জনশক্তি আমদানিকারক দেশগুলোর প্রতি যন্ত্রে পাঠযোগ্য বা মেশিন রিডেবল (আরএমপি) পাসপোর্টের পাশাপাশি হাতে লেখা জরুরি পাসপোর্টেও ভিসা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ।

রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মধ্যপ্রাচ্যসহ সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে এক জরুরি বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি এ আহ্বান জানান।

পরে দীপু মনি এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

দীপু মনি বলেন, ‘আমরা ইন্টারন্যাশনাল সিভিল অ্যাভিয়েশন অর্গানাইজেশন (আইসিএও)’র গাইডলাইন মেনে যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্ট দেওয়া শুরু করেছি। সবাইকে এই পাসপোর্ট দেওয়া সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। এজন্য যাদের জরুরি ভিত্তিতে পাসপোর্ট দরকার আইসিএও’র নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের হাতে লেখা পাসপোর্ট দেওয়া হচ্ছে। সেক্ষেত্রে হাতে লেখা জরুরি পাসপোর্টেও ভিসা দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা উভয় ধরনের পাসপোর্টকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছি, যাতে আমাদের কর্মী ও ছাত্ররা ভিসা সংক্রান্ত কোনো সমস্যায় না পড়েন।’

বৈঠকে রাষ্ট্রদূতরা তাদের সরকারকে বাংলাদেশের এ আহ্বান জানানোর আশ্বাস দেন বলে তিনি জানান।

হাতে লেখা জরুরি পাসপোর্ট বিভিন্ন মেয়াদি হওয়ায় জনশক্তি আমদানিকারক দেশগুলোর মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা পেতে সমস্যা হচ্ছে বাংলাদেশিদের।

অন্যান্য দেশেও যাতে এ ধরনের সমস্যা না হয় এবং এ বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে এ বৈঠকের আয়োজন করা হয়।

বৈঠকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর রাষ্ট্রদূত ছাড়াও মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ ও আফ্রিকার কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূতরা অংশ নেন।

আইসিএও’র নীতিমালায় এক বছর মেয়াদি হাতে লেখা জরুরি পাসপোর্ট দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু এমআরপি’র প্রচলন হওয়ার পর বাংলাদেশ বিভিন্ন সময়ে এক, দুই ও তিন বছর মেয়াদি জরুরি পাসপোর্ট দিচ্ছে। মূলত এ নিয়েই আরব আমিরাতে সমস্যা হচ্ছে।

বিভিন্ন মেয়াদি জরুরি পাসপোর্ট দেওয়ার যুক্তি প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এক বছর মেয়াদি পাসপোর্ট থাকলে অনেক সময় কর্মী ও ছাত্ররা ভিসা পায় না। এজন্যই মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।’

একই বিষয় নিয়ে সোমবার সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নাজমুল কাওনাইন সে দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করবেন।

দীপু মনি বলেন, ‘ওই বৈঠকের পর আশা করি ভিসা ইস্যু নিয়ে আর কোনো সমস্যা থাকবে না এবং  আরব আমিরাতের দ্বিধা দ্বন্দ্বও দূর হবে।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে পাসপোর্টে নিজের নামের সঙ্গে বাবার নামও যুক্ত থাকে। তবে এমআরপি পাসপোর্টে বাবার নামসহ অনেক তথ্য ‘বারকোড’ আকারে থাকে। এছাড়া ভিসা’র জন্য রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো বাংলাদেশ থেকে পাসপোর্টের যে ফটোকপি পাঠায়, তাতে ‘বারকোড’ পড়া যায় না। এসব কারণে সম্ভাব্য বিদেশগামীর সব তথ্য না পেয়ে ভিসা ইস্যু নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়।

দীপু মনি বলেন, ‘আমাদের দূতাবাসগুলোতে এমআরপি পাঠযোগ্য মেশিন স্থাপন করা হবে। এছাড়া পাসপোর্টে জরুরি তথ্য উল্লেখ করে একটি পৃষ্ঠা (ডাটা পেজ) দেওয়া হবে।’

আগামী ৪ থেকে ৬ মাসের মধ্যে এটা সম্ভব হবে। প্রয়োজনে এসব তথ্য হাতে লিখে দেওয়া হবে। এসব উদ্যোগের পর সমস্যাগুলো কেটে যাবে বলে তিনি জানান।

ভারতসহ অনেক দেশে ‘বারকোড’ সংক্রান্ত সমস্যা এড়ানোর জন্য পাসপোর্টে ডাটা পেজ যুক্ত করে দিয়েছে।