বগুড়ার ধুনট উপজেলার বেলকুচি গ্রামের সাধারণ কৃষক মুকুল সরকার কৃষিবিদ না হয়েও প্রমাণ করলেন,এই ধান বন্যাপ্রবণ এলাকার জন্য আশীর্বাদ। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরও এই ধান চাষ করে ভালো ফলন পাওয়া গেছে। জমিতে দিতে হয়নি সেচ ও সার। নিজের গবেষণায় আবিষ্কার করেছেন, বন্যাপ্রবণ এলাকায়ও পাট চাষের পর রবি মৌসুম পর্যন্ত জমিতে ধান চাষ করে ভালো ফলন পাওয়া যায়। চোখ ও মন জুড়ায় ধানক্ষেতের সোনালি শীষ দেখে।

মুকুলের চাষ করা বিনাধান-৭-এর জমি গত সপ্তাহে দেখতে ময়মনসিংহ থেকে ধুনটে গিয়েছিলেন বিনার মহাপরিচালক মৃত্তিকাবিজ্ঞানী ড. এম এ সাত্তার। তিনি মুকুল সরকারের ৪০ শতক জমির ধান কেটে মাঠ দিবসের উদ্বোধন করেন। জানা গেছে, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) এই ধান উৎপাদন করে দেশের কৃষকের হাতে তুলে দিয়েছে অতি অল্প সময়ে।

বিনার গবেষণায় এই ধান চাষের একটি নির্দিষ্ট সময় উল্লেখ করে বলা হয়েছে, সঠিক সময়ে ও সুষ্ঠু পরিচর্যায় বিনাধান-৭ চাষ করা হলে আমন মৌসুমেই বিঘাপ্রতি অন্তত ১৬ মণ ধান উৎপাদন হবে। আগাম চাষ হওয়ায় এই ধান কেটে রবিশস্য_আলু, সরিষা, মুগডালসহ অন্যান্য শাকসবজিও চাষ করে বাড়তি আয় করা যায়। পূর্ব বগুড়ার ধুনট, সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলার নদীতীরবর্তী এলাকার হাজার হাজার কৃষক বন্যার কারণে সাধারণত জমিতে পাট চাষ করে। বন্যার সঙ্গে সঙ্গেই সেই পাট কেটে ঘরে তোলে।

এরপর দীর্ঘ সময় পাটের সেই জমি অনাবাদি পড়ে থাকে। পরে রবি মৌসুম এলে তাতে অন্য ফসল ফলানো হয়। এবার বন্যা কম ও দীর্ঘস্থায়ী না হওয়ায় পাটের জমিতে বিনাধান-৭ লাগিয়েছিলেন মুকুল। আমন মৌসুমে তাঁর অন্যান্য জমিতে যেসব জাতের ধান চাষ করেছিলেন, তার চেয়ে অন্তত এক মাস পর পাটের জমিতে লাগান বিনাধান-৭। কিন্তু ওই সব ধান যখন মাড়াই শুরু হয়, ঠিক তার পর পরই পাকতে শুরু করেছে বিনাধান-৭। সব মিলে ধান পাকতে সময় লেগেছে ৯০ দিন। বিলম্বে লাগানোর পরও একই সময়ে ধান পাকার সংবাদ পেয়ে বিনার মহাপরিচালক ড. এম এ সাত্তার তা সরেজমিন দেখতে যান।

 কৃষিবিদরা জানান, বেলে দো-আঁশ ও এঁটেল দো-আঁশ মাটি বিনাধান-৭ চাষের উপযোগী। বেশি নিচু (যেখানে দীর্ঘদিন পানি জমে থাকে) ব্যতীত প্রায় সব ধরনের জমিতেই বিনাধান চাষ করা যায়। বীজতলার জন্য প্রতি হেক্টরে লাগে ১০০ থেকে ১২০ কেজি ইউরিয়া, ৮০ থেকে ১০০ কেজি টিএসপি ও ৩০ থেকে ৫০ কেজি এমওপি সার। রোপা আমনের জন্য প্রতি হেক্টরে লাগে ১৫০ থেকে ১৮০ কেজি ইউরিয়া, ১১০ থেকে ১২০ কেজি টিএসপি ও ৩০ থেকে ৩৫ কেজি এমওপি সার। জাতটির চাষপদ্ধতি অন্যান্য উফশী রোপা আমনের মতোই।

 তবে এর জীবনকাল কম হওয়ায় ভালো ফলনের জন্য চারার বয়স ও পরিচর্যায় বিশেষ সতর্ক থাকতে হয়। ৫ শতাংশ (২০০ বর্গমিটার) পরিমাণ বীজতলায় ১০ কেজি বীজ ফেলা যায়। জুনের শেষ সপ্তাহ থেকে জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত বীজতলা তৈরি করে ২০ থেকে ২৫ দিন বয়সের চারা রোপণ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। তবে জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত বীজতলা করা যাবে। সারিবদ্ধভাবে চারা রোপণ করলে ফলন বেশি হয়।

-কালের কন্ঠ