পরিবারের সবাই মিলে দাওয়াতে যাবে। বিপত্তিটা ঘটল কম বয়সী মেয়েটিকে নিয়ে। কোন ধরনের পোশাক পরবে বুঝতে পারছে না। শেষে দেখা যায়, বেড়াতে যাওয়ার আনন্দটাই পণ্ড হয়ে গেল। বয়সটাই যে এমন! চেহারায় একধরনের নিষ্পাপ ভাব থাকে। অতিরিক্ত সাজ এ সময় মানায় না। তবে অনুষ্ঠান বা কোনো আমন্ত্রণের জন্য পোশাকটা একটু জমকালো,ফ্যাশনেবল হলে মন্দ হয় না। হাল ফ্যাশনের প্রতি তাদের ঝোঁকও থাকে। তাদের ওপর কিছু চাপিয়ে দেওয়ার দরকার নেই। নিজের পছন্দমতোই পোশাক পরা উচিত। এতে করে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে। কোনো জমকালো অনুষ্ঠান কিংবা নিমন্ত্রণের জন্য টিউনিকটা বেশ মানানসই। চটজলদি তৈরিও হওয়া যায়। এ সময়ের জন্য উপযোগী। বললেন ড্রেসিডেলের প্রধান নির্বাহী মায়া রহমান।

জমকালো পোশাকের কাটছাঁট
টিউনিক তৈরিতে সাধারণত নিট, লাইক্রা, শিফন, সিল্ক, ডুপিয়ান, শার্টিন, নেট আর সুতি কাপড় ব্যবহার করা হয়। কম বয়সের মেয়েদের যেকোনো পোশাকে বেশ বৈচিত্র্য থাকে। টিউনিকেও তা রয়েছে।
এ-লাইন, জিপসি, কিমোনো, বেবি ডল (ফ্রক ধরনের), বডি ফিটেড এম্পায়ার ওয়েস্ট লাইন ও এসিমেট্রিক্যাল কাটের টিউনিক এ বয়সে বেশ মানায়। তবে যারা একটু পৃথুলাকায়, তাদের জন্য এ-লাইন কাট বেশ উপযোগী। এসব পোশাক একটু ঢিলেঢালা হলে ভালো হয়। শুধু কাটে নয়, হাতাগুলোর নকশাতেও বৈচিত্র্য দেখা যায়। জানালেন মায়া রহমান।
গোল গলা, ভি-গলা, বোট নেক, হল্টার নেক, কাওল নেক, শার্ট কলার, হাইনেক গলা সাধারণত টিউনিকে ব্যবহার করা হয়। খাটো হাতা, ফুলহাতা, ঘটি ও থ্রি কোয়ার্টার হাতা বেশ চলছে। হাতায়ও কুঁচি দেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া নিজের পছন্দসই যেকোনো নকশা করতে পারেন হাতায়।
এ ছাড়া পোশাকে বাড়তি সৌন্দর্য এনে দিতে বিডস, ধাতব উপাদান, ফিতা, পাথর ব্যবহার করতে পারেন। অ্যাপ্লিক, ক্রুশ কাজ, অল্প হাতের কাজও করা যেতে পারে।
টিউনিকের লম্বাটা হাঁটু পর্যন্ত হলে ভালো হয়। এর চেয়ে খাটো পরতে চাইলে সেটিও পরতে পারেন। তবে খেয়াল রাখতে হবে নিজেকে মানিয়েছে কি না। জমকালো পোশাকটা সাধারণত রাতেই পরা হয়। তাই এসব পোশাকের রংটা গাঢ় হলে ভালো হয়।
কম বয়সের মেয়েরা উজ্জ্বল রং পছন্দ করে। সবুজ, কালো, মেরুন, লাল, বার্গেন্ডি, পার্পেল রঙের পোশাক বেছে নিতে পারে। তবে এ সময় যেহেতু গরম, সে ক্ষেত্রে ধূসর, চাপা সাদা, নীল, হালকা হলুদ রঙের পোশাক পরতে পারে। কিনেই পরতে হবে তা নয়, মায়ের পুরোনো মসলিন দিয়েও কিন্তু সুন্দর টিউনিক হতে পারে। বললেন ফ্যাশন ডিজাইনার মাহিন খান।
মাহিন খান বলেন, তবে এ ধরনের পোশাক স্তরবিশিষ্ট করে তৈরি করলে ফ্যাশনেবল হয়। দু-তিন রকমের কাপড় মিশ্র করে ফ্রক বা জিপসি বানিয়ে নিতে পারেন। নিচের স্তরে সুতিকাপড় আর ওপরের স্তরে মসলিন, শিফন, জর্জেট ব্যবহার করা যেতে পারে। ব্লকপ্রিন্টের ওপর আফসান দেওয়া কাপড়ও জমকালো পোশাক হিসেবে পরতে পারেন। কোমর থেকে নিচের দিকে কলিকাট, ছাতার মতো কাট দেওয়া যেতে পারে। কম বয়সের অনেক মেয়ে খেলাধুলা পছন্দ করে। তারা সাধারণত ঢিলেঢালা সোজা কাটের খাটো টি-শার্ট পরতে চায়। কিন্তু এসবের মধ্যে চুমকি, গ্লিটার ব্যবহার না করাই ভালো।

