স্টিফেন হকিং খুব সাহসী একটা কাজ করে ফেলেছেন – যেটা তার স্বভাবের সাথে একদমই যায় না। তিনি সরাসরি বলেছেন – মহাবিশ্ব  ‘সৃষ্টি’র পেছনে ঈশ্বরের কোন ভূমিকা নেই। মহাবিশ্ব পদার্থবিজ্ঞানের নিয়ম নীতি অনুসরণ করে স্বতস্ফুর্তভাবে তৈরি হয়েছে। মহাবিশ্বের উৎপত্তি এবং অস্তিত্বের ব্যাখ্যায় ঈশ্বরের আমদানি একেবারেই অযথা।  

সাহসী কাজটা করলেন বটে – কিন্তু ব্যাপারটি তার স্বভাববিরুদ্ধ, প্রথমেই সেটা বলে নিয়েছি। স্বভাবের সাথে যায় না বলেছি কারণ, হকিং  তার পাঠকদের বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচলে  ঠেলে দিয়ে ঈশ্বরকে নিয়ে মায়াবী কাব্য করতে পছন্দ করতেন।  ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত তার বিপুল জনপ্রিয় বই – ‘ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম’ বৈজ্ঞানিক যুক্তিতে ভরপুর, এমনকি শূন্য থেকে কী ভাবে মহাবিশ্ব উদ্ভুত হতে পারে তারও সম্ভাব্য ধারনা আছে ওতে – কিন্তু বইয়ের শেষ লাইনটিতে এসেই প্যান্ডোরার বাক্সের মতোই রহস্যের  ঝাঁপি মেলে দিয়েছিলেন হকিং ; বলেছিলেন – যেদিন আমরা সার্বজনীন তত্ত্ব  (Theory of every thing) জানতে পারব, সেদিনই আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে ‘ঈশ্বরের মন’ (mind of god) কে পরিপূর্ণভাবে বোঝা।  

তারপর থেকে হকিং এর বলা এই ‘মাইণ্ড অব গড’ নিয়ে হাজারো ব্যাখ্যা আর প্রতিব্যাখ্যা করা হয়েছে। কেউ বলেছেন ‘মাইণ্ড অব গড’ ব্যাপারটা হকিং তার বইয়ে কেবল কাব্যময় রূপক হিসেবে ব্যবহার করেছেন, সত্যিকার ঈশ্বরকে বোঝাননি, আবার আরেকদল বললেন, ‘মাইণ্ড অব গড’-এর মাধ্যমে হকিং ঈশ্বরের ব্যাপারটাতে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছেন।  এতে নাকি প্রমাণিত হয়েছে যে বিজ্ঞানের দরবারে ঈশ্বর বলে সত্যই কিছু একটা আছে। তর্ক-বিতর্কে রঙ্গমঞ্চ জমজমাট ছিলো পুরোটা সময়েই কিন্তু কোন সমাধান পাওয়যা যায়নি।  জ্যোতির্পদার্থবিদ পল ডেভিস তো একখানা ঢাউস বইই লিখে ফেলেছেন ‘মাইণ্ড অব গড’ শিরোনামে ১৯৯২ সালে[2]। তবে হকিং কথিত ‘মাইণ্ড অব গড’ এর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য কি ছিলো, উহা দ্বারা কি কি ব্যাখ্যা করা হইয়াছে – তাহা শুধু হকিং এর মস্তিস্কই বলিতে পারে। তবে দুর্মুখেরা বলেন, ‘মাইণ্ড অব গড’ নিয়ে অনর্থক ধোঁয়াশা  সৃষ্টি করেছিলেন তার প্রথম বইয়ের পাবলিসিটি তথা প্রচারের স্বার্থে। ঐ মাইণ্ড অব গড নামক একটি বাক্যবন্ধের জন্যই নাকি  বইয়ের কাটতি বেড়ে গিয়েছিলো বিশগুণ!  

