ময়মনসিংহ শহরের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজের নতুন ভবনের নির্মাণকাজ বন্ধের প্রতিবাদে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা রাস্তা অবরোধ করেন। এ সময় একটি প্রাইভেট কার বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী ও রিকশারোহীকে আহত করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী গাড়িটি ভাঙচুর করে পুড়িয়ে দেয় এবং গাড়িচালককে মারধর করে।
গতকাল বুধবার কলেজসংলগ্ন সৈয়দ নজরুল ইসলাম চত্বরে এ ঘটনা ঘটে। পরে শিক্ষার্থীরা ওই এলাকায় কারিগরি ও প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের সাইনবোর্ড, দরজা-জানালা ভাঙচুর করে। বিক্ষোভ করে সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে। দুপুর পৌনে দুইটার দিকে জেলা প্রশাসক লোকমান হোসেন মিয়া ও পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম ফারুক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির সমাধানের আশ্বাস দিয়ে কলেজে আলোচনায় বসলে শিক্ষার্থীরা শান্ত হয়। এ ঘটনায় আহত তিন শিক্ষার্থী বিজন, পার্থ ও অভিষেক এবং গাড়িচালক মনিরকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ছাড়া আহত অন্য ছয়জন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছে।
সদর মডেল থানার পুলিশ ও কলেজ সূত্রে জানা যায়, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজের জায়গাস্বল্পতা দূর করতে কলেজের পাশে জেলা পরিষদের এক একর ৮০ শতক জমি পেতে কর্তৃপক্ষ তাদের কাছে আবেদন করে। গত বছর স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম কলেজের এক অনুষ্ঠানে আবেদন করা ওই জমি কলেজের নামে বরাদ্দ দেওয়ার আশ্বাস দেন। পরে মন্ত্রণালয় থেকে কলেজের ভবন নির্মাণে গত অর্থবছরেই দুই কোটি টাকার বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্ত জমি বরাদ্দ-প্রক্রিয়া শেষ না হওয়ায় ভবনের নির্মাণকাজ শুরু করা যায়নি।
শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজের অধ্যক্ষ মারুফী খান বলেন, দ্রুত জমি বরাদ্দ পেতে জেলা প্রশাসনকে কিছুদিন আগে চিঠি দেওয়া হয়। জেলা প্রশাসনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুর রহমান খান ১২ জুন কলেজে এসে শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করে ভবন নির্মাণের জন্যে নকশা ও প্রাক্কলন ব্যয় তৈরি করাসহ মাটি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেন। পরে ১৫ জুন জেলা পরিষদের সহকারী প্রকৌশলী মাটি পরীক্ষার কাজ শুরু করেন। কিন্ত গতকাল সকালে তিনি কাজ বন্ধের নির্দেশ দেন।
অধ্যক্ষ মারুফী বলেন, ‘এ ঘটনার প্রতিবাদে আমরা শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে গতকাল অবস্থান ধর্মঘট শুরু করি। পরে একটি গাড়ি বেশ কয়েকজন ছাত্রসহ রিকশারোহীকে আহত করলে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে।
অধ্যক্ষ জানান, ভাঙচুর করা ওই গাড়িচালকের বন্ধুরা বিকেলে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আহত তিন শিক্ষার্থীকে মারধর করেছে। মারধরের ঘটনাসহ দিনব্যাপী সব ঘটনায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মোহসীন বলেন, ‘নিছক ভুল বোঝাবুঝি থেকে ঘটনার সূত্রপাত। আলোচনা করে বিকেলেই আবার কাজ শুরুর ব্যবস্থা করেছি। আর জমি বরাদ্দের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম সারোয়ার জানান, হাসপাতালে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গাড়িচালকের বন্ধুদের কথাকাটাকাটি হয়েছে, মারধরের ঘটনা ঘটেনি। হাসপাতাল ও কলেজ এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুর রহমান খান বলেন, তারা যে জায়গাটি চাচ্ছে সেখানে কারিগরি ও প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়, সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা কেন্দ্রসহ জেলা পরিষদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ১৩টি আবাসিক ভবন রয়েছে। জেলা পরিষদের কোনো জমি হস্তান্তর বা ইজারা দেওয়ার কোনো বিধান না থাকলেও কলেজটির সুনামের স্বার্থে সরকারের ওপর মহলে জমিটি বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।