কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরের কৈলাগ ইউনিয়নের রাহেলা ও দীঘিরপাড় ইউনিয়নের ছয়চিড়া গ্রামের মাঝামাঝি স্থানে এক সপ্তাহ ধরে প্রকাশ্যে চলছে জুয়ার আসর। এ ছাড়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানে তৈরি হচ্ছে চোলাই মদ, চলছে ফেনসিডিল ও গাঁজার ব্যবসা। এলাকাবাসীর অভিযোগ, পুলিশের প্রত্যক্ষ মদদে একশ্রেণীর রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও প্রভাবশালী ব্যক্তি অবাধে এসব অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছে।
তবে বাজিতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আকতারুজ্জামান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, ‘কোথায় মদ ব্যবসা চলছে, কোথায় জুয়া খেলা হচ্ছে আমাকে দেখান। চলেন, আমরা সবাই মিলে গিয়ে দেখি মদ-জুয়া চলছে কি না। কেউ যদি পুলিশের নাম করে টাকা আনে বা কেউ টাকা দেয় এটা তাদের ব্যাপার। কেউ পুলিশের নামে টাকা আনলে তাকে বেঁধে আমার কাছে সোপর্দ করেন।’ তিনি দাবি করেন, বাজিতপুরের কোথাও মদ ব্যবসা বা জুয়া খেলা চলছে না।
বৃহস্পতিবার সকালে কৈলাগ এলাকায় একদল সংবাদকর্মী গেলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, কৈলাগের দক্ষিণ পাশে এক মাস আগেও জুয়া খেলা চলত। মাসোহারা নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় পুলিশ মূল হোতা আক্কল আলীকে গ্রেপ্তার করে চুরির মামলায় চালান দেয়। এ ছাড়া চিহ্নিত জুয়াড়ি কবীরকে বাজিতপুর থানার সাবেক ওসি সুব্রত কুমার সাহা জুয়া খেলা পরিচালনার অভিযোগে গ্রেপ্তার করেন। গত ২৫ নভেম্বর থেকে এলাকার ইদু মিয়া, নুরু মিয়া, হোসেন মিয়া ও কবীর মিয়ার নেতৃত্বে নতুন করে জুয়ার আসর বসছে। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত অবধি জুয়া খেলা চলছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঘটনার কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, থানার লাশ বহনকারী দুঃখু মিয়া প্রতিদিন জুয়ার আসর বসার আগে কৈলাগ গিয়ে তিন হাজার টাকা করে নিয়ে আসে।
জানা যায়, সরারচর ইউনিয়ন সদরের হরিজন পল্লীর ৯টি ঘরে অনেকটা প্রকাশ্যে তৈরি হচ্ছে চোলাই মদ। অভিযোগ রয়েছে, পুলিশের পক্ষ থেকে প্রতিটি ঘর থেকে প্রতি সোমবার ৭০০ টাকা করে তুলে আনছে ওই দুঃখু মিয়াই। বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিন হরিজন পল্লীতে গেলে নাম প্রকাশ করে কেউ কথা বলতে রাজি হয়নি। তবে তারা জানায়, প্রতিদিন ৯টি চুলি্লতে কয়েক শ লিটার মদ তৈরি হয়। এ সময় ওই পল্লীর কয়েকটি ঘরে বেশ কয়েকজনকে বসে মদ পান করতে দেখা গেছে।
জানা যায়, এ পল্লী থেকে বাজিতপুরের বিভিন্ন ইউনিয়ন ও প্রতিবেশী কয়েকটি উপজেলায় চোলাই মদ সরবরাহ করা হয়। হরিজন পল্লীসহ সরারচরে প্রকাশ্যে যারা মদ তৈরি করছে তারা হচ্ছে_হরি রাজবর, জোছনা, ফালানি, কাজলী, রেনু, বাসুনি, পার্বতী, জামাল ও কালা মিয়া। মদ তৈরির সঙ্গে জড়িতদের একজন বলল, ‘বাবু, আমরা ইটা কইরা খাই। চুলাই না বানাইলে আমরার না খাইয়া মরতে অইব। হের লাইগ্যাই আমরা স্যারগো (পুলিশ) কিছু দেই।’ কৈলাগের মেরু মিয়া, জুলহাস মিয়া, আক্কল আলী, কুকরারাইয়ের সিদ্দিক, ভাণ্ডার হারুনের স্ত্রী, দীঘিরপাড়ের আমির আলী, পৌর সদরের হরিজন পল্লীর মোহনলাল, মিঠুন, তাতালচরের খোকন, সাগরফেনার নিজাম, উত্তর সরারচরের বাদল, হিরু, মঞ্জ, গনি দীর্ঘদিন ধরেই মদ ও গাঁজার ব্যবসা করে যাচ্ছে।
গত সোমবার বাজিতপুরের ইউএনওর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকে প্রকাশ্যে মাদক ব্যবসা ও জুয়া খেলার বিষয়টি আলোচনা করা হয়। মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নুরুল হক জানান, পুলিশের সহায়তায় সরারচরের ৯টি ঘরে অবৈধভাবে চোলাই মদ তৈরি হচ্ছে। কৈলাগ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল করিম বলেন, ‘এলাকায় প্রকাশ্যে জুয়া খেলা চলছে বলে শুনেছি। সামাজিকভাবে জুয়া বন্ধের চেষ্টা করা হচ্ছে।’
সহকারী পুলিশ সুপার (বাজিতপুর সার্কেল) এন এম নাসির উদ্দিনের কাছে পুলিশের সহায়তায় জুয়া ও মাদক ব্যবসা পরিচালনার অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত করে দেখা হবে। পুলিশের কেউ এতে জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
-কালের কন্ঠ
You must log in to post a comment.