অবাক ব্যাপার হচ্ছে এবারে কিন্তু এই ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ অবস্থান থেকে পুরোপুরি সরে এসেছেন হকিং।  তার নতুন বই ‘গ্রাণ্ড ডিজাইন’ (বিজ্ঞানী লিওনার্ড ম্লোডিনোর সাথে যুগপৎ ভাবে লেখা, এবং এই সপ্তাহেই প্রকাশিতব্য) -এ খুব চাঁচাছোলা ভাবেই বলেন –

‘অভিকর্ষ শক্তির সূত্রের মতো পদার্থবিজ্ঞানের বিভিন্ন সূত্র কার্যকর রয়েছে, তাই একদম শূন্যতা থেকেও মহাবিশ্বের সৃষ্টি সম্ভব এবং সেটি অবশ্যম্ভাবী। ‘স্বতঃস্ফূর্তভাবে সৃষ্টি’ হওয়ার কারণ থেকেই মহাশূন্যে অনেক কিছুর অস্তিত্ব দেখতে পাচ্ছি আমরা। মহাবিশ্বে আমাদের অস্তিত্ব থাকার কারণ হচ্ছে ‘স্বতঃস্ফূর্তভাবে কোনো কিছু সৃষ্টি’ হওয়ার এই নিয়ম। এ কারণেই মহাবিশ্ব টিকে আছে। মহাবিশ্ব সৃষ্টির জন্য  কোন প্রয়োজন নেই ঈশ্বরের।’

আসলে হকিং এর বক্তব্যটা তিনি আলাদা করে  কোথাও দেননি। লণ্ডনের টাইমস পত্রিকা তার এ সপ্তাহে প্রকাশিতব্য নতুন বইটি ফীচার করতে গিয়ে বইয়ের কিছু অংশ প্রকাশ করে সেপ্টেম্বর মাসের দুই তারিখে। সেখানেই ঈশ্বর সম্বন্ধে হকিং এর পরিবর্তিত ধারণা পাঠকদের সামনে উঠে আসে।  টাইমসে প্রকাশিত সেই অংশবিশেষ থেকে দেখা যায়, হকিং বলছেন যে,  বিগ ব্যাং কোন স্বর্গীয় হাতের ফসল কিংবা ফ্লুক ছিলো না। পদার্থবিজ্ঞানের সূত্র মেনেই প্রাকৃতিকভাবে বিগ ব্যাং এর মাধ্যমে অনিবার্যভাবেই শূন্য থেকে মহাবিশ্ব উদ্ভুত হয়েছে।

শূণ্য থেকে মহাবিশ্বের উদ্ভবের ধারণাটি কিন্তু নতুন কিছু নয়। আমি আমার প্রথম বই ‘আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী’ (২০০৫) বইটিতে তথাকথিত শূন্য থেকে কিভাবে জড় কণিকা সৃষ্টি হয় তা নিয়ে বিশদভাবে বাঙ্গালী পাঠকদের জন্য আলোচনা করেছিলাম। আসলে খুব কম কথায় বললে, কোয়ান্টাম তত্ত্বানুযায়ী শূন্যতাকে আনেক তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হয়। শূন্যতা মানে আক্ষরিক অর্থে শূন্য নয়- পদার্থ বিজ্ঞানীদের মতে যে শূন্যদেশকে আপাতঃ দৃষ্টিতে শান্ত, সমাহিত মনে হচ্ছে, তার সূক্ষস্তরে সবসময়ই নানান প্রক্রিয়া ঘটে চলেছে। এর মধ্যে নিহিত শক্তি থেকে পদার্থকণা স্বতঃস্ফুর্তভাবে তৈরী হচ্ছে, আবার তারা নিজেকে সেই শক্তিতে বিলীন করে দিচ্ছে।

