মুঠোফোনে পরিচয়, তারপর ভালোবাসা। পরে পরিবারকে না জানিয়েই বিয়ে করেন তাঁরা। তবে তাঁদের ভালোবাসা বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। বিয়ের কিছুদিন পরই শুরু হয় স্ত্রীর ওপর স্বামী, শাশুড়ি ও ননদের শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন। পরিণামে স্ত্রীর বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা। স্ত্রী বর্তমানে কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যার আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গত রোববার কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মারিয়া ইউনিয়নের কাতিয়ারচরে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মুঠোফোনে প্রেমের সূত্রে কিশোরগঞ্জের কাতিয়ারচরের মানিক মিয়ার ছেলে কামরুল ইসলাম (২৫) ও সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের মৃত মমিন মিয়ার মেয়ে রোজি আক্তার (১৮) গত ডিসেম্বরে পরিবারকে না জানিয়ে ঢাকায় বিয়ে করেন। কামরুল গাজীপুরে একটি আসবাবের দোকানে শ্রমিকের কাজ করতেন। ঢাকায় বিভিন্ন বাসায় ঝিয়ের কাজ করতেন রোজি। বিয়ের পর শাশুড়ি আর ননদেরা রোজিকে মেনে নেননি। শুরু হয় নির্যাতন। একপর্যায়ে রোজিকে বাড়ি থেকে বের করে দেন তাঁর শাশুড়ি। এরপর রোজি ঢাকায় এবং কামরুল গাজীপুরে কর্মস্থলে অবস্থান করতে থাকেন।
রোজি জানান, তাঁর স্বামী গত ঈদুল আজহার আগে মুঠোফোনে শ্বশুরবাড়িতে আসতে বলেন। ফোন পেয়ে তিনি ঈদের আগের শুক্রবার শ্বশুরবাড়ি আসেন। কিন্তু ওই দিন সকালেই কামরুল রোজিকে কিছু না জানিয়ে গাজীপুরে চলে যান। রোজি স্বামীর বাড়ি এলে লোকজন তাঁকে বাড়িতে ঢুকতে বাধা দেন এবং তাঁকে স্বামীর তালাক দেওয়ার কথা জানান। পরে রোজি স্থানীয় ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমানের বাড়িতে আশ্রয় নেন। হাবিবুর রহমান বিষয়টি জেলা মহিলা পরিষদ সম্পাদিকা মায়া ভৌমিককে জানালে পরিষদের নেত্রীরা রোজির শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে আলোচনা করে তাঁকে শাশুড়ির কাছে রেখে আসেন। এ সময় কামরুলের পরিবার তালাকের বিষয়টি মহিলা পরিষদের নেত্রীদের জানাননি।
রোজির শাশুড়ি রাবেয়া খাতুন জানান, গত রোববার রাত নয়টার দিকে পরনের কাপড় পরিবর্তনের কথা বলে তাঁদের থাকার ঘরের এক কোণে গিয়ে রোজি বিষপান করেন। পরে তাঁকে উদ্ধার করে কিশোরগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করে পাকস্থলী পরিষ্কার করা হয়। এ ব্যাপারে রোজির স্বামী কামরুলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
হাবিবুর রহমান বলেন, ‘করুণ অবস্থা দেখে আমার জিম্মায় মেয়েটিকে দুই দিন রেখেছি। এর পরও বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়ায় রোজি আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন।’
– প্রথম আলো
You must log in to post a comment.