জেলার ইটনা উপজেলার আলগাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মনু মিয়ার গোর খনন নেশা হলেও পেশাজীবিদের মতোই এ পর্যন্ত ২ সহস্রাধিক গোর খনন করেছেন। মানুষের অন্তিম যাত্রায় অবিচল আস্থা আর অকৃত্রিম ভালবাসায় তিনি অনেকটা সহযাত্রীর মতোই পার করে এসেছেন দীর্ঘ ৩৫টি বছর। ষাটের কাছাকাছি মনু মিয়া গোর খননের কাজে ক্লান্তিহীন ভাবে আজো নিরলসভাবে ব্রতী রয়েছেন। নিজ গ্রাম, পার্শবর্তী গ্রামসহ কাছে-দূরে যেখান থেকেই কারো মৃত্যুসংবাদ পান না কেন তার কবর খননের জন্য তিনি সমান আন্তরিকতার সঙ্গে সেখানে ছুটে যান। দীর্ঘদিন ধরে তিনি এ কাজে ব্যাপ্ত থাকলেও তিনি কবর/গোর খননের জন্য কারো নিকট থেকে কোন আর্থিক সহায়তা গ্রহণ করেননা। একজন ভালো গোর খোদক হিসাবে পুরো ইটনা, মিঠামইনে মনু মিয়ার সুখ্যাতি রয়েছে।

পারিবারিক জীবনে নিঃসন্তান এ সরলপ্রাণ মানুষটি এ কাজটিকেই জীবনের ব্রত হিসাবে গ্রহণ করেছেন। বিনিময়ে পেয়ে চলেছেন মানুষের ভালবাসা, শ্রদ্ধা ও সম্মান। গোর খননের জন্য নিজের খরচায় তিনি আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে তৈরি করেছেন খুন্তী, কোদাল, ছুরি, করাত, দা, ছেনাসহ সব সহায়ক যন্ত্রপাতি। ফলে গোর খননের জন্য শুধু মনু মিয়াকে পেলেই হয়। কোন জিনিসপত্রের জন্য কারো কোথাও ছুটতে হয়না। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ কাজে তার পারদর্শিতা এবং আন্তরিকতা ক্রমশ বেড়েই চলেছে।

মনু মিয়ার সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, তিনি ঢাকার বনানী কবরস্থানসহ দেশের নানা প্রান্তে গোর খনন করে এ পর্যন্ত ২ হাজার ১শ টি গোর খনন করেছেন। কোথাও বেড়াতে গিয়ে যদি কারো মৃত্যুর সংবাদ পেয়েছেন তো তিনি সেখানে ছুটে গিয়ে গোর খননে সামিল হয়েছেন। এমনো হয়েছে, ভীষণ জ্বরাক্রান্ত অবস্থায় তিনি বিছানা ছেড়ে ওঠতে পারছেননা। কিন্তু কারো মৃত্যু সংবাদ তার কানে এসেছে, সে অবস্থায় তিনি কবরস্থানে ছুটে গিয়ে তার গোর খনন করেছেন। আগে তার স্ত্রী রহিমা বেগম মাঝে মাঝে এ বিষয়ে কথাবার্তা বললেও মনু মিয়ার এ কাজের প্রতি নিষ্ঠা ও একাগ্রতার কারণে তিনিও এখন আর কিছু বলেননা বরং স্বামীকে যতোটা সম্ভব মানসিক সমর্থন দিয়ে চলেছেন।

 উদাসীন ও সাদা মনের এ মানুষটি আমৃত্যু তার এ কাজ চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা রাখেন। তার মতে, মানুষের জন্য এমনিতে কিছু করতে না পারলেও তার শেষ ঠিকানাটা তো সাজিয়ে দিতে পারছেন। আর এটাই তার সুখ।

 লিখেছেনঃ আশরাফুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