যেমন, শূন্যাবস্থা থেকে সামান্য সময়ের ঝলকানির মধ্যে ইলেকটন এবং পজিটন (পদার্থ-প্রতি পদার্থ যুগল) থেকে পদার্থ তৈরী হয়েই আবার তা শূন্যতায় মিলিয়ে যেতে পারে। এই ইলেকট্রন এবং পজিট্রনের মধ্যকার ব্যবধান থাকে ১০-১০ সেন্টিমিটারেরও কম, এবং পুরো ব্যাপারটার স্থায়িত্বকাল মাত্র ১০-২১ সেকেণ্ড । ব্যাপারটাকে বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলে ‘ভ্যাকুয়াম ফ্লাকচুয়েশন’। ভ্যাকুয়াম ফ্লাকচুয়েশন কোন রূপকথার জীব নয়, নয় কেবল গানিতিক বিমূর্ত মতবাদ; বিজ্ঞানীরা কিন্তু ব্যবহারিকভাবেই এর প্রমাণ পেয়েছেন। একটি প্রমাণ হচ্ছে ‘ল্যাম্ব শিফট’, যা আহিত পরমাণুর মধ্যস্থিত দুটো স্তরে শক্তির তারতম্য প্রকাশ করে। তবে কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের সবচেয়ে জোরদার প্রমাণ পাওয়া গেছে বিখ্যাত ‘কাসিমিরের প্রভাব’ থেকে (আমি ব্লগের এই হাল্কা লেখায় এ নিয়ে বিষদ কারিগরী ডিটেলে যাচ্ছি না, যারা পদার্থবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোন থেকে আরো গভীরে পড়তে চান, তারা পড়ে নিতে পারেন আমার আগেকার এই লেখাটি)।    

উপরের এই ধারণাটিকেই সম্প্রসারিত করেছেন সম্প্রতিকালে বহু বিজ্ঞানী। তারা মনে করেন এক কারণ বিহীন কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের (Quantum Flactuation) মধ্য দিয়ে এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি হতে পারে, যা পরবর্তীতে সৃষ্ট মহাবিশ্বকে স্ফীতির (Inflation) দিকে ঠেলে দিয়েছে, এবং আরো পরে পদার্থ আর কাঠামো তৈরির পথ সুগম করেছে। এগুলো কোন বানানো গল্প নয়। মহাবিশ্ব যে শূন্য থেকে উৎপন্ন হতে পারে প্রথম এ ধারণাটি ব্যক্ত করেছিলেন এডওয়ার্ড ট্রিয়ন ১৯৭৩ সালে ‘নেচার’ নামক বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক জার্নালে ।

এর পর আশির দশকে স্ফীতি তত্ত্বের আবির্ভাবের পর থেকেই বহু বিজ্ঞানী প্রাথমিক কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশরে ধারণাকে স্ফীতি তত্ত্বের সাথে জুড়ে দিয়ে মডেল বা প্রতিরূপ নির্মাণ করেছেন।  শূন্য থেকে এই মহাবিশ্ব সৃষ্টির ধারণা যদি অবৈজ্ঞানিক এবং ভ্রান্তই হত, তবে সেগুলো প্রখ্যাত বৈজ্ঞানিক সাময়িকী (Scientific Journal) গুলোতে কখনই প্রকাশিত হত না। মূলতঃ স্ফীতি-তত্ত্বকে সাম্প্রতিককালে বেশ কিছু পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়েছে, এবং প্রায় সবগুলোতেই এই তত্ত্ব অত্যন্ত সাফল্যের সাথে এ পর্যন্ত উত্তীর্ণ হয়েছে।  

