পুলিশের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা বাড়াতে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ সদর দফতর। পদোন্নতির জন্যও তাদের বেশ কিছু যোগ্যতা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। এর মধ্যে উপ-পরিদর্শককে (এসআই) নূ্যনতম এক বছর ও সহকারী উপ-পরিদর্শককে (এএসআই) দুই বছর র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নে (র‌্যাব) কাজ করতে হবে। সম্প্রতি পুলিশ সদর দফতর এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করেছে। পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজি) নূর মোহাম্মদ স্বাক্ষরিত এ নির্দেশনা শিগগির কার্যকর করা হবে।

বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে মোট সদস্য সংখ্যা ১ লাখ ২৪ হাজার ৩৬৬। এর মধ্যে এসআই ১১ হাজার ৪৮ জন। ইন্সপেক্টর প্রায় আড়াই হাজার। থানায় সংখ্যা ৬০৯টি। তবে মাঠ পর্যায়ের পুলিশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ এসআই। তাদের পদোন্নতি নিয়ে অতীতে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, পদোন্নতি পেতে এসআইরা রাজনৈতিক নেতাদেরও দ্বারস্থ হন। এসআই থেকে পদোন্নতি পেয়ে এক পুলিশ কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর হন। রাজনৈতিক তদবির, লবিং-গ্রুপিং না থাকলে অনেকে শেষ পর্যন্ত এ পদ থেকেই অবসর নেন। এখন থেকে পুলিশের বিশেষ ইউনিটে নির্দিষ্ট সময় কাজ করার অভিজ্ঞতা না থাকলে এসআই ও এএসআই পর্যায়ের কর্মকর্তাকে পদোন্নতির জন্য বিবেচনায় আনা হবে না। পুলিশ বাহিনীতে অফিসার ইনচার্জ (ওসি) পদটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু অনেক যোগ্য ও মেধাবী ইন্সপেক্টর চাকরি জীবনে থানায় ওসি হতে পারেন না। আশা করা হচ্ছে, নতুন এ আদেশ কার্যকর হলে যোগ্য আর মেধাবী ইন্সপেক্টররাই ওসি হতে পারবেন।

পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সমকালকে জানান, পুলিশ বাহিনীতে বেশ কিছু বিশেষায়িত ইউনিট রয়েছে। এসব ইউনিটে যেসব পুলিশ সদস্য কাজ করেন তারা বিশেষ অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। এ অভিজ্ঞতা তাদের কর্মজীবনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। পুলিশ সদর দফতরের ওই নির্দেশনায় বলা হয়, ব্যক্তিগত, পেশাগত, রাষ্ট্রীয় কল্যাণের স্বার্থে ইন্সপেক্টর, এসআই, এএসআই পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের র‌্যাব, এসবি ও সিআইডিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকা প্রয়োজন। এমনকি তাদের পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে কাজের অভিজ্ঞতা থাকাও দরকার। এজন্য একজন পুলিশ পরিদর্শককে তার চাকরি জীবনে এসবি বা সিআইডিতে কমপক্ষে দুই বছর কাজ করতে হবে। এছাড়া যে কোনো প্রতিষ্ঠান (বিপিএ, পিএসসি, পিটিসি, ট্রাফিক ও ড্রাইভিং ট্রেনিং স্কুলে) কমপক্ষে দুই বছর চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এ অভিজ্ঞতা না থাকলে পদোন্নতির ক্ষেত্রে তারা বিবেচিত হবেন না।

পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, গুরুত্বপূর্ণ থানায় বদলির জন্য পুলিশের মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে ব্যাপক তদবির, লবিং-গ্রুপিং চলে। কাঙ্ক্ষিত থানায় বদলির জন্য মাঠ পর্যায়ের অনেক পুলিশ কর্মকর্তা রাজনৈতিক নেতাদেরও দ্বারস্থ হন। এতে পুলিশ বাহিনীতে মাঠ পর্যায়ের চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়ে। এছাড়া মাঠ পর্যায়ের অনেক পুলিশ কর্মকর্তা একটি থানায় দীর্ঘদিন থাকার জন্য নানা তদবির চালান। অনেকে একই জেলার বিভিন্ন থানায় বদলি হয়ে দায়িত্ব পালন করতে পছন্দ করেন। আবার অনেকে পুলিশের বিভিন্ন বিশেষায়িত ইউনিটে কাজ না করে একই জায়গায় কাজ করতে আগ্রহী। -সমকাল