কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলায় একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য খোলা আকাশের নিচে ফেলার দরুন বায়ু দূষণে দুই গ্রামের মানুষ সীমাহীন যন্ত্রণা পোহাচ্ছে। এলাকাবাসী প্রতিনিয়ত শিয়াল-কুকুর দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে। গাছের ফলফলাদি থেকে শুরু করে জমির ফসল বিনষ্ট করে ফেলছে ওইসব প্রাণী। এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার না পাওয়ায় এলাকায় চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
উপজেলার রামদী ইউনিয়নের রামদী ও বেপারীপাড়া গ্রামের লোকজন ওই দূষণের শিকার। দেশের বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান আফতাব বহুমুখী ফার্মের বর্জ্য ফেলার দরুন এলাকাটি দীর্ঘদিন ধরে দূষণের শিকার। শিল্প প্রতিষ্ঠানের আবর্জনাকে ঘিরে শিয়াল, কুকুর, কাক, চিলের অভয়ারণ্য হয়ে পড়েছে এলাকাটি। এসব প্রাণীর কাছে গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগী এমনকি মানুষও নিরাপদ নয়।
সরেজমিন এলাকায় গিয়ে দেখা যায় রামদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাঁচা রাস্তার পাশে দুটি গরু পাহারা দিচ্ছে স্থানীয় কৃষক শৈলেন দেবনাথ। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, মাঠে যতক্ষণ গরু থাকে ততক্ষণই পাহারা দিতে হয়। তা না হলে কুকুরগুলো হামলে পড়ে গরুর ওপর।
এলাকাবাসী জানায়, ৫ বছরে শেয়াল-কুকুর দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে অর্ধশতাধিক মানুষ এবং গৃহপালিত পশু। দূষণের কারণে সারাবছরই লোকজন নানা রোগের শিকার বলে অভিযোগ করেছে এলাকাবাসী। রামদী গ্রামের কৃষক ফারুক মিয়া জানান, সারাবছরই তার পরিবারের লোকজন পেটের পীড়া, চর্মরোগসহ নানা রোগে অসুস্থ থাকেন।
এলাকাবাসী জানায়, গত ৫ বছরে স্থানীয় কৃষক মহর উদ্দিনের স্ত্রী আয়েশা খাতুন, আলাল উদ্দিনের ছেলে সুজন, তায়েব উদ্দিনের ছেলে ফারুক মিয়া, জনু মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ আলীসহ ২০-২৫ জন নারী-পুরুষ এবং সমসংখ্যক গৃহপালিত পশু এলাকার হিংস্র শিয়াল-কুকুর দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে। রামদী গ্রামের গৃহবধূরা বাড়ির নলকূপগুলো দেখিয়ে বলেন, প্রতিনিয়ত শত শত কাক-চিল নলকূপে পায়খানা করছে। কখনও কখনও ওইসব প্রাণীর বিষ্ঠামিশ্রিত পানি শিশুরা পান করে ফেলার দরুন পেটের পীড়ায় ভোগে।
এলাকার কৃষকরা জানান, জমিতে শিয়াল-কুকুর আর গাছপালায় কাক-চিলের আক্রমণে জমির ফসল, গাছের ফলফলাদি কোনো কিছুই রক্ষা করা যাচ্ছে না। তাছাড়া বর্জ্যের দূষিত পানি ফসলি জমিতে যাওয়ায় ফসল ফলছে কম।
শিক্ষক মোঃ জামাল উদ্দিন বলেন, স্কুলগামী শিশুদের নিয়ে অভিভাবকরা সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় থাকেন। হিংস্র কুকুরগুলো শিশুদের একা পেলেই আক্রমণ করে বসে। তারা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এলাকার দূষণের কথা জানিয়ে দু’মাস আগে একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রশাসন এখনও কোনো তদন্তই করেনি।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে আফতাব বহুমুখী ফার্মের অপারেটিভ ডিরেক্টর এসএম মনোয়ারুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, হ্যাচারির পচা ডিম মাটির নিচে পুঁতে আর মরা মুরগি পুড়িয়ে ফেলা হয়। এলাকায় বায়ু দূষণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দূষণ আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে।
উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা সাইফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদে বেওয়ারিশ কুকুর নিধনের একটা বরাদ্দ থাকে। সংশিল্গষ্ট পরিষদ কুকুর নিধনের উদ্যোগ নিলে আমরা সহযোগিতা করব।
কুলিয়ারচর ইউএনও মোঃ মোকাম্মেল হক জানান, আফতাব বহুমুখী ফার্মের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা মাসিক মিটিংয়ে এ বিষয়ে আলোচনা করেছি। সংশিল্গষ্ট কোম্পানিকে আমরা লিখিতভাবে অবহিত করব দূষণরোধে ব্যবস্থা নিতে। তারা ব্যবস্থা না নিলে আমরা পদক্ষেপ নেব। এত দেরিতে কেন ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যেহেতু অভিযোগটি প্রাণীবিষয়ক তাই উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা পদে লোক না থাকায় এতদিন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যায়নি।

সমকাল-