স্ফীতি তত্ত্ব গ্যালাক্সির ক্লাস্টারিং, এক্স রশ্মি এবং অবলোহিত তেজস্ক্রিয়তার বিন্যাস, মহাবিশ্বের প্রসারণের হার এবং এর বয়স,  মহাবিশ্ব গঠনে এর উপাদান গুলোর প্রাচুর্য – সব কিছুই ব্যাখ্যা করতে পেরেছে নিখুঁত সৌন্দর্যে।  আমি এর কারিগরী দিকগুলো এখানে আলোচনা করছি না, এগুলো নিয়ে বিস্তৃতভাবে গিয়ে মুক্তমনায় আগে একটা লেখা লিখেছিলাম ‘স্ফীতি তত্ত্ব এবং মহাবিশ্বের উদ্ভব’  শিরোনামে। সম্প্রতি রায়হান আবীরও প্রাকৃতিক উপায়ে মহাবিশ্বের উৎপত্তির  বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করে ততোধিক সুন্দর একটা প্রবন্ধ লিখেছে – ‘নির্ধর্মকথাঃ ইন দ্য বিগিনিং …‘ শিরোনামে। প্রবন্ধটিতে মহাবিশ্বের সূচনার জন্য একটি ঐশ্বরিক আদি কারণ, স্বতস্ফুর্তভাবে মহাবিশ্ব সৃষ্টির পেছনে মিরাকলের খণ্ডন ছাড়াও পদার্থের উৎপত্তি, শৃঙ্খলার সূচনা এবং মহাবিশ্বের সূচনার প্রাকৃতিক ব্যাখ্যা আছে।

যেহেতু হকিং এর ‘গ্র্যাণ্ড ডিজাইন’ নামের নতুন বইটি এখনো আমার হাতে আসেনি,কাজেই আমি বলতে পারছি না তার স্বতঃস্ফুর্তভাবে মহাবিশ্ব উৎপত্তির ব্যাপারটা  পুরোটাই কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের ধারণার উপর ভিত্তি করেই  বলা, নাকি আরো কিছু নতুন গাণিতিক মডেলের সংযুক্তি আছে। তবে খোঁজখবর নিয়ে যতদূর মনে হয়েছে, তিনি ‘এম থিওরী’র সাথে ফ্লাকচুয়েশনের একটি যোগসূত্র স্থাপন করেছেন (বইটি এই সপ্তাহ শেষে হাতে পেলে পুরো বইটি পড়ে আরো একবার মন্তব্য করব এ নিয়ে) ।

অনেক বিজ্ঞানী এবং দার্শনিকেরাই মনে করেন, আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান যখন একেবারে শূন্য থেকে বিশ্বসৃষ্টির একটি প্রাকৃতিক এবং যৌক্তিক সমাধান দিতে পারছে, তখন ঈশ্বর সম্ভবত একটি ‘বাড়তি হাইপোথিসিস’ ছাড়া আর কিছু নয়। বিজ্ঞানী ভিক্টর স্টেঙ্গর, লরেন্স ক্রাউস, এলেন গুথ, আদ্রে লিন্ডেরা সেটা অনেক আগে থেকেই বলে আসছিলেন (মুক্তমনাতেও এ নিয়ে বহু লেখা প্রকাশিত হয়েছিল )। হকিংও শেষপর্যন্ত সেই একই সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন।   ঈশ্বর হাইপোথিসিস মোটা দাগে অক্কামের ক্ষুরের পরিস্কার লংঘন। তিনি নিজেই সেটা বলেছেন এভাবে,

‘It is not necessary to invoke God to light the blue touch paper and set the universe going.

স্টিফেন হকিং এর এই ‘স্বভাববিরুদ্ধ’ বক্তব্য নিয়ে সারা মিডিয়া এখন তোলপাড়। ধার্মিকরা স্বভাবতই আশাহত হয়ে গালির তুবড়ি ছুটিয়ে চলেছেন খবরটি প্রকাশের পর থেকেই। পাদ্রী সন্ন্যাসী ঠাকুর পুরুতেরা একজোট হয়ে স্টেটমেন্ট দিচ্ছেন তাদের মহাপতন ঠেকাতে। তারা বলছেন, মহাবিশ্ব কিভাবে শূন্য থেকে তৈরি হতে পারে বিজ্ঞান না হয় এখন তা ব্যাখ্যা করতে পার, কিন্তু কেন মহাবিশ্বের সৃষ্টি – তা নাকি বিজ্ঞান বলতে পারে না। আর অবধারিতভাবেই তাদের কাছে একটাই উত্তর – ‘ঈশ্বর’!