আনুষঙ্গিক পোশাক
টিউনিক, খাটো টি-শার্ট, ফ্রক বা জিপসির সঙ্গে আনুষঙ্গিক হিসেবে নানা কাটের প্যান্ট পরতে পারেন। ডেনিম, কার্গো প্যান্ট, ট্রাউজার পরা যেতে পারে। ক্যাপ্রি, লেগিংস, টাইটস বা জিনস প্যান্ট গুটিয়ে পরলেও মানাবে। একরঙা কিংবা প্রিন্টের নকশার প্যান্টও পরতে পারেন। চাইলে গলায় পোশাকের সঙ্গে মানানসই স্কার্ফ পরতে পারে মেয়েরা। জমকালো হলেই তো হবে না, পোশাকটি যেন বয়সের সঙ্গে মানানসই হয়, আরামদায়ক হয়।

সাজসজ্জা
কম বয়সের মেয়েদের কম সাজেই ভালো লাগে। এক ধরনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য থাকে এ বয়সে। অতিরিক্ত সাজ সেটিকে কৃত্রিম করে তোলে। তাই জমকালো পোশাকের সঙ্গে হালকা করে পাউডার, চোখে কাজল বা আইলাইনার আর ঠোঁটে লিপগ্লস লাগিয়ে নিন। ব্যস, হয়ে গেল মুখের সাজ। কিন্তু এখনো খানিকটা বাকি আছে।
হাতে অনেকগুলো বালা, ব্রেসলেট, বড় আকারের ঘড়ি পরতে ভালোবাসে এ বয়সের মেয়েরা। সঙ্গে গলায় ছোট্ট কোনো পেনডেন আর কানে ছোট্ট ফুল। চাইলে শুধু গলায় বড় মালা পরতে পারেন। কোমরে নানা নকশার বেল্ট পরলে এসব পোশাককে আরেকটু জমকালো করে তোলে। সঙ্গের ব্যাগটাও উজ্জ্বল রঙের হতে হবে। হাল ফ্যাশনের বড় ব্যাগ বা ক্লাচ ব্যাগও নিতে পারেন। এবার আসা যাক পায়ের দিকে।
টিউনিক পোশাকের সঙ্গে উঁচু জুতা বা স্যান্ডেল পরতে পারেন। যারা চটি পরে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন তাঁরা সেটিই পরুন। রাতের অনুষ্ঠানের স্যান্ডেলটা একটু পাথর বসানো হলে উজ্জ্বল দেখাবে। তবে কম বয়সের মেয়েদের সাধারণ সাজেই অসাধারণ লাগে। তা যদি হয় জমকালো পোশাক, তাহলে তো কথাই নেই।

কোথায় পাবেন
ড্রেসিডেল, মায়াসির, আড়ংসহ দেশীয় বড় ফ্যাশন হাউসগুলোতে পাবেন। এ ছাড়া এক্সট্যাসি, ওয়েসটেকস, ইনফিনিটি, ইয়েলোতে এসব পোশাক পাওয়া যাবে।

প্রথম আলো