রাজধানীর তেজগাঁওয়ের মধ্য বেগুনবাড়ি ঝিলের প্রান্তে গড়ে ওঠা একটি পাঁচতলা বাড়ি গতকাল মঙ্গলবার রাতে হঠাৎ উপড়ে পড়ে। ভবনটির নিচে অন্তত চারটি তিনতলা টিনশেড বাড়ি চাপা পড়েছে। গতকাল মধ্যরাতে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত একজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। এর বাইরে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক আবু নাঈম মো. শহীদুল্লাহ্ বলেছেন, ভবনের নিচে একজন নারী ও এক পুরুষ চাপা পড়ে আছেন।
রাত আড়াইটায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক একজন অজ্ঞাত নারীর (২৫) মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করেছেন। ওই সময় পর্যন্ত ১২ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে এবং আরও লোককে চিকিৎসার জন্য আনা হচ্ছিল বলে জানান তিনি।
স্থানীয় লোকজন দাবি করেছেন, ভবন ও ভবনের নিচে কয়েক শ মানুষ আটকা পড়েছে। রাতেই সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব ও দমকল বাহিনী উদ্ধারকাজ শুরু করে।
দমকল কর্মকর্তারা জানান, সরু রাস্তার কারণে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঘটনাস্থলে যেতে পারেনি। তিন ফুটের ওই রাস্তা দিয়ে রিকশা চলারও সুযোগ নেই।
তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকার ১৮/বি, মধ্য বেগুনবাড়ি পোস্ট অফিসের ঢালে ঝিলের ওপর শুধু পিলার দিয়ে জনৈক আব্বাসউদ্দিন বাড়িটি নির্মাণ করেন। কিছুদিন আগে বাড়ির পঞ্চম তলার কাজ শুরু হয়। ওই বাড়ির চারপাশে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু দুই ও তিনতলা টিনশেড বাড়ি।
প্রত্যক্ষদর্শী ও দমকল সূত্র জানায়, রাত পৌনে ১১টার দিকে বিকট শব্দে বাড়িটি উপড়ে পাশের টিনশেড বাড়ির ওপর পড়ে। চিৎকার ও কান্নার শব্দে আশপাশের লোকজন ছুটে আসে। তারা দেখতে পায়, বাড়ির নিচে চাপা পড়ে আছেন জব্বার, মমতাজ, ছোট মনির ও ওয়াছিরউদ্দিন হাজির টিনশেডসহ আরও কয়েকটি বাড়ি। লোকজন তাৎক্ষণিক গ্যাসের সংযোগ বন্ধ করে দেয়। এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহও বন্ধ করে দেওয়া হয়।
মতিনের টিনশেড বাড়ির দোতলার বাসিন্দা মিনহাজুল ইসলাম জানান, হঠাৎ মট মট শব্দ শুনতে পান। জানালা দিয়ে দেখেন, আব্বাসউদ্দিনের বাড়িটি উপড়ে পড়ছে। ভবন থেকে অনেককেই তিনি দৌড়ে নামতে দেখেছেন। ভবনটি পড়ে যাওয়ার পর তিনি দৌড়ে বেরিয়ে আসেন।
ভবনটির পাশে বাবা-মাকে হারিয়ে কাঁদছিল ১২ বছরের কিশোর শাওন মিয়া। ভবনের নিচে চাপা পড়া মা-বাবাকে উদ্ধারের জন্য সে উদ্ধারকর্মী ও গণমাধ্যমকর্মীদের পা জড়িয়ে ধরে। শাওনের পরিবার মতিনের টিনশেড বাড়ির দোতলায় থাকে। তার বাবা ফুটপাতে খাবার বিক্রি করেন। মা সালমা বেগম ঢাকা টেক্সটাইলে চাকরি করেন। সে কারওয়ান বাজারে একটি হোটেলে কাজ করে। খবর পেয়ে সে ঘটনাস্থলে যায়।
পাশের বাড়ির বাবু জানান, ১০ বছর আগে আব্বাস বাড়িটি নির্মাণ করেন। ভবনের গায়ে আস্তর ছিল না। বাড়িটি এক ইউনিটের। প্রতিটিতে দুটি করে কক্ষ। পাশের চাপা পড়া টিনের তৈরি বাড়িগুলো তিনতলা। প্রতি তলায় ২০টি করে কক্ষ। প্রতিটি কক্ষে আট-দশজন মেস করে থাকেন। কেউ কেউ পরিবার নিয়েও থাকেন। চাপা পড়া তিনটি বাড়িতেই ১৬০টি ঘরে হাজার খানেক লোক থাকেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
চাপা পড়া একটি বাড়ির মালিক মমতাজ বেগম জানান, তিনি পৈতৃক জমিতে তিনতলা টিনশেড এই বাড়ি করে ভাড়া দিয়েছেন। ২৪টি পরিবার থাকে। প্রতি পরিবারে চার থেকে ছয়জন সদস্য।
দমকলের মহাপরিচালক বলেন, উপড়ে পড়া ভবনটি পাইলিং করা ছিল না। ঝিলের ওপর পিলার করে অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। ভবনটির নিচে পাঁচ-ছয়টি বাড়ি চাপা পড়েছে।