তবে যে যাই বলুক, ব্যাপারটা কিন্তু দেখতে খুবই আমোদজনক। এপলোজিস্টদের জন্য খারাপ খবরের সংখ্যা প্রতিদিনই বেড়ে চলছে। প্রতিদিনই একটা করে নতুন বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি ঘটে, আর ধার্মিকদের ‘গড’ এর আকার আরো সংকুচিত হয়ে পড়ে। উইলিয়াম প্যালে ১৮০২ সালে প্রকাশিত বই ‘Natural Theology, or Evidence of Existence and Attributes of the Deity, collected from the Appearences of Nature’ এর মাধ্যমে যে ‘ডিজাইন আর্গুমেন্ট’ বা সৃষ্টির পরিকল্পিত যুক্তির অবতারণা

করেছিলেন ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্ব এসে সেই ডিজাইন আর্গুমেন্টকে বাতিল করে দিয়েছিলো সত্তুর বছরের মধ্যেই। তারপর যত দিন গেছে বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির ইতিহাস মানে জ্ঞানের ফাঁক-ফোঁকর থেকে ঈশ্বরকে হটানোরই ইতিহাস – ‘গড ইন গ্যাপ্স’ এবং ‘আর্গুমেণ্ট ফ্রম ইগনোরেন্স’ থেকে মুক্তির প্রচেষ্টাই বলা যায়। এ বছর ক্রেগ ভেন্টর তার গবেষণায় দেখিয়েছেন কৃত্রিমভাবে প্রাণের সৃষ্টি করাও আজ আর বিজ্ঞানীদের আয়ত্বের বাইরে নয়

ডারউইন থেকে শুরু করে আজকের ডকিন্সের ক্রমিক প্রচেষ্টায় জীববিজ্ঞানের কাঠামো থেকে ঈশ্বর হটে গেলেও ঈশ্বর সাহেব একটা অন্ধকার গুহা খুঁজে পেয়েছিলেন পদার্থবিজ্ঞানের তথাকথিত ফাইনটিউনিং, এন্থ্রোপিক আর্গুমেন্ট এবং সর্বোপরি হকিং এর ‘মাইণ্ড অব গড’ -এর মধ্যে। বড়ই দুর্ভাগ্য, সেখান থেকেও ঈশ্বরকে ক্রমশঃ হটে যেতে হচ্ছে। সেজন্যই লণ্ডন টাইমসে লেখা হয়েছে –

Modern physics leaves no place for God in the creation of the Universe, Stephen Hawking has concluded. Just as Darwinism removed the need for a creator in the sphere of biology, Britain’s most eminent scientist argues that a new series of theories have rendered redundant the role of a creator for the Universe.

ক্রেগ ভেন্টরের কৃত্রিম প্রাণের সৃষ্টি সংক্রান্ত পোস্টটি দেয়ার সময় বলেছিলাম, 

‘ধর্মবাদীরা থেমে থাকবেন না, জানি। নানা ধরনের প্যাচ-ঘোচ খুঁজে বের করবেন। হয়তো বলবেন, এটা আসল প্রাণ নয়, কারণ মাল মশলা প্রকৃতি থেকেই যোগাড় করা; ঈশ্বরের প্রাণ আরো নিঁখুত। কেউ বা বলবেন – এতে প্রমাণিত হল আসলেই ডিজাইনার লাগে। আবার কেউ কেউ হয়তো এখন প্রাসঙ্গিক নানা আয়াত কিংবা শ্লোক ধর্মগ্রন্থে পেয়ে যাবেন। মৌলভী, পোপ, পাদ্রী এবং পুরুত ঠাকুরেরা এই ধরনের গবেষণার নৈতিকতা আর মূল্যবোধ নিয়ে নরকগুলজার শুরু করেবেন অবধারিতভাবেই।’

