সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে গত শুক্রবার কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার সদর ইউনিয়নের কালীবাড়ী বটতলা ও গরুচরা ঘাটে চোখে পড়ে শত শত মানুষের জটলা। কেউ এসেছিলেন শ্রম বিক্রি করতে, কেউ কিনতে। চলতে থাকে দরদাম; ওঠানামা করে পণ্যের মতোই। স্থানীয় ভাষায় কেউ তাঁদের বলে দাওয়ালি, কেউ বলে মুনি, ভদ্র ভাষায় অনেকে ডাকেন কৃষিশ্রমিক।
নিকলীতে এখন চলছে বোরো ধান কাটার মৌসুম। এ মৌসুমে শ্রমিকের চাহিদাও থাকে অনেক বেশি। এ জন্য দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে কৃষিশ্রমিকেরা চলে আসেন উপজেলার হাটগুলোতে। তাঁরা থাকবেন পুরো বৈশাখ মাস পর্যন্ত।

উপজেলার বিভিন্ন শ্রমবাজার ঘুরে দেখা যায়, রংপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রামের চিলমারী, ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, শেরপুর, নেত্রকোনার মদন, কেন্দুয়া, দুর্গাপুর, কলমাকান্দা ও পূর্বধলা, জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলাসহ বিভিন্ন স্থানের অভাবী লোকজন এসেছেন কাজের সন্ধানে। ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে সকাল আটটা পর্যন্ত চলে এ বাজার। কারও শ্রম বিক্রি হয় এক দিন, কারও পাঁচ দিন, কারও সাত দিন। কারও আবার ১০ দিনের শ্রম বিক্রি হয়। বর্তমানে ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় দিন হিসেবে শ্রম বিক্রি হচ্ছে।

কালীবাড়ী বটতলা ও গরুচরা শ্রমিক হাটে কথা হয় কলমাকান্দার কৃষিশ্রমিক নাছির মিয়া, ইদ্রিস আলী ও রমিজের সঙ্গে। তাঁরা বলেন, ‘আমাদের এলাকায় এখন কাজ নেই। তাই প্রতিবছরই এ সময়ে এ অঞ্চলে ধান কাটতে আসি। এ সময় শ্রমের দামও বেশি থাকে। এক মাস কাজ করলে আট থেকে নয় হাজার টাকা নিয়ে বাড়িতে ফিরতে পারি।’ হালুয়াঘাটের লোকমান মিয়া, খোকন, লিটন ও কাওসার অভিযোগ করেন, গৃহকর্তারা তাঁদের একটু বিশ্রাম দিতে চান না। পারলে তো ২৪ ঘণ্টাই খাটাতে চান।

তবে মালিকপক্ষের অভিযোগও কম নয়। নিকলী সদর ইউনিয়নের বানিয়াহাটি গ্রামের কৃষক শুক্কুর মাহমুদ বলেন, ‘আজকালকার শ্রমিকেরা ঘড়ি দেখে কাজ করেন। একে তো চাল, ডাল, তেল ও মাছের দাম বেশি। পাশাপাশি একজন কৃষিশ্রমিককে তিন বেলা খাবার দিতে খরচ হয় ১০০ টাকা।’

-দিলীপ কুমার সাহা, নিকলী