জেলার বাজিতপুর থানাধীন সরারচর ইউনিয়নে উঠতি বয়সি তরুনদের মধ্যে কাশির সিরাপ দিয়ে নেশা করা ব্যাপক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। স্থানীয় কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, অরিজিনাল ফেনসিডিলের দূস্প্রাপ্যতা ও চড়া দামের কারনে উঠতি বয়সী কিশোর-যুবক শ্রেণী নেশার জন্য দেশীয় কাশির ঔষধের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে ।

সম্প্রতি একটি জরিপে দেখা যায় সরারচরে প্রায় ৩৫ টি ঔষুধের দোকান রয়েছে এর মধ্যে তুলনা মূলক ভাবে বিক্রি কম হয় এমন ১০ টি ফার্মেসীর জরিপ অনুযায়ী তারা প্রতিদিন ১০ – ২০ টা পর্যন্ত কাশির সিরাপ বিক্রয় করে । সে অনুযায়ী প্রতিদিন ১ টি ফার্মেসীতে গড়ে ১০ টি  করে সিরাপ বিক্রি হলে যা দাঁড়ায় ৩৫০ টি প্রতিদিন সে অনুযায়ী   মাসিক ৩৫টা দোকানে বিক্রী হয় গড়ে ১০,৫০০ বোতল সিরাপ। যার বাজার মূল্য ৫,২৫,০০০ হাজার টাকার বেশী।

বিশেষ করে ১৬ থেকে ২৮ বছর বয়সের মধ্যে এই সিরাপ খাওয়ার প্রবনতা লক্ষ্য করা যায় এর মধ্যে ১৬ -২০ বছর বয়সীদের মধ্যে প্রবনতা ভয়ংকর রকম বেড়ে যাচ্ছে । স্থানীয় একজন ফার্মেসীর মালিক জানায় – ক্রেতাগন সবাই এই এলাকারই, কাউকে সিরাপ না দিলে বা প্রেসক্রিপশন চাইলে তারা যাতা ব্যবহার করে তেড়ে আসে।  তিনি আরো জানায় প্রচলিত কাশির সিরাপ গুলোর মধ্যে – কফলীড, এড্রীল, অফকফ, তুসকা, ডেসপ্রোডিন, ব্রডিল, ফেনারগেন, একফ, ডাইড্রিল এর মধ্যে ডেসপ্রোডিন, তুসকা, অফকফের বিক্রী সবচেয়ে বেশী তবে অন্য সিরাপ গুলো থেকে দাম বেশী হলেও   ৫০ -৬০ টাকার মধ্যই কেনা যায়।

সরারচরে নেশা গ্রস্থ কিশোর-যুবকের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি ব্যাপক পাচ্ছে। সরারচরের প্রায় ৯ টি স্পটে উন্মুক্তভাবে গাঁজা বিক্রি হয় এর মধ্যে সরারচর বাজারেই রয়েছে ৪ টি স্পট। ইদানিং কালে দরিদ্র কিশোরদের মধ্যে জনপিয় হয়েছে পেষ্টিং নেশা যাকে স্থানীয়রা বলে ড্যান্ডি । এমন টায় জানালেন সরারচরের একজন হার্ডওয়ার ব্যবসায়ী তিনি বলেন – গত সপ্তাহে আমি ২ ডজন ছোট পেষ্টিং দোকানে তুলি আজ এখন মাত্র দুইটি আছে । আগে পেষ্টিং কিনতো স্থানীয় মুচি ও সাইকেল মেকারগন তাদের পেশাগত কারনে ইদানিং উঠতি বয়সী ছেলেরা এটা কিনে দলবেধে নেশা করে।

সরারচরের যে সকল মাদকসেবী পূর্ব থেকেই ফেনসিডিল, হিরোইনে আসক্ত ছিলো তাদের বৃহত একটা অংশ প্রতিদিনই ভৈরবে্র নিকটবর্তী চান্দুরা চলে যায় মোটরবাইক নিয়ে ভেজালহীন মাদক ও ইয়াবা কিনতে।

ইদানিং কালে সরারচর ইঊনিয়নে কেন মাদকসেবী বেড়ে যাচ্ছে তা অনুসন্ধানে দেখা যায়ঃ- সরারচর এলাকায় খেলা ধূলা বা বিনোদনের পথগুলো দিন দিন প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। সরারচর শিবনাথ স্কুলের দুটি মাঠেই বৈকালিক খেলাধুলা করার মত পর্যাপ্ত সংখ্যক কিশোর যুবক থাকে না । তাছাড়া সরারচর গার্লস স্কুল ও মাদ্রাসার মাঠ সহ আসে পাশের কয়েক টি মাঠের পরিস্থিতি ও একই রকম। তাছাড়া স্থানীয় বেশ কিছু অরাজনৈতিক সেচ্ছাসেবী সাংস্কৃতিক সংগঠন ও নিজেদের কার্যক্রম গুটিয়ে নিয়েছে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারনে ।

সরারচরের মাদকের প্রতি যেভাবে যুব সমাজের দিন দিন ঝোক বাড়ছে তা  এখনি বন্ধ না করতে পারলে অনেক মেধাবী তাদের উজ্জল ভবিষ্যত ছেড়ে যেমন অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে তেমনি অনেক পরিবারে নেমে আসবে আশান্তির ছায়া। প্রশাসন দিয়ে এর প্রভাব রোধ করার পাশাপাশি আমাদের উচিত এ ব্যাপারে অভিবাবকদের সচেতন করা ও  কিশোর যুবক দের সুস্থ বিনোদনের ব্যবস্থা  করা ও সরারচরের খেলার মাঠ ও ক্রীড়া ক্লাব গুলোতে প্রান চাঞ্চল্য ফিরিয়ে আনা এজন্য স্থানীয় জন প্রতিনিধিদেরই প্রধান ভূমিকা পালন করতে হবে ।