দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার প্রকাশনা (ডিক্লারেশন) বাতিল করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে প্রকাশনা বাতিলের সরকারি আদেশের অনুলিপি নিয়ে পুলিশ তেজগাঁওয়ে পত্রিকাটির ছাপাখানায় যায়। ততক্ষণে পত্রিকাটির দুই হাজার ৭০০ কপি ছাপা হয়। পুলিশ ওই পত্রিকাগুলো জব্দ এবং ছাপার কাজ বন্ধ করে দেয়।
জানতে চাইলে ঢাকার জেলা প্রশাসক মহিবুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন্স অ্যাক্ট’-এর ৭ ধারা অনুযায়ী আমার দেশ পত্রিকার প্রকাশনা বাতিল করা হয়েছে।
প্রকাশনা বাতিলের পর রাত ১১টার দিকে আরেক দল পুলিশ পত্রিকাটির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তারের জন্য কারওয়ান বাজারে আমার দেশ কার্যালয়ে অভিযান শুরু করে। এ সময় পত্রিকাটির সংবাদকর্মীরা মূল দরজা অবরোধ করে রাখেন। ফলে পুলিশ ভেতরে ঢুকতে পারেনি। রাত দুইটা পর্যন্ত কয়েক দফা পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো হলেও কর্মীদের অনড় অবস্থানের কারণে পুলিশ ভেতরে ঢুকতে পারেনি। তার আগে কর্মীরা ওই ভবনের ১১ তলায় আমার দেশ কার্যালয়ে ওঠার লিফট বন্ধ করে দেন। কয়েক ঘণ্টা ধরে সংবাদকর্মীরা প্রবেশ পথ আটকে বিক্ষোভ করেন। পুলিশ গিয়ে কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, সরকার আমার দেশ পত্রিকার প্রকাশনা বাতিল করেছে এবং পত্রিকার সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তাঁকে গ্রেপ্তারের সরকারি কাজে সহায়তা করার জন্য পুলিশ সাংবাদিক-কর্মচারীদের প্রতি অনুরোধ জানান।
পুলিশের অনুরোধের জবাবে সংবাদকর্মীরা জানান, তাঁরা পথ ছাড়বেন না, তাঁদের রক্তের ওপর দিয়ে মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যেতে হবে। রাত দুইটায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সংবাদকর্মীদের অবরোধের মুখে পুলিশ ভেতরে ঢুকতে পারেনি। রাত সোয়া দুইটায় পত্রিকাটির কর্মীরা জানান, পুলিশ তাঁদের সরে যাওয়ার জন্য ১০ মিনিট সময় বেঁধে দিয়েছে। কিন্তু তাঁরা সরবেন না।
আমার দেশ পত্রিকায় অভিযানের খবর পেয়ে সংবাদকর্মীরা ছাড়াও রাত ১১টা থেকে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা পত্রিকাটির কার্যালয়ে আসতে থাকেন। এর মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, শিমুল বিশ্বাস, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা হাবিব-উন নবী, ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন, বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান প্রমুখ ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলন: গতকাল বিকেল পাঁচটায় মাহমুদুর রহমান পত্রিকার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আমার দেশ বন্ধ করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে বলে অভিযোগ করেন।
এর আগে সকালে পত্রিকাটির প্রকাশক হাসমত আলীকে একটি গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন ধরে নিয়ে পাঁচ ঘণ্টা আটকে রাখে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মাহমুদুর রহমান সংবাদ সম্মেলন করেন। এর পর রাতে হাসমত আলী বাদী হয়ে মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় একটি মামলা করেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, দণ্ডবিধি ৪১৯, ৪২০ ও ৫০০ ধারায় দায়ের করা মামলায় হাসমত আলী অভিযোগ করেন, তিনি ২০০৮ সালে আমার দেশের সব শেয়ার মাহমুদুর রহমানের কাছে বিক্রি করে দেন। যা জয়েন্ট স্টক কোম্পানির মাধ্যমে হস্তান্তরও করা হয়। এরপর ২০০৯ সালের ১১ অক্টোবর প্রকাশকের পদ থেকে তিনি নির্ধারিত ফরমে আবেদন করে পদত্যাগ করেন। কিন্তু তার পরও মাহমুদুর রহমান পত্রিকায় প্রকাশক হিসেবে হাসমত আলীর নাম ছাপিয়ে আসছেন। এর মধ্যে পত্রিকাটির বিরুদ্ধে ৩১টি মামলা হয়েছে, সবগুলোতে তাঁকেও আসামি করায় তিনি সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হচ্ছেন।
এদিকে গতকাল বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে মাহমুদুর রহমান বলেন, আমার দেশ বন্ধের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে একটি গোয়েন্দা সংস্থা গতকাল সকালে প্রকাশক হাসমত আলীকে তাঁর শাহজাহানপুরের বাসা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে পাঁচ ঘণ্টা আটকে রাখে। তাঁর কাছ থেকে দুটি কাগজে সই নেওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘এর মাধ্যমে পত্রিকাটি বন্ধ করে দেওয়া হবে এবং আমাকে গ্রেপ্তার করা হবে। কিন্তু আমার ভয়-ডর বলে কিছু নেই। আমরা যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করব। আমার বিরুদ্ধে ৩১টি মামলা। এখন গ্রেপ্তারের অপেক্ষা করছি।’
জানতে চাইলে গোয়েন্দা সংস্থার একজন পদস্থ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, হাসমত আলীকে তাঁরা ডেকে আনেননি। তিনি নিজেই অভিযোগ দিতে এসেছিলেন। অভিযোগ দেওয়ার পর আবার বাসায় ফিরে গেছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চেয়ে হাসমত আলীর সঙ্গে কয়েকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোনো কথা বলতে চাননি।
মাহমুদুর রহমান বলেন, হাসমত আলীকে ভয় দেখানো হয়েছে। এখন তিনি কারও সঙ্গে কথা বলার সাহস পাচ্ছেন না।
মাহমুদুর রহমান বলেন, ২০০৮ সালে তিনি আমার দেশ পত্রিকার ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নেন। এরপর পত্রিকাটির সম্পাদকের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য তিনি জেলা প্রশাসককে চিঠি দেন। ওই সময় থেকেই ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে রয়েছেন তিনি। হাসমত আলীর নাম প্রকাশক থেকে বাদ দেওয়ার অনুমতি মিলেছে কিন্তু এর পরিবর্তে মাহমুদুর রহমানের নাম ব্যবহারের অনুমতি মেলেনি। ওপরের নির্দেশ আছে বলে জেলা প্রশাসকের দপ্তর থেকে বারবার ঘোরানো হচ্ছে।