ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল হয়ে মধুপুর। তারপর আরও খানিকটা দূরে টেলকি বাজার। সেখানে রবি খানের ওষধি গাছের বাগানে গিয়ে ভুঁইকুমড়ার ফুল দেখে পথের সব ক্লান্তি নিমেষেই দূর হয়ে গেল। লতানো গাছে এমন সুদৃশ্য ফুল খুব কমই দেখা যায়। বেগুনি রঙের বৃষ্টিস্নাত ফুলগুলো স্নিগ্ধ চোখে যেন তাকিয়ে আছে। শালবন অঞ্চলে প্রাকৃতিকভাবে জন্মালেও আমাদের নাগরিক উদ্যানে দেখা যায় না। তাই প্রথমে চিনতে পারিনি। সিরিন মারাকের কাছ থেকেই নামটা জানা গেল। তিনি আমাকে বাগানটা ঘুরে দেখাচ্ছিলেন।

সিরিন মারাকের দেওয়া নামের সূত্র ধরেই এ ফুল সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আগ্রহী হই। একসময় পেয়েও যাই। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর আরণ্যক গ্রন্থের ৬৪ পৃষ্ঠায় এ ফুলের চমৎকার বর্ণনা দিয়েছেন। ‘..প্রথমে ভাবিলাম লোকটা ভুঁই-কুমড়া তুলিতে আসিয়াছে। ভুঁই-কুমড়া লতাজাতীয় উদ্ভিদ, মাটির মধ্যে লতার নিচে চালকুমড়ার আকারের প্রকাণ্ড কন্দ জন্মায়—উপর হইতে বোঝা যায় না। কবিরাজী ঔষধে কাজে লাগে বলে বেশ দামে বিক্রয় হয়।’ অধ্যাপক দ্বিজেন শর্মা নিসর্গ নির্মাণ ও নান্দনিক ভাবনা গ্রন্থে আরণ্যক-এ উল্লিখিত যেসব উদ্ভিদপ্রজাতির উল্লেখ করেছেন, সেখানেও ভুঁইকুমড়ার প্রসঙ্গ আছে।

ছাগলখুরী বা সাগরলতার সঙ্গে এদের অনেক সাদৃশ্য রয়েছে। তবে ফুল আকারে কিছুটা ছোট। আমাদের দেশে এদের ঘনিষ্ঠ প্রজাতি ডোলকলমি, জলকলমি ও মর্নিংগ্লোরি। সারা পৃথিবীতে আইপোমিয়া গুনে প্রায় ৫০০ প্রজাতির গাছ দেখা যায়। বর্তমানে নতুন নতুন আবাদিত জাত এ সংখ্যাকে আরও সমৃদ্ধ করছে। এদের অধিকাংশই মর্নিংগ্লোরি নামে পরিচিত। সাধারণত বাগানের শোভা বাড়ানোর জন্যই চাষ। আইপোমিয়া বাটাটাস প্রজাতি থেকে পাওয়া যায় মিষ্টি আলু। লতা ও কন্দ বিভিন্ন রোগের ওষুধ তৈরিতে কাজে লাগে। সম্ভবত মাটির নিচের কন্দটি কুমড়ার আকৃতির হওয়ায় এমন নামকরণ।

ভুঁইকুমড়া (Ipomoea mauritiana) লতানো গাছ। আশ্রয় পেলে খুব সহজেই চারপাশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। বন-বাদাড়, ঝোপ-জঙ্গল কিংবা পরিত্যক্ত স্থান পছন্দ। অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকায়ও সহজলভ্য। পাতা সবুজ, মিষ্টি আলুর পাতার মতো, কিনারা গভীরভাবে খাঁজকাটা, লতি পাঁচ থেকে সাত ভাগে বিভক্ত। প্রায় ছয় ইঞ্চি লম্বা বোঁটায় দুই থেকে তিন ইঞ্চি চওড়া গাঢ় বেগুনি রঙের ফুলগুলো ফোটে। প্রধান প্রস্ফুটনকাল বর্ষা-শরৎ হলেও শীতকাল ছাড়া প্রায় সারা বছরই কমবেশি ফোটে। কন্দ বেশ বড়, সাদা ও সুমিষ্ট।

লিখেছেনঃ মোকারম হোসেন