কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার সাদেকপুর গ্রামে গতকাল শুক্রবার বিকেলে দুই বংশের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া উভয়পক্ষের আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৮০ জন। পুলিশ ২০ জনকে আটক করেছে।
এদিকে, ঢাকার কেরানীগঞ্জে দুই গ্রামের লোকজনের মধ্যে গতকাল দফায় দফায় সংঘর্ষে একজন নিহত ও কমপক্ষে ৫০ জন আহত হয়েছে। পুলিশ ১২ জনকে আটক করেছে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ভৈরব উপজেলার সাদেকপুর গ্রামের ভুঁইয়া বংশ ও শেখ বংশের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। বিরোধের জের ধরে গতকাল বিকেল পাঁচটার দিকে দুই পক্ষের কয়েক শ লোক দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় প্রতিপক্ষের বল্লমের আঘাতে গুরুতর আহত হন সাত্তার ভুঁইয়ার ছেলে উজ্জ্বল ভুঁইয়া (২৬)। বাজিতপুর জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। এ ছাড়া সংঘর্ষে গুরুতর আহত ফুল মিয়া, মিলন মিয়া, নজরুল, ইয়াসমিন বেগম, জাবেদ মিয়া, সাগর মিয়া ও মাসুদ খানকে কুলিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং হাসিম উদ্দিন মেম্বার ও খোকন মিয়াসহ আরও কয়েকজনকে জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহজাহান কবীর জানান, সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে সাতটি ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ১৫ জনকে এবং বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে আরও পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। তবে কোনো পক্ষ থেকে এখনো মামলা করা হয়নি।
হামলার জন্য ভুঁইয়া বংশের নেতৃত্বে থাকা রফিক ভুঁইয়া এবং শেখ বংশের নেতৃত্বে থাকা জামিল উদ্দিন প্রতিপক্ষকে দায়ী করেছেন।
এদিকে, ঢাকার কেরানীগঞ্জের কোন্ডারচর গ্রামের সালাম গত বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর আলু খেতে জমে থাকা বৃষ্টির পানি সরিয়ে দেওয়ার জন্য জমির আইল কেটে দেন। পানি গিয়ে পড়ে বাক্তারচর গ্রামের কমর উদ্দিনের আলুখেতে। এর জের ধরে সালাম ও কমর উদ্দিনের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এরপর রাত নয়টার দিকে কমর উদ্দিন তাঁর লোকজন নিয়ে সালাম ও তাঁর আত্বীয়-স্বজনের সাতটি ঘর ভাঙচুর করেন। এ ঘটনার পর শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে আবারও তারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় বাক্তারচর গ্রামের লোকজন মারধর করে কোন্ডারচর গ্রামের দুধ ব্যবসায়ী রফিককে ঝিলের পানিতে ফেলে দেয়। দুপুর দুইটার দিকে রফিকের মৃতদেহ ভেসে উঠলে কোন্ডারচর গ্রামের লোকজন পুনরায় উত্তেজিত হয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় সংঘর্ষে উভয় গ্রামের অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে হাসান, জহির, আমান, শুক্কুর, এনায়েত হোসেন, শুভ, ওহিদুল, মাইনুদ্দিন ও গুলজার হোসেনকে স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সংঘর্ষের পর বিকেলে পুলিশ কোন্ডারচর গ্রাম থেকে ১২ জনকে আটক ও রামদা, জুইতা, টেঁটা বল্লমসহ বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করেছে। আটক করা ব্যক্তিরা হলেন হাকিম, মাসুদ, নওয়াব মিয়া, আরুস মিয়া, শুক্কর, লালচান, মজিবর, রাজু, রুবেল ও ওহিদুল।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ওসি আবুল বাশার জানান, জমিসংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে দুই গ্রামের লোকজনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। এরই জের ধরে তারা গতকালের সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।

প্রথম আলো