আমি আগে ভাগেই বলে নিই আমার নাম বরুণ। প্রচলিত ভাষায় বৈন্যা।আমি বড় জাতের বরুণ মানে আমাও বৃক্ষের পরিধি ও উচ্চতা ছোট জাত থেকে বেশ বড়। আমি সাধারণত একটু নিচু জায়গায় জন্মে থাকি।মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর থানার প্রায় সব গ্রামেই আমাকে খুঁজে পাবে।বসন্তকালে আমার সাদা ও হালকা হলুদ ফুলের উচ্ছাস দেখতে পাবে গাছ ভর্তি। পাতা বড় একটা দেখা যায়না তখন।দূর থেকে দেখতে অনেকটা আমেরিকার Dog wood-এর মত মনে হবে।আমার ফুলের সে রকম কোন গন্ধ নেই। বসন্তকালে পুষ্পাবৃত গাছ সবার দৃষ্টি আকর্ষন করে থাকে।

বর্ষাকালে দেখা যায় আমার ফল অনেকটা কতবেলের মতো। তবে ফলকে কেউ তেমন একটা পাত্তা দেয়না।কারণ তার গন্ধ নাকি অনেকের কাছেই দুর্গন্ধের সামিল।তবে আমার ফলে আছে বেশ কিছু ঔষধিগুন। এতে আছে বিটাস্থেরোল, ট্রাইয়াকন্‌টান্‌ল, রক্তদোষ ও ওর্শ রোগের এক উপকারী ওষুধ। আমার ছাল ও পাতায় আছে ডাইনোজিলিন, লুপিওল, রুটিন ও কুয়ারসিটিনি। এসব পদার্থের সন্মিলিত প্রভাব মুত্রনালি রোগে উপকারী। কিডনি ও ব্লাডারের পাথর দূর করতে সাহায্য করে।আমার পাতা গরম করে সেঁক দিলে গিঁটবাতের ব্যাথা অনেকটা সেরে যায়।

আমার বেশ কটা সম্বলকৃত নাম আছে। যেমন: শ্বেতপুষ্প, কুমারক, সাধুবৃক্ষ, শ্বেতদ্রুম, মহাকপিথা, মারুতাপহ।অতি প্রাচীন কাল থেকেই আমি এক ভেষজ গাছ হিসেবে পরিচিত।অর্থব বেদে আমার উল্লেখ আছে। চরক ও সুশ্রুত আমার গুনগান করে অনেক কথা উল্লেখ করেছেন।এমনকি পাশ্চাত্যেও খ্রিষ্টপূর্ব এক শতাব্দীতে এক ভেষজ পন্ডিত Crataeva আমার ছাআল নিয়ে অনেক পরীক্ষা করেছেন।সে জন্য আমার গুনের নাম Crataeva ।

আমি বাংলাদেশের বনবাদাড়ে জন্মালেও অর্থব বেদে আছেঃ

বরুণঃ ইন্দ্রিয়ং দধঃ
অতিবীর্য্যং বলং ভগে’

অর্থ হলোঃ হে বরুণ, কেউ বর প্রার্থনা করলে তুমি তা পূর্ণ করো। তুমি ইন্দ্রিয়ে অর্থাৎ ভগে বীর্য স্থাপন করো। তোমার পত্র পতিত হয়। তোমার মূল সবিতা – সে পাষাণও তার শক্তি স্থাপন করে থাকে। এখন তোমরাই বলো না, আমার কি কোণ বরদান করার শক্তি আছে।

-ডঃ নওয়াজেশ আহমদ