যারা দেশের বাইরে থাকে তারা সবসময়ই প্রতিক্ষায় প্রহর গুনে কখন দেশের একটা ভালো নিউজ শুনবে, সেটা জাতীয় কোন বিষয়ই হোক, তার নিজ জেলা-গ্রাম কিংবা পরিবারের কোন সু-সংবাদই হোক। আমিও তার ব্যাতিক্রম নই। বর্তমানে ইংল্যান্ডের পেশাদার ফুটবলের নেতৃত্বদান কারী দল মানচেষ্টার ইউনাইটেড খ্যাত শহর মানচেষ্টরে বসবাস করলেও আমার চিন্তা-চেতনা, স্বপ্ন আর সোনালী অতীত জুড়ে রয়েছে নরসুন্দা নদের দুই পাড় বেয়ে গড়ে উঠা শহর তথা উজান-ভাটির সমন্বয়ে প্রকৃতির অপরুপ সজ্জায় সজ্জিত কিশোরগঞ্জ জেলা। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে যে জেলাকে নিয়ে সবচেয়ে বেশী আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে সেটা নিঃসন্দেহে কিশোরগঞ্জ।

বর্তমান সরকারের শীর্ষ সাতটি পদে বহাল তবিয়তে কিশোরগঞ্জের সাত ব্যাক্তিত্ব থাকার পরও কিশোরগঞ্জে উন্নয়নের তেমন কোন চোয়া লাগেনি। তাই বাংলাদেশের দ্বিতীয় হেভিওয়েট জেলা হিসেবে পরিচিত এই জেলার মানুষ পড়েছে এক খ্যাতির বিড়ম্বনায়। গত বেশ কিছুদিন যাবত কিশোরগঞ্জের নিউজ দেশের কোন না কোন জাতীয় পত্রিকায় থাকেই সেটা হঠাৎ ধনী কিশোরগঞ্জ, শীর্ষ সাত, ১৬ বছর পর কিশোরগঞ্জ বিএনপি‘র পুর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষনা, জেলা বিএনপি‘র কোন্দল চরমে কিংবা নিকলীতে তৈরি হচ্ছে স্পিডবোট, বংশীবালিকা স্বরসতী অথবা আরেফিনের বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ফ্যান যেকোন শিরোনামেই হোক। কিন্তু সবকিছুকে চাপিয়ে গত ৪ আগষ্ট প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত নতুন তিনটি সরকারি মেডিকেল কলেজ চালু হচ্ছে এই শিরোনামের একটি সংবাদ আমাকে অনেক বেশী শিহরিত করেছে। খবরটা পড়ে এতটাই ভাল লাগলো যে আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল।

তিনটি মেডিক্যাল কলেজের মধ্যে কিশোরগঞ্জে স্থাপিত হতে যাচ্ছে একটি। যদিও কিশোরগঞ্জ জেলায় (ভাগলপুর) একটি প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজ এন্ড হাসপাতাল রয়েছে কিন্তু ভাগলপুরের সাথে জেলার অন্যান্য উপজেলার যোগাযোগ ব্যাবস্থা তেমন একটা ভালো নয় বলে অনেকেই সেখানে চিকিৎসা সেবা নিতে সেখানে যেতে পারেনা। তাছাড়া অনেক নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে-মেয়েরা যাদের কিনা যথেষ্ট মেধা এবং যোগ্যতা থাকা সত্বেও শুধুমাত্র অর্থের অভাবে মেডিকেলে পড়ার স্বপ্ন ধুলিসাৎ হয়ে যায়। কাজেই দেশে নতুন তিনটি মেডিকেল কলেজ চালু হলে একদিকে যেমন বর্তমানে সরকারী মেডিকেলে দেশের জনসংখ্যার তুলনায় হাতেগুনা ১৩৫০ টি আসনের সাথে আরও বেশ কিছু আসন ছাত্রদের জন্য যোগ হবে টিক তেমনি দেশের চলমান অভিজ্ঞ ডাক্তার সংকট ভবিষ্যতে কিছুটা হলেও লাগব হবে। তাই সরকারের এমন উদ্যোগকে রাজনীতির উর্ধ্বে উঠে আসুন সবাই মিলে সাধুবাদ জানাই আর বিশেষ করে তিনটির একটি কিশোরগঞ্জে স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আবারো কিশোরগঞ্জ বাসীর পক্ষ থেকে সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।

আমি এখানে আরেকটা বিষয় উল্লেখ করতে চাই… তাহলো গত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে কিশোরগঞ্জের শিক্ষামন্ত্রী একটি আধুনিক পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট স্থাপন করে কিশোরগঞ্জ বাসীকে শিক্ষা ক্ষেত্রে আরো বেশী উৎসাহী হওয়ার জন্য অনুপ্রানিত করেছিলেন যার সুফল সারাজীবন প্রজন্মের পর প্রজন্ম ভোগ করবে। তাই খুব স্বাভাবিক কারনেই বর্তমান সরকারের বিভিন্ন নীতি নির্ধারনী পর্যায়ে কিশোরগঞ্জের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্তাব্যাক্তি থাকায় আপামর জনসাধারনের প্রত্যাশা ছিলো এবার বোধহয় কিশোরগঞ্জের উন্নয়ন বলতে যা বুঝায় সে রকম একটা কিছু হবে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য চোখে পড়ার মতো তেমন কোন উন্নয়ন গত আড়াই বছরে হয়েছে বলে আমার জানা নাই। তাই কিশোরগঞ্জে একটি মেডিকেল কলেজ স্থাপিত হবে এই খবরটি শুনে আমার কাছে মনে হয়েছে একটু দেরীতে হলেও আমাদের কিশোরগঞ্জের কর্তাব্যাক্তিরা বোধহয় অনুধাবন করতে পেরেছেন আল্লাহ যেহেতু ক্ষমতা দিয়েছেন, অন্তত নিজের এলাকার জন্য হলেও কিছু একটা করা দরকার। আর যদি তাই হয় তাহলে আমরা কিশোরগঞ্জের মানুষ আগামী আড়াই বছরে হয়তো মেডিকেল কলেজের মতো এরকম আরো অনেক কিছুই দেখতে পাবো। সাম্প্রতিককালে দাঙ্গায় আক্রান্ত ইংল্যান্ডের ম্যানচেষ্টার শহর থেকে সেই আসায় কিশোরগঞ্জের আপামর জনগনের মতো আমিও বুক বেধে রইলাম।

লেখক : গাজী মহিবুর রহমান, সাংবাদিক (প্রবাসবাংলা),  ম্যানচেষ্টার, যুক্তরাজ্য