জীববৈচিত্র্য ও মাছের প্রজনন রক্ষায় দেশের বৃহত্তম হাকালুকি হাওরের সব জলমহালকে ‘স্থায়ী অভয়াশ্রম’ করার উদ্যোগ চলছে।ইতিমধ্যে হাওরের পাঁচটি জলমহাল নতুন করে ইজারা না দিতে ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে হাওরের বেশির ভাগ জলমহাল নিয়ে মামলা-মোকদ্দমা থাকায় এ উদ্যোগের বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশাসনের কর্মকর্তারা বিপাকে পড়েছেন।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, জুড়ী, বড়লেখা এবং সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জ উপজেলা জুড়ে বিস্তৃত হাকালুকি হাওরের আয়তন প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর। এটি দেশের সর্ববৃহৎ হাওর। এখানে ছোট-বড় প্রায় ২০০টি জলমহাল আছে। এসব জলমহাল (বিল) প্রতি তিন বছর পরপর ইজারা দেওয়া হয়।

সূত্র জানায়, শুষ্ক মৌসুমে সেচযন্ত্রের মাধ্যমে বিলের পানি সেচে এবং বর্ষায় ভাসান পানিতে অবাধে নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার করে মা ও পোনা মাছ শিকার করা হয়। এ ছাড়া অনেক ইজারাদার শর্ত ভঙ্গ করে প্রতিবছর মাছ শিকার করেন। এসব কারণে হাকালুকিতে মাছের প্রজনন হুমকির মুখে পড়েছে। ইতিমধ্যে এ হাওর থেকে বাচা, রিটা, গজার, লাল বাইন, মধু পাবদা, রানী, তারা বাইনসহ প্রায় ৩৯ প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এ অবস্থায় সরকার ১৯৯৯ সালে হাকালুকিকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করে।

সূত্র জানায়, হাওরের জীববৈচিত্র্য ও মাছের প্রজনন রক্ষায় প্রাথমিক উদ্যোগ হিসেবে ভূমি মন্ত্রণালয় গত বছর হাওরের বড়লেখা উপজেলার বাইয়া, তোলার, পলোভাঙা, উত্তর-দক্ষিণ গুজুয়া ও রঞ্চি জলমহাল নতুন করে ইজারা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এর মধ্যে বাইয়ার আয়তন প্রায় ১৫০ দশমিক ৪৫, তোলারের ৩৯৫ দশমিক ৭৫, পলোভাঙার ৬৫, উত্তর-দক্ষিণ গুজুয়ার ১১২ দশমিক ৭৫ এবং রঞ্চি বিলের আয়তন প্রায় ২২৪ একর।

বড়লেখা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আজিবুর রহমান বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে  জানান, পাঁচটি জলমহাল থেকে এখন আর কেউ মাছ শিকার করতে পারবে না। পরিবেশ অধিদপ্তরের সদ্যবিলুপ্ত উপকূলীয় ও জলাভূমি জীববৈচিত্র্য ব্যবস্থাপনাপ্রকল্পের(সিডব্লিউবিএমপি) বন্য প্রাণী সংরক্ষণ কর্মকর্তা বশির আহমেদ বলেন, ‘শীত মৌসুমে হাওরে পরিযায়ী পাখিরা ভিড় জমায়। জলাশয়ের ছোট ছোট মাছ, শামুক, ঝিনুক ও পোকামাকড় পাখিদের প্রিয় খাবার। কিন্তু ওই সময়টাতে বেশির ভাগ বিলে পানি সেচে মাছ শিকারের কারণে পাখিরা খাবার পায় না। তাই পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় গত বছরের শুমারিতে হাওরে পাখির সংখ্যা কম দেখা গেছে। স্থায়ী অভয়াশ্রম কার্যকর হলে পাখিদের সংখ্যা বাড়বে।’

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বায়োলজি অ্যান্ড জেনেটিক্স বিভাগের অধ্যাপক মোস্তফা আলী রেজা হোসেন  বলেন, ‘বাংলাদেশে মাছের প্রজনন রক্ষায় যত রকমের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, এর মধ্যে স্থায়ী অভয়াশ্রম ব্যবস্থাটি সর্বোত্তম। হাওরপারের মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের লোকজনকে এ বিষয়ে সচেতন করতে হবে।’

মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মোস্তাফিজুর রহমান গতকাল শুক্রবার বলেন, ‘ভূমি মন্ত্রণালয় হাকালুকির সব জলমহালকে মাছের স্থায়ী অভয়াশ্রম করার উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু হাওরের বেশ কিছু জলমহাল নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা-মোকদ্দমা আছে। তবে এলাকার লোকজনের আন্তরিকতা থাকলে এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা খুব কঠিন হবে না বলে আমি মনে করি।’

-Prthom Alo