ভৈরবে বাংলাদেশ রেলওয়ে এবং সড়ক ও জনপথের কোটি কোটি টাকার ভূসম্পত্তি স্থানীয় প্রভাবশালীদের অবৈধ দখলে। দখলকৃত ওইসব ভূমিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো প্রকার বাধা ছাড়াই গড়ে উঠেছে কাঁচা-পাকা স্থাপনা। স্থানীয়দের অভিযোগ, রাজনৈতিক প্রভাব এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ‘বিশেষভাবে ম্যানেজ করেই চলছে এ দখল প্রক্রিয়া।
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, ভৈরব বাজার রেলওয়ে জংশন থেকে ভৈরব মেঘনা সেতু এবং ভৈরব বাজার সরকারি মালগুদাম এলএসডি পর্যন্ত রেলপথের দুই পাশের কয়েক কিলোমিটার ভূমি দখল করে অবৈধ স্থাপনা গড়ে তুলেছে একটি প্রভাবশালী মহল। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের লেজুড়বৃত্তিক বিভিন্ন সংগঠনের নামে ওইসব দখলকৃত ভূমিতে গড়ে উঠেছে স্থাপনা। একই কায়দায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পুরাতন ব্রহ্মপুত্র সেতু থেকে ভৈরব সেতু পর্যন্ত তিন কিলোমিটার সড়কের উভয় পাশ দখল করে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা।
ক্ষমতাসীন দলের লেজুড়বৃত্তিক সংগঠনের নামে এবং মূল দলের কিছু নেতাকর্মী ওই দখলদারিত্বের সঙ্গে জড়িত থাকলেও শীর্ষ নেতারা ওই অভিযোগ অস্বীকার করে এ অবৈধ দখলদারিত্বের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এর নিরসনে চেয়েছেন কার্যকরী সরকারি পদক্ষেপ। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ভৈরব উপজেলা শাখার সহ-সভাপতি মির্জা সুলাইমান এবং সাধারণ সম্পাদক আবুল মনসুর আমার দেশকে জানান, ভূমিদস্যুদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই। ওরা রাজনৈতিক সংগঠনকে ব্যবহার করে দেশ ও জনগণের অমঙ্গলে লিপ্ত থাকে। তাই তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা নিলে আমাদের দল এবং আমরা প্রশাসনকে সর্বাত্মক সহায়তা দেব। তারা অবিলম্বে অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে দখলদাররা নিজেদের মতো করে ভিন্ন ভিন্ন মত তুলে ধরে বলেছেন, সরকার চাইলে তারা দখলকৃত ভূমি ছেড়ে দেবেন। তবে কেউ কেউ বলেছেন, যদি লিজ দেয় সরকার, তারা লিজের জন্য আবেদন করবেন। রেলওয়ের ভূমি দখল করে মুক্তিযোদ্ধা যুব কমান্ড, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ইত্যাদি সংগঠনের কার্যালয় গড়ে তোলা এমআর সোহেল সেন জানান, রেলওয়ের ভূমিতে আমি কোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলিনি। তাছাড়া রেলওয়ে যদি দখলকৃত ভূমি লিজ দেয়, তবে আমি লিজ নিতে প্রস্তুত।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভৈরব বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের ভূমি অবৈধভাবে দখল করে ‘মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ মার্কেট’ গড়ে তোলেন হাজী আবদুল লতিফ মোল্লা। তিনি জানান, জনসম্মুখে এ মার্কেট গড়ে তুললেও তিনি সড়ক বিভাগ কর্তৃক কোনো বাধার মুখোমুখি অথবা মার্কেট করার পর উচ্ছেদের কোনো নোটিশ পাননি।
রেলওয়ের ভূমির অবৈধ দখল বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ে, ভৈরবঘাটের সহকারী প্রকৌশলী বক্তব্য দিতে অস্বীকৃতি জানান। ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (ভৌত) মো. ফজলুল হক জানান, রেলওয়ের জমি লিজ দেয়ার দায়িত্ব এবং দেখভাল এ বিভাগের নয়, এর জন্য সংশ্লিষ্ট আলাদা বিভাগ (স্ট্রেট বিভাগ) রয়েছে। তাই জমির বৈধ-অবৈধ দখলদারদের বিষয়টি নিয়ে প্রকৌশল বিভাগের কিছু বলার এবং করার নেই।
ভৈরব সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. অহিদুজ্জামান জানান, ভৈরবে দুই থেকে আড়াইশ’ অবৈধ দখলদার এ বিভাগের ভূমিতে স্থাপনা গড়ে তুলেছে। তাদের উচ্ছেদের নোটিশ দেয়া সত্ত্বেও তারা কার্যকর করছে না। এ বিষয়ে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে ম্যাজিস্ট্রেট ও প্রয়োজনীয় ফোর্স চাওয়া হয়েছে। তা পাওয়া গেলেই অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মো. মোস্তাফিজুর রহমান আমিন ভৈরব