বাংলাদেশ ক্রিকেট দল এখন কোথায়? বিশ্বকাপে মজে থাকা দর্শকদের অনেকেই হয়তো বলবেন, এই তো সেদিনই ইংল্যান্ডে খেলতে দেখলাম মাশরাফিদের। ব্রিস্টলে ন্যাটওয়েস্ট সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচটিতে তারা হারিয়ে দিয়েছে ইংল্যান্ডকে। এরপর ইংল্যান্ডের প্রতিশোধের আগুনে পুড়ে শেষ ম্যাচটি হেরেছে। ফুটবলে মেতে থাকা অনেকেই হয়তো এরই মধ্যে জেনে নিয়েছেন এবারে ইউরোপ সফরে বেরিয়েছে বাংলাদেশ দল। ইংল্যান্ড দর্শন শেষে তাদের গন্তব্য পড়শি আয়ারল্যান্ডে। ইংল্যান্ড সিরিজ শেষ করে পড়শি আয়ারল্যান্ডেই তাঁবু গেড়েছে মাশরাফিরা। বেলফাস্টে আজ বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩.৪৫ মিনিটে শুরু হবে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচের আরএসএ সিরিজের প্রথম ম্যাচটি। দুঃখের বিষয়, বাংলাদেশে সম্প্রচারিত কোনো স্যাটেলাইট চ্যানেলেই ম্যাচটি দেখা যাবে না। ম্যাচের খবর জানতে ভরসা কেবল ক্রিকইনফোর মতো ক্রিকেটের স্বনামধন্য কিছু ওয়েবসাইট। ইউরোপের এই সিরিজ ঘিরে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের আগ্রহও যেন খানিকটা কম। সিরিজে দলের সঙ্গে নেই কোনো মিডিয়া ম্যানেজার। মাশরাফিদের অবস্থান এবং বর্তমান অবস্থা মিডিয়াকে জানানোরও কোনো ব্যবস্থা রাখেনি বিসিবি। আর তাই জানা যায়নি এই সিরিজে সাকিব দলের সঙ্গে আছেন কি-না? ইংল্যান্ডে মাইনর কাউন্টি খেলার জন্য এই সিরিজ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। গতকাল বিসিবির অসমর্থিত সূত্রের খবর, আয়ারল্যান্ডে দলের সঙ্গে সাকিব থাকলেও স্কটল্যান্ডে যাবেন না তিনি। বেলফাস্টে আজ প্রথম ওয়ানডে শেষ করেই আগামীকাল একই মাঠে ফের আইরিশদের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। সেখান থেকে তারা চলে যাবে স্কটল্যান্ডে। ১৯ জুলাই স্কটিশদের বিপক্ষে একটি মাত্র ওয়ানডে খেলবে মাশরাফিরা। স্কটল্যান্ডের পর একই মাঠে হল্যান্ডের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। আর সেটিই হবে এবারের ইউরোপ সফরে বাংলাদেশিদের শেষ ম্যাচ।
ইংল্যান্ডকে দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচে হারিয়ে ইতিহাস গড়া বাংলাদেশ দলের পক্ষ থেকে অধিনায়ক মাশরাফি ঘোষণা দিয়েছেন_ এই যাত্রায় সব ম্যাচই জয়ের আশা রাখছে তার দল। ‘কয়েক মাস টানা হারের পর ইংল্যান্ডের মাটিতে একটি জয় পেয়েছি আমরা। দলের সবাই বিশ্বাস করতে শুরু করেছে এতদিনের পরিশ্রমের ফল মিলতে শুরু করেছে। আশা করি আয়ারল্যান্ড এবং স্কটল্যান্ডেও জয়ের সেই ধারা অব্যাহত থাকবে।’ নতুন অধিনায়কের হাতে শুরুতেই বড় একটি জয় দেখার পর সমর্থকরাও আশাবাদী হয়ে আছে। কিন্তু আয়ারল্যান্ডের ক্যারিবীয় কোচ ফিল সিমন্স কিন্তু সতর্ক করে দিয়েছেন মাশরাফিদের। ‘হতে পারে বাংলাদেশ আমাদের চেয়ে র‌্যাংকিংয়ের ওপরের দল। কিন্তু এটাও সত্য যে, গত দুটি বিশ্বকাপেই তাদের হারিয়েছি আমরা। ২০০৭ বিশ্বকাপে বার্বাডোজের মাটিতে তাদের হারিয়েছিল আইরিশরা। গত বছর ট্রেন্টব্রিজে টি২০ বিশ্বকাপেও বাংলাদেশিরা হেরেছে আমাদের কাছে। তাই এই সিরিজে আগেই বাংলাদেশকে এগিয়ে রাখার কোনো সুযোগ নেই। মাঠেই দেখা যাবে কী হয়।’ আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দুর্বলতা থাকলেও এমনিতে মাশরাফিদের ধারেকাছে আসে না আইরিশরা। ২০০৮ সালের মার্চে বাংলাদেশে এসে তিন ম্যাচ সিরিজের সবক’টিতেই হেরেছিল আয়ারল্যান্ড। এর আগে ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে স্কটল্যান্ড এসেছিল একবার বাংলাদেশে। তারাও দুই ম্যাচের সিরিজে সবক’টিতে হেরেছিল।
কিন্তু আয়ারল্যান্ডের মাটিতে আইরিশদের মোটেই খাটো করে দেখার কিছু নেই। আজ বেলফাস্টের এই পাহাড়ঘেরা মাঠেই গত বছর ইংল্যান্ড হারতে হারতে বেঁচে গিয়েছিল। মাত্র ৩ রানের জয় নিয়ে ইংলিশরা হাঁফ ছেড়েছিল। আয়ারল্যান্ডের এই দলের অনেকেই সারাবছর ইংল্যান্ডে কাউন্টি খেলায় ব্যস্ত থাকেন। আইরিশ অধিনায়ক উইলিয়াম পোর্টারফিল্ড তাদেরই একজন। এছাড়া এই সিরিজে ফিরিয়ে আনা হয়েছে নিওল ও’ব্রাইন, বয়োড র‌্যাঙ্কিন আর গ্যারি উইলসনকে। আয়ারল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের ওয়েবসাইটে বড় করে দেওয়া হয়েছে এই সিরিজ ঘিরে আইরিশদের উন্মাদনা। ‘আমরা নিয়মিত আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে চাই। বাংলাদেশের বিপক্ষে এই সিরিজটা সেই সুযোগ এনে দিয়েছে আমাদের সামনে। বাংলাদেশের র‌্যাংকিং আমাদের চেয়ে খুব এগিয়ে না। এ ধরনের কাছাাকাছি মানের দলের সঙ্গে খেলা হলে আমাদের ক্রিকেট আরও এগিয়ে যাবে।’ আইরিশদের মুখপাত্র হয়ে কোচ ফিল সিমন্স যখন এমন কথা বলেন তখন ধরে নিতে হবে এই সিরিজে আটঘাট বেঁধেই নেমেছে আয়ারল্যান্ড।

ক্রীড়া প্রতিবেদক সমকাল-