জনবহুল এ দেশের জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় সহায়তাকারী দুটি প্রধান এলাকা সুন্দরবন ও হাওর অঞ্চল। হাজার প্রজাতির পাখপাখালি, মাছ, জলজ উদ্ভিদ, মিঠাপানির কচ্ছপসহ বিভিন্ন প্রাণী আর কিছু বিশেষ গাছপালা নিয়ে গড়ে উঠেছে হাওর ইকোসিস্টেম। হাওরগুলো রয়েছে মূলত দেশের মধ্য উত্তর-পূর্বাঞ্চলে। জেলা হিসেবে এগুলোর অবস্থান সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। সবচেয়ে বেশি হাওর সুনামগঞ্জ জেলায়। বাংলাদেশের একমাত্র বুনো গোলাপটি দেখা যায় এ এলাকারই কিছু হাওরে।

জীববৈচিত্র্যের এই গুরুত্বপূর্ণ আধার হাওরের সম্পদ ক্রমশ বিলুপ্ত হচ্ছে। হিজল আর করচগাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। হারিয়ে যাচ্ছে মাখনা, শিঙাড়া, লাল পদ্মসহ নানা জলজ উদ্ভিদ। হিজল, করচ ও বরুণের সমন্বয়ে যে সোয়াম্প ফরেস্ট গড়ে উঠেছিল, তার অধিকাংশই এখন আর নেই। হাওরের যে উদ্ভিদ প্রজাতিটি এখন সবচেয়ে দুর্লভ ও বিপন্ন, সেটি হচ্ছে বুনো বা জংলি গোলাপ। হাওরবাসী একে বলে গুজাকাঁটা। গোলাপ চেনে না এমন কেউ নেই। তবে বুনো গোলাপকে শুধু হাওরবাসীই ভালো চেনে। গত মার্চে সুনামগঞ্জের চারটি হাওরে গিয়ে মাত্র একটিতে খুঁজে পাওয়া গেছে এ গোলাপ।

বুনো গোলাপের বৈজ্ঞানিক নাম Rosa cinophylla। তবে আগে তা ছিল R. involucata। ঝোপময় কাঁটাযুক্ত গুল্ম প্রকৃতির উদ্ভিদ। সাধারণত ৩ থেকে ১৫ ফুট লম্বা হয়। বছরের পাঁচ-ছয় মাস পানির নিচে থাকে কাণ্ডের মূল অংশ। সাজানো বাগানের ‘খানদানি’ গোলাপগুলো যখন বৃন্তচ্যুত হতে থাকে, ঠিক তখনই সাদা পাপড়ি নিয়ে গ্রীষ্মের প্রারম্ভে হাওরের মাঝে আত্মপ্রকাশ করে অনাদরের বুনো গোলাপ। ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ফুল ধরে এতে। ফুল সুগন্ধি, পাপড়ি পাঁচটি। বীজে চারা গজায়। বীজ বা চারা থেকে বাড়ির বাগানে কেউ এ গোলাপ করতে পেরেছেন এমন তথ্য পাওয়া যায়নি।

বিপন্ন প্রজাতির এ বুনো গোলাপটির হারিয়ে যাওয়ার প্রধান কারণ হলো কৃষি ও অন্যান্য কারণে আবাসভূমি ধ্বংস, জ্বালানির জন্য কাণ্ড সংগ্রহ এবং ওষুধ তৈরির জন্য শেকড় সংগ্রহ। সম্ভবত একমাত্র স্বপরিবেশে সংরক্ষণ-পদ্ধতি প্রয়োগ করে একে টিকিয়ে রাখা সম্ভব। সে জন্য এর আবাসভূমি রক্ষার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।

– প্রথম আলো