বাংলাদেশের তৈরি হীরার অলংকার এখন দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। তবে রপ্তানির পরিমাণ খুবই সামান্য। বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর ৫০ কোটি টাকার মতো হীরার অলংকার রপ্তানি হচ্ছে। প্রতিযোগী অন্যান্য রপ্তানিকারক দেশের তুলনায় গুণগত মান ও নকশা ভালো হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, কানাডা, জাপান, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন ধনী দেশের ক্রেতারা বাংলাদেশি অংলকারের প্রতি আগ্রহী হচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্বের হাতের তৈরি হীরার অংলকারের ৮০ শতাংশ কারিগর বাঙালি। এসব কারিগর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন। কিন্তু বাংলাদেশে মাত্র একটি কারখানা হওয়ায় এ খাতে কাজের সুযোগ কম। প্রতিবেশী দেশ ভারত প্রতিবছর হীরার গয়না রপ্তানি করে প্রায় আড়াই হাজার কোটি ডলার আয় করছে। উদ্যোক্তারা এগিয়ে এলে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর ৮০০ কোটি ডলার আয় করা সম্ভব হবে বলে মনে করা হয়।
জানা গেছে, অপ্রক্রিয়াজাত হীরা আমদানি ও প্রক্রিয়াজাত করে রপ্তানি করার জন্য রপ্তানিকারক দেশগুলোকে বাধ্যতামূলকভাবে কিমাবারলি প্রসেস সার্টিফিকেশন স্কিম (কেপিসিএস) সনদ নিতে হয়। তা ছাড়া অপ্রক্রিয়াজাত হীরা আমদানি ও রপ্তানি-সংক্রান্ত সার্বিক ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য কেপিসিএস থেকে পর্যালোচনা প্রতিনিধিদল সংশ্লিষ্ট দেশের কারখানার সার্বিক দিক পর্যালোচনা করতে আসে।
বাংলাদেশে অপ্রক্রিয়াজাত হীরা আমদানি ও রপ্তানি ব্যবস্থাদি পর্যবেক্ষণ, তথ্যাদি সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা-সংক্রান্ত সার্বিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন করতে চলতি মাসের ২৭ তারিখে চার দিনের সফরে একটি প্রতিনিধিদল আসছে। এতে চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও মধ্য আফ্রিকার দেশের প্রতিনিধিরা থাকবেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়েক বছর আগে কয়েকজন দেশি উদ্যোক্তা যৌথভাবে গাজীপুরের টঙ্গীতে ‘ব্রিলিয়ান্ট জুয়েলারি লিমিটেড’ নামের একটি কারখানা স্থাপন করেছেন। এই কারখানায় অপ্রক্রিয়াজাত হীরা আমদানি করে প্রক্রিয়াজাত করে বিদেশে রপ্তানি করা হয়। এ ছাড়া এখানকার তৈরি মূল্যবান অলংকার স্থানীয় বাজারেও পাওয়া যায়। দেশীয়ভাবে প্রস্তুত করা হীরার গয়না স্থানীয় ক্রেতাদের কাছে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে বলেও জানা গেছে।
বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) পরিচালক এবং ব্রিলিয়ান্ট জুয়েলারি লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে জানান, বাংলাদেশের তৈরি হীরার গয়না বিদেশের ক্রেতাদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কিন্তু একটি মাত্র কারখানা হওয়ায় অনেক ক্রেতা এখানে আসতে চান না। আরও অন্তত ১৫-২০টি কারখানা গড়ে উঠলে অনেক ক্রেতা এ দেশে আসবেন। কারণ, তখন তাঁরা যাচাই-বাছাই করে পণ্য কেনার সুযোগ পাবেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, বিশ্বে হীরার গয়না হাতে তৈরি করেন, এমন কারিগরের ৮০ শতাংশ বাঙালি। বাংলাদেশেও ভালো ভালো কারিগর রয়েছেন। বিশ্বব্যাপী হীরার অলংকারের ভালো বাজারও আছে। শতাধিক উদ্যোক্তা এ খাতে বিনিয়োগে এগিয়ে এলে ৪০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। তা ছাড়া দেশীয় চাহিদা সম্পূর্ণ মিটিয়ে প্রতিবছর ৮০০ কোটি ডলারের বেশি হীরার গয়না রপ্তানি করা সম্ভব হবে।
জানা গেছে, একটি ছোট কারখানা স্থাপনের জন্য অন্তত পাঁচ কোটি টাকা প্রাথমিকভাবে বিনিয়োগ করতে হয়। আর সেই কারখানার আয়তন বাড়াতে হলে বিনিয়োগ ক্রমান্বয়ে বাড়িয়ে ১০০ কোটি টাকা পর্যন্ত করা প্রয়োজন হয়। তবে বড় কারখানার জন্য এই বিনিয়োগ ৫০০ কোটি টাকা হয়।
আনোয়ার হোসেন জানান, কারখানার সংখ্যা বাড়লে ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা, জাপান, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন ধনী দেশের ক্রেতারা বাংলাদেশ থেকে হীরার গয়না কিনতে উৎসাহিত হবেন। উল্লেখ্য, ভারতের গুজরাটের সুরাটকে বলা হয়ে থাকে বিশ্বের হীরা প্রক্রিয়াকরণের কেন্দ্রভূমি। এখানে বিশ্বের মোট হীরা প্রক্রিয়াকরণের (কাটিং ও পলিশিং) ৯০ শতাংশ সম্পন্ন হয়ে থাকে।