সেই আলোচিত পুলিশ সুপার এখন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে (ডিএমপি)। যিনি মধুমতির তীরে অবৈধভাবে দখল করেছিলেন মাত্র (!) ৭শ’ বিঘা জমি। সব সরকারের সময়ই তিনি ক্ষমতাধর পুলিশ কর্মকর্তা। সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করে যার বরখাস্তকালকে কর্তব্যকাল হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় তিনি হলেন জমি দখলের
মহানায়ক পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান। চারদলীয় জোট সরকারের সময় যে পুলিশ কর্মকর্তার পদোন্নতি হয়েছে রাতারাতি তিনি এখনও মহাজোট সরকারের সুনজরে। ৭শ’ বিঘা জমি দখল করে একাধিকবার পত্রিকার শিরোনাম হয়ে পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা পুলিশ কর্মকর্তাকে ডিএমপিতে আনায় অনেকেই বিস্মিত।
জমি দখলের ঘটনায় গত ২০ ফেব্রুয়ারি পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি (প্রশাসন) স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে মিজানুর রহমানকে বাগেরহাট থেকে প্রত্যাহার করা হয়। ওই প্রজ্ঞাপনে প্রত্যাহারের কোনো কারণ উল্লেখ করা হয়নি। গত ১১ মার্চ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এক প্রজ্ঞাপনে মিজানুর রহমানকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। বিষয়টি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনও সংসদে উল্লেখ করেছিলেন। জমি দখলের ঘটনার ব্যাপারে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। রহস্যজনক কারণে সেই নির্দেশ ছিল অন্ধকারে।
সূত্র জানায়, মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। তিনি আগেও নানা অভিযোগের কারণে সাময়িকভাবে বরখাস্ত হয়েছিলেন। গত ১৮ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপনে মিজানুর রহমানের বরখাস্ত আদেশ বাতিল করে বরখাস্তকালকে কর্তব্যকাল হিসেবে গণ্য করার নির্দেশ দেওয়া হয়। প্রজ্ঞাপন জারির দিনই মিজানুর রহমান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ সদর দফতরে যোগদান করেন।
এদিকে মিজানুর রহমানের বরখাস্তের আদেশ বাতিল করা নিয়ে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, পুলিশ সুপার মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ থাকার পরও রাজনৈতিক চাপে তার বরখাস্তের আদেশ বাতিল করতে হয়েছে।
সূত্র জানায়, দুর্নীতি আর অপকর্মের কারণে বারবার মিডিয়ায় শিরোনাম হয়েছেন পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান। একাধিকবার সাসপেন্ডও হয়েছেন। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় এক প্রভাবশালী মন্ত্রীর দাপটে বাগিয়ে নিয়েছেন পদোন্নতি। তার দাপটে পুলিশ সদর দফতরও ছিল তটস্থ। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর গোপালগঞ্জের বাসিন্দা পরিচয় দিয়ে হতে চেয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী। তার সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়। এরপর পুলিশ সদর দফদরের আপত্তি সত্ত্বেও খুঁটির জোরে ফরিদপুর জেলায় পুলিশ সুপার পদে যোগদান করেন। ফরিদপুর থাকা অবস্থায় আবার বিতর্কের জন্ম দেন মিজানুর রহমান। শেষ পর্যন্ত বাগেরহাটে পুলিশ সুপার পদে যোগদান করেন।
গত ১৭ ফেব্রুয়ারি সীমানা নির্ধারণের ঘোষণা দিয়ে শতাধিক পুলিশ আর অর্ধশত শ্রমিক নিয়ে গোপালগঞ্জ ও বাগেরহাট জেলার মধ্যবর্তী গ্রাম চরগোবরায় ৭শ’ বিঘা জমি দখল করেন। পরে দখলকৃত জমিতে পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি বেনজীর আহমেদ ও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ডিসি মনিরুল ইসলামের মালিকানা দাবি করে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেন। সমকালসহ কয়েকটি পত্রিকায় এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর প্রশাসনের নির্দেশে সাইনবোর্ড অপসারণ করা হয়। পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে মিজানুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ দেওয়া হয়। মিজানুরকে প্রত্যাহারের পর এলাবাবাসী আনন্দ মিছিলও করেছিল। ঘটনা তদন্তের জন্য খুলনা রেঞ্জের ডিআইজিকে দিয়ে একটি তদন্ত কমিটিও করা হয়েছিল।
এ ব্যাপারে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি (সদর দফতর) হাবিবুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ১৮ জুলাই পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান ডিএমপিতে যোগদান করেছেন। তবে ডিএমপিতে নয়, তার চাকরি ডিএমপি সদর দফতরে সংযুক্ত। -সমকাল