কিশোরগঞ্জের রাজনৈতিক অঙ্গনে স্থবিরতা চলছে। গত তিন মাসে ইফতার অনুষ্ঠান ছাড়া প্রধান দুটি দলের কোনো কর্মকাণ্ড চোখে পড়েনি। কোন্দলের কারণে ১৪ বছরেও জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন হয়নি। অপরদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কাউন্সিল হয়েছে ১৩ বছর আগে।

বিএনপিদলীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৩ সালে কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে হাবিবুর রহমান ভূঞাকে সভাপতি ও মাসুদ হিলালীকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হয়। এ সময় সাবেক সাংসদ মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান পৃথকভাবে দলীয় কর্মকাণ্ড শুরু করেন। কোন্দলের সূচনা তখন থেকেই।

১৯৯৬ সালে মেজর (অব.) আখতারুজ্জামানকে প্রধান করে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। ১৯৯৮ সালে আবারও আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয়। ওই সময় আহ্বায়ক করা হয় সাবেক সাংসদ মুজিবুর রহমানকে। কিন্তু কোন্দল যায়নি। ২০০৫ সালে আবার নতুন কমিটি করা হয়। কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ওসমান ফারুক ও ওয়ালিউল্লাহ রাব্বানী। ওই সময়ও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি। একপর্যায়ে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। দুই পক্ষ দুভাগে বিভক্ত হয়ে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করতে থাকে। এক-এগারোর পর ওসমান ফারুক বিএনপির মূলধারার রাজনীতি থেকে সরে দাড়ান। তখন জেলা বিএনপি রাব্বানী-নির্ভর হয়ে পড়ে।

২০০৯ সালের ৮ জুন ফজলুর রহমানকে আহ্বায়ক ও ওয়ালিউল্লাহ রাব্বানীকে ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক করে ৬৭ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটিও ঠিকভাবে কাজ করতে পারেনি। ২০০৯ সালের ৩০ নভেম্বর জেলা বিএনপির সম্মেলন হয়। সেখানে কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমানের উপস্থিতিতে ফজলুর রহমানকে সভাপতি ও মাসুদ হিলালীকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি গঠিত হয়। একই দিন পুরান থানার ইসলামিয়া সুপার মার্কেট প্রাঙ্গণে আরেকটি সম্মেলন হয়। এ সম্মেলনে হাবিবুর রহমান ভূঞাকে সভাপতি ও শেখ মাসুদ ইকবালকে সাধারণ সম্পাদক করে পাল্টা কমিটি গঠন করা হয়। কেন্দ্রীয় বিএনপি এখনো কোনো কামিটিকে অনুমোদন দেয়নি।

জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান বলেন, এক-এগারোর সময় যাঁরা ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তাঁদের পরবর্তী সময়ে মূল্যায়ন করা হয়নি। তাই দলের সাধারণ নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। তিনি আরও বলেন, যাঁরা উড়ে এসে জুড়ে বসেছেন, বরাবরই তাঁদের দলে প্রাধান্য দেওয়ায় ১৪ বছরেও জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা সম্ভব হয়নি।

এসব কারণে জেলা বিএনপিতে অস্থিরতা চলছে। দলের বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হচ্ছে দুই ও ততোধিক গ্রুপে বিভক্ত হয়ে। অন্যদিকে জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতেও চলছে স্থবিরতা। দলটির জেলা কমিটির সর্বশেষ কাউন্সিল হয়েছিল ১৩ বছর আগে। সর্বশেষ কাউন্সিলে গঠিত কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে জেলা আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ড চলছে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দিয়ে। এ ছাড়া যোগ্যতা অনুযায়ী সাবেক ছাত্র ও যুবনেতারা আওয়ামী লীগে পদ না পেয়ে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতির গুরুত্বপূর্ন নেতা আবদুল হামিদ জাতীয় সংসদের স্পিকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর তাঁর শূন্যতা এবং পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন না হওয়ায় দলের রাজনীতিতে সক্রিয়তা নেই বলে মনে করা হচ্ছে।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম জেলার রাজনীতি নিয়ে মাথা না ঘামানোয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে নিষ্ক্রিয়তা বেড়েছে বলে মনে করেন অনেকে। কেন্দ্রীয়ভাবে আবদুল হামিদ ও সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মধ্যে কোনো রাজনৈতিক বিরোধ নেই। তারপরও জেলা আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের উপস্থিতি কম থাকে। কাউন্সিল প্রসঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এম এ আফজাল বলেন, শিগগিরই সম্মেলন করা হবে।

সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরীফ সাদী বলেন, দীর্ঘদিন সম্মেলন না হওয়ায় সাধারণ নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য অবিলম্বে জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা জরুরি।

সাইফুল হক মোল্লা