিম বিক্রির ক্ষেত্রে নিয়মকানুন যাতে কড়াকড়িভাবে মেনে চলা হয় সে বিষয়ে তারা সব সময়ই অপারেটরদের সঙ্গে কাজ করছেন। এক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সিম বিক্রির নীতিমালা করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, অক্টোবর থেকেই এ বিষয়ে কাজ শুরু হবে। তখন আর কোনো অপারেটরের নামে এমন অভিযোগের সুযোগ থাকবে না।

সমকাল-