বসতঘর পানিবন্দী। ২০ দিনেও পানি কমেনি। আশ্রয়কেন্দ্রে গরু-ছাগল নিয়ে ঠাঁই মিলবে না, তাই রাস্তার পাশে বসে আছেন তিনি। মুখে কোনো কথা নেই। সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার গহরমালি গ্রামের ৯০ বছর বয়সের এই জয়তুন বিবি অনেক বন্যা দেখেছেন, কিন্তু এমন প্রলম্বিত বন্যা আর দেখেননি। শুধু জয়তুন নন, সবার মধ্যে একই প্রশ্ন—বন্যা এত দীর্ঘ কেন?
সিলেটের চার উপজেলা বালাগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, বিশ্বনাথ ও ফেঞ্চুগঞ্জ বেশি বন্যাকবলিত। এ উপজেলাগুলো কুশিয়ারা নদী-অববাহিকা এলাকায়। সবার আগে বন্যাকবলিত হয় বালাগঞ্জ উপজেলা। পাহাড়ি ঢলে কুশিয়ারা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় এ বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। এর সঙ্গে ব্যাপক বৃষ্টিপাত দুর্ভোগ আরও বাড়িয়েছে। তবে গত মঙ্গলবার থেকে বৃষ্টি তুলনামূলক কম হওয়ায় বন্যা-পরিস্থিতি উন্নতির দিকে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বালাগঞ্জ উপজেলার দুই গ্রামে গিয়ে দেখা যায় দুর্ভোগের চিত্র। সদর ইউনিয়নের গহরমলি গ্রামের গৃহবধূ পারভিন বেগম বন্যার পানিতে পচে যাওয়া ধান শুকাতে শুকাতে বলেন, ‘অগুইন হুকাইয়া ভাতর জোগাড় করতাম।’ গহরমলি গ্রামের ৬০টি পরিবারের মধ্যে দু-চারটি ছাড়া সব কটি পরিবারের ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। এদের মধ্যে ২০টি পরিবারের ঠাঁই হয়েছে সিলেট-সুলতানপুর-বালাগঞ্জ রাস্তার ধারের একটুখানি শুকনো জায়গায়।
একই অবস্থা পার্শ্ববর্তী গোরাপুর গ্রামেরও। গ্রামের ৩০টি পরিবারের মধ্যে অন্তত ১০টি পরিবার এখন ওই সড়কে দিনাতিপাত করছে। অনেকে আবার পরিবার-পরিজন নিয়ে ভাসমান নৌকাতে সংসার পেতেছেন। গোরাপুর গ্রামের মায়ারুর বিবি বলেন, ‘ছয় বাইচ্চা লইয়া নৌকাত থাকি, নৌকাত খাই, নৌকাত গুমাই।’ একই গ্রামের পিয়ারা বেগম বলেন, ‘গর বলতে অখন আর আমার কোনতা নাই। তছনছ অই গেছে হকলতা। খানি জোগাড়র চিন্তায় পাগল অই যাইরাম।’ সিলেট-বালাগঞ্জ সড়কে সপরিবারে আশ্রয় নেওয়া আখলিছ মিয়া (৫০) বলেন, ‘তুফানের মতোন পানি আইছে। চাইর হপ্তাহ অই গেল। পানি নামার নাম নাই!’
সিলেট জেলা প্রশাসনের বন্যানিয়ন্ত্রণ কক্ষের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেন জানান, মঙ্গল ও বুধবার বৃষ্টিপাত কিছুটা কম হয়েছে। এ কারণে বন্যা-পরিস্থিতি উন্নতির দিকে।
বন্যাকবলিত এলাকায় পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ায় সিভিল সার্জনের তত্ত্বাবধানে একটি পর্যবেক্ষক দল গঠন করা হয়েছে। সিভিল সার্জন ফয়েজ আহমদ জানান, চার উপজেলায় বন্যাদুর্গত এলাকাকে ১১টি ভাগ করে ১৩৭টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। তিনি জানান, বন্যাদুর্গত এলাকার বাসিন্দাদের ৪৪ হাজার প্যাকেট খাবার স্যালাইন ও প্রায় এক লাখ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে। আরও প্রায় এক লাখ ট্যাবলেট মজুদ আছে। এগুলো পর্যায়ক্রমে বিতরণ করা হবে।
ত্রাণ বিতরণ: হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার দীঘলবাক ইউনিয়নের প্রায় ৭০টি গ্রামের বন্যাকবলিত দুই হাজার পরিবারের মধ্যে শেভরনের পক্ষ থেকে সম্প্রতি ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাংসদ দেওয়ান ফরিদ গাজী, নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোনামনি চাকমা, বিবিআনা গ্যাস প্লান্ট সুপারিনটেনডেন্ট জন রুশম প্রমুখ।