কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার সুলতানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকসংকটের কারণে ছাত্ররাই ‘শিক্ষকতা’ করছে। পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র নেয় চতুর্থ শ্রেণীর ক্লাস, চর্তুথ শ্রেণীর ছাত্র তৃতীয় শ্রেণীর আর তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী দ্বিতীয় শ্রেণীর ক্লাস নেয় বলে জানা গেছে। সিংপুর ইউনিয়নে অবস্থিত বিদ্যালয়টিতে ৩৪৫ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে মাত্র একজন শিক্ষক রয়েছেন। এতে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদানসহ সার্বিক কর্মকাণ্ড বিঘ্নিত হচ্ছে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ২৮ ডিসেম্বর থেকে ১ জানুয়ারির মধ্যে বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক ইয়াসমিন সুলতানা ও জাহাঙ্গীর আলম তাড়াইল উপজেলা এবং আলামিন করিমগঞ্জ উপজেলায় বদলি হয়ে চলে যান। প্রধান শিক্ষকের পদটি এক বছর ধরে শূন্য। বর্তমানে শিক্ষক মৌসুমী আক্তার একাই পাঠদান চালিয়ে আসছেন। এদিকে তিন শিক্ষক বদলি হওয়ার এক সপ্তাহের মাথায় বিদ্যালয়টিতে দুজন শিক্ষককে প্রেষণে দেওয়া হয়। কিন্তু তাঁরা বিদ্যালয়ে আসছেন না বলে জানা গেছে।

গত শনিবার সরেজমিনে কথা হয় শিক্ষক মৌসুমী আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, বিদ্যালয়ের দাপ্তরিক কাজসহ পাঠদান সবই শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় করতে হচ্ছে। একা বিদ্যালয়ের সব কটি ক্লাস নেওয়া সম্ভব নয়। তাই বাধ্য হয়ে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র আফজালকে দিয়ে চর্তুথ শ্রেণীর ক্লাস, চর্তুথ শ্রেণীর শিক্ষার্থী জাকির হোসেনকে দিয়ে তৃতীয় শ্রেণীর ক্লাস নেওয়া হয়।
বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী বর্ষা আক্তার ও নৌশিন আক্তার বলে, ‘শিক্ষক না থাকায় আমাদের পড়ালেখার খুব ক্ষতি হচ্ছে।’

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমি প্রতি সপ্তাহে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে বলছি, শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার জন্য। গত বুধবার বলেছি, যদি শিক্ষক নিয়োগ না দেন তবে আপনি গিয়ে বিদ্যালয়ে তালা দিয়ে আসেন।’ সিংপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম জানান, একজন শিক্ষককে তো বিদ্যালয়ের কাগজপত্র ঠিক করতেই ব্যস্ত থাকতে হয়। তিনি এতগুলো শিক্ষার্থীকে পড়াবেন কীভাবে!

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) দ্বীন মোহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘জানুয়ারির শুরুর দিকে ওই বিদ্যালয়ে দুই শিক্ষককে প্রেষণে দেওয়া হয়েছে। তাঁরা যদি বিদ্যালয়ে না যান, তবে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম মাওলা বলেন, ‘শিগগির ওই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকসহ অন্তত তিনজন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করব।’