মেয়েটির বয়স ১৩-১৪ বছর। গরিব ঘরে জন্ম। প্রতিবেশীদের কাছে প্রাণবন্ত আর হাসিখুশি মেয়ে হিসেবে পরিচিত সে। কিন্তু তার জীবনের স্বাভাবিকতা থেমে যায় গত ঈদুল আজহার দুই দিন আগে। ওই দিন রাতে প্রতিবেশী এক যুবক কাঁচাঘরের দরজা খুলে তাকে ধর্ষণ করে। চিৎকারে প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসে, ধর্ষকও শনাক্ত হয়।
কয়েক দিন পর গ্রামে বসে সালিস। অভিযুক্ত ধর্ষণের কথা স্বীকার করেন। প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ধর্ষক মাহবুব মিয়াকে (২৭) ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। মেয়েটির বাবা সমাজপতিদের রায় মেনে নেননি। অভিযোগ নিয়ে থানা পর্যন্ত যান তিনি। কিন্তু তাঁর অভিযোগটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হতে পারেনি। তার আগেই ধর্ষকের পরিবার আর সমাজপতিদের অব্যাহত চাপ; হয় ৩০ হাজার টাকা নাও, না হয় বিয়ে দাও। একপর্যায়ে সিদ্ধান্ত মেনে নেয় মেয়েটির পরিবার। কিন্তু বিয়ে কেবল কাগজে-কলমেই থেকে যায়। স্বামী বা তাঁর পরিবারের কাছ থেকে কোনো স্বীকৃতি বা মর্যাদা জোটেনি তার। মানসিক যন্ত্রণা, নির্যাতন, আর অপবাদ হয় তার নিত্যসঙ্গী। সর্বশেষ ১ ফেব্রুয়ারি স্বামী-শাশুড়ির বর্বরতার শিকার হয়ে হাসপাতালে শয্যাশায়ী হতে হয় তাকে। তার বাড়ি কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার রামদী ইউনিয়নের মনোহরপুরে। ধর্ষক মাহবুব মিয়ার বাড়িও একই গ্রামে। মাহবুব কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলার বাঙ্গালপাড়ার একটি মাদ্রাসার ছাত্র।
সরজমিনে দেখা যায়, মেয়েটি কুলিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৩ নম্বর শয্যায় চিকিৎসাধীন। সে প্রথম আলোকে বলে, ‘বিয়ের দিন থাইক্কা মাহবুবের এক কথা। তরে আমি বিয়ে করি নাই। মামলা থাইক্কা বাঁচতে ঘরে তুলছি। এরপর থাইক্কা প্রায় সময় শরীরের মধ্যে গরম পানি ও ভাতের মাড় ঢাইল্লা দিত। বেশি জোরে কানতেও পারতাম না। জোরে কানলে এর লাইগ্গা আছিল শাস্তি।’ সে আরও বলে, ‘সেদিন সামান্য একটা কথা লইয়া শাশুড়ি সুফিয়া বেগম ও স্বামী জোট বাইন্ধা সারা শরীরে কামড়ানো শুরু করে। বাঘের মতো নক দিয়া খামছাইতে থাহে।’ পরিবারের সদস্যরা জানান, ঈদুল আজহার দুই দিন আগে রাত ১২টার দিকে মাহবুব ঘরে ঢুকে মেয়েটিকে ধর্ষণ করেন। মেয়েটির চিৎকারে লোকজন এগিয়ে এসে দেখেন, মাহবুব বেরিয়ে যাচ্ছেন।
ঘটনার কয়েক দিন পর রামদী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান ইসমাইল চৌধুরীর সভাপতিত্বে সালিস বসে। ওই সালিস বৈঠকে ইউপি সচিব মো. মাসুদ মিয়া, সদস্য নামধর খান, স্থানীয় বাসিন্দা শামসুল ইসলাম, হাসু মিয়া, আকবর মিয়া, হাসান আলীসহ প্রায় ২০ জন উপস্থিত ছিলেন। সালিসে মাহবুব দোষ স্বীকার করে নিলে মাতব্বরেরা তাঁকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
মেয়েটির মা জামেলা খাতুন আবেগে আপ্লুত হয়ে বলেন, ‘বিশ্বাস করেন ভাজান, লম্পটের (মাহবুব) লগে বিয়া দিতে চাই নাই। বিয়া না দিয়াই বা কী করুম। গ্রামে বসত করার জো আছে?’
মাতব্বর নামধর খান বলেন, ‘মাহবুব ছেলে হিসেবে খারাপ নয়। ভুল করে একটা খারাপ কাজ কইরা ফেলাইছে। এই ধরেন, মানুষের ভুল হয় না। এ কারণে দরবারের মাধ্যমে শেষ করার চিন্তা করি। প্রথমে টাকার বিনিময়ে চাইছিলাম। হয় নাই। পরে বিয়ার মাধ্যমে সমস্যার নিষ্পত্তি করি।’ তিনি আরও বলেন, ‘মেয়েটির বাবার অবস্থা কাহিল। কোনো রকমে দিন যায়। এ রকম বাস্তবতায় বিয়াই আমরার কাছে ভালা সমাধান মনে হয়েছে।’
কুলিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আবু উবায়দা বলেন, ‘মেয়েটির সারা শরীরে কামড় ও নখের আঁচড়ের জখম হয়েছে। গোপনাঙ্গের আঘাতও গুরুতর।’ কুলিয়ারচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মূয়ীদ চৌধুরী বলেন, মেয়েটির স্বামীসহ পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে তার মা একটি মামলা করেছেন। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গতকাল বিকেলে মাহবুব মিয়ার গ্রামের বাড়ি কুলিয়ারচরের মনোহরপুরে গিয়ে পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি। প্রতিবেশীরা জানান, ঘটনার পর থেকে মাহবুবসহ অন্যরা বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে।
-সাইফুল হক মোল্লা ও সুমন মোল্লা
ata khobui mormanthik. dhoshiderke amon shasthi deoa uchith, jathe duniar oneo julumkarira e theke shikkha nithe pare. yea allah aphni e meyetir upor shanti borshon korun. ameen