 আমার অনুমান সত্য হয়েছিল। আমার প্রবন্ধটি মুক্তমনায় প্রকাশের পর থেকেই নানা ধরণের ‘ত্যানা-প্যাচানো’ শুরু হয়ে গিয়েছিলো কিছু মহল থেকে। বিজ্ঞানের গদাঘাতে চূর্ণ মস্তক এপোলজিস্টরা বিশ্বাস-নির্ভর সাইটগুলোতে প্রবন্ধ লিখতে শুরু করেছিল, ‘কৃত্রিম প্রাণ ও বদ্ধমনাদের আস্ফালন’ কিংবা ‘কৃত্রিম প্রাণ তৈরির খবরে মুক্তমনাদের দেহে প্রাণের সঞ্চার’ জাতীয় নিচুমানের হাস্যকর সব প্রবন্ধ। কিন্তু অন্ধ হলেই প্রলয় বন্ধ থাকেনা।  বিজ্ঞান কিন্তু বিজ্ঞানের কাজ করেই যাবে, আর বিশ্বাসীদের ভবিষ্যত-ঈশ্বর বিজ্ঞানের কেমোথেরাপির প্রভাবে হয়ে উঠবেন আরো শীর্ণকায়।

এবিসি নিউজের সাম্প্রতিক একটি সাক্ষাৎকারে  স্টিফেন হকিংকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো ধর্মান্ধতা আর বিজ্ঞানের এই লাগাতার সংঘাতে কে জয়ী হবে? হকিং এর দ্বিধাহীন উত্তর ছিল – সায়েন্স উইল উইন!  হকিং সেই সাক্ষাৎকারে পরিস্কার করেই বলেছেন,

ধর্ম আর বিজ্ঞানের মধ্যে একটি পরিস্কার জায়গায় পার্থক্য আছে। ধর্ম মূলতঃ ঐশী -বানী আর রিলিজিয়াস অথরিটির উপরই নির্ভরশীল , সেখানে বিজ্ঞান নির্ভর করে যুক্তি আর প্রমাণে। শেষ পর্যন্ত বিজ্ঞানই জয়ী হবে, কারণ বিজ্ঞানের এই পদ্ধটিটাই উৎকৃষ্ট বলে প্রমাণিত হয়েছে।

ইউটিউব থেকে সাক্ষাৎকারটি পাঠকদের জন্য দেয়া হল :

ধারণা করা ভুল হবে না যে, হকিংকে নিয়েও অবধারিতভাবে ত্যানা-প্যাচানো করবেন চূর্ণমস্তক ধর্মান্ধরা। তারা দেখানোর চেষ্টা করবেন, হকিং পদার্থবিজ্ঞানের কিছুই বোঝে না। তার চেয়ে বরং হারুন ইয়াহিয়া এবং জোকার নায়েক কিংবা কোন এক রামকানাই অনেক জ্ঞানী। তারাই হকিং-কে ভালো বিজ্ঞান শেখাতে পারবেন। আপনারা এও  অবধারিতভাবেই শুনবেন, সৃষ্টিকর্তা ছাড়াই মহাবিশ্ব সৃষ্টির ধারণা আসলে ইহুদী-নাসারাদের প্রপাগাণ্ডা ছাড়া আর কিছুই নয়। আমি সেই সার্কাস আবারো দেখতে আগ্রহী।  

যে লাইনটি ক্রেগ ভেন্টররের উপর প্রবন্ধ লেখার সময় লিখে শেষ করেছিলাম, সে লাইনটা  আবারো বলি –  

লেট দেম বার্ক ফর এ হোয়াইল, এন্ড দ্য ক্যামেল অফ সায়েন্স সাইলেন্টলি পাসেস!  

জয়তু স্টিফেন হকিং। জয়তু বিজ্ঞান। তার নতুন গ্রাণ্ড ডিজাইন বইটি প্রকাশের পর তা পাঠকের ঘরে ঘরে পৌছিয়ে যাক।

লিখেছেন: অভিজিৎ