কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার ইশাচর গ্রামের রিকশাচালক আলী আকবর (৩৮) ছয় সন্তানের পিতা। তাঁর স্ত্রী রাশিদা আক্তার জানান, দুই সন্তানের জন্মের পর অভাবের সংসারে আর সন্তান নিতে চাননি তাঁরা। কিন্তু তাঁকে জন্মনিয়ন্ত্রণের পরামর্শ দেওয়ার কেউ ছিল না। তাই এক এক করে ছয়টি সন্তান। এখন এত বড় পরিবার নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। কিশোরগঞ্জ পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের কার্যালয় থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরের গ্রামের এই দম্পতির এমন দশা। পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কার্যক্রম শিথিল হয়ে পড়ায় আলী আকবরের মতো জেলার ১৩টি উপজেলার অনেক দম্পতি কোনো সেবা বা পরামর্শ পাচ্ছেন না। বিশেষ করে হাওর পরিবেষ্টিত উপজেলা ইটনা, অষ্টগ্রাম, মিঠামইন ও নিকলীতে কার্যক্রম শিথিল হয়ে পড়ায় জনসংখ্যা বাড়ছে আশঙ্কাজনকভাবে। ইটনা উপজেলার পাঁচহাটি গ্রামের পাঁচ সন্তানের জননী রাবেয়া বেগম (৩২) জানান, বিয়ের ছয় বছরের মধ্যে তাঁর চারটি সন্তান হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, এই সময়ের মধ্যে তিনি পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কোনো মাঠকর্মীকে কাছে পাননি।
মিঠামইন উপজেলার চারিগ্রাম এলাকার মিনারা খাতুনসহ কয়েকজন নারী বলেন, ‘হাওর অঞ্চলের গিরছ (কৃষক) বাড়িতে যারার বিয়া অইছে, তারা হগলেই পাঁচ-ছয়ডার মা অইছে। সরহারের (সরকারের) কোনো লোক আমরার ধারে আই (আসে) নাই।’ জেলা শহরের খরমপট্টি এলাকার আফরোজা বেগম (৩৫) জানান, আগে বিয়ের পর মাঠকর্মীরা বাসায় এসে জন্মনিরোধক বড়িসহ বিভিন্ন পদ্ধতি নিতে পরামর্শ দিতেন। কিন্তু গত ১০ বছরে এ এলাকায় কোনো কর্মী এসে কাজ করেছেন বলে তাঁর জানা নেই। জেলা পরিবার পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী সারা দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৩৯ শতাংশ। কিন্তু কিশোরগঞ্জে এই হার ২ দশমিক ২২ শতাংশ। কিশোরগঞ্জের পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. হাবিবুর রহমান জানান, ‘আমাদের পরিসংখ্যানে নিকলী, তাড়াইল, করিমগঞ্জ ও ইটনা উপজেলার জনসংখ্যা বৃদ্ধির গড় হার ১ দশমিক ৭৭। হাবিবুর রহমানের দেওয়া তথ্যমতেও দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের (১ দশমিক ৩৯) চেয়ে এসব উপজেলায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বেশি।
হাবিবুর রহমান আরও জানান, জেলার নয়টি উপজেলায় চিকিৎসা কর্মকর্তা (মা ও শিশু স্বাস্থ্য) পদে লোক নেই। পরিবার কল্যাণ সহকারীর ১১৯টি, পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শকের ৩৯টি পদসহ জেলায় এই বিভাগে মোট ৪১৭টি পদ শূন্য রয়েছে। তার পরও পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চলছে। শূন্য পদে লোক নিয়োগ হলে অবস্থার উন্নতি হবে। ইটনা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আমিনুল হক অভিযোগ করেন, হাওরে কার্যত পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কোনো কার্যক্রম নেই। মাঠ পর্যায়ের পরিবার কল্যাণ সহকারীদের কার্যক্রম চোখে পড়ে না। কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন দীন মোহাম্মদ জানান, সারা দেশের তুলনায় কিশোরগঞ্জে জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার তুলনামূলকভাবে বেশি। সংশ্লিষ্ট বিভাগে জনবল সংকটের কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
– সাইফুল হক মোল্লা, প্রথম আলো