গোপন ব্যালটে ভোট গ্রহণ করে কেন্দ্রীয় নেতারা চলে যাওয়ার ১০ মাস পর আন্দোলন ও ক্ষোভের মুখে কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের আংশিক আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। ১০ মার্চ কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক বিল্লাল হোসেন স্বাক্ষরিত এক বার্তায় এ কমিটি গঠনের বিষয়ে চিঠি আসে। কিন্তু অছাত্র ও বিবাহিত নেতাদের নিয়ে এ কমিটি গঠন করায় ছাত্রদলের একটি অংশ তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। তারা ১১ ও ১৫ মার্চ সংবাদ সম্মেলন ও সমাবেশ করে এ কমিটি প্রত্যাখ্যান করেছে।
এদিকে ছাত্রদলের নতুন এই আহ্বায়ক কমিটির (আংশিক) নেতাদের নিয়ে তাঁদের সমর্থকেরা ১৫ মার্চ মোটরসাইকেল ও মাইক্রোবাস শোভাযাত্রা সহকারে ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জ আসেন। কিশোরগঞ্জে আসার সময় কটিয়াদীতে পুলিশ তাঁদের বাধা দেয়। এ সময় পুলিশ লাঠিপেটা করলে কয়েকজন আহত হন।
জেলা ছাত্রদল ও অন্যান্য সূত্রে জানা গেছে, ১০ মার্চ বিকেলে ছাত্রদলের একাংশের নেতারা সংবাদ পান তারিকউজ্জামাকে আহ্বায়ক এবং মো. মনিরুজ্জামান, আবু নাসের, ফয়েজ উল্লাহ আল মামুন, মাশরুর আহমেদ, সাজ্জাদ হোসেন, মোকাম্মেল হক, রাফিউল করিম ও শাকিলুর রহমানকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে জেলা ছাত্রদলের নতুন আহ্বায়ক কমিটি (আংশিক) গঠন করা হয়েছে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে ছাত্রদলের সাধারণ নেতা-কর্মীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে এর প্রতিবাদে শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করার উদ্যোগ নেন। কিন্তু পুলিশের বাধায় তাঁরা এসব কর্মসূচি পালন করতে পারেননি।
১১ মার্চ ছাত্রদল রক্ষা কমিটির ব্যানারে ছাত্রদলের একাংশের নেতারা কিশোরগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে গঠিত কমিটি প্রত্যাখ্যান করেন। এতে সাবেক কমিটির সহসভাপতি হাবিবুল গণি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান, মাসুদ আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত নেতারা বলেন, ১০ মার্চ অছাত্র তারিকউজ্জামানকে আহ্বায়ক করে ৯ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কতিপয় অছাত্র দিয়ে এ কমিটি গঠন করায় এই কমিটি প্রত্যাখ্যান করা হচ্ছে। এ সময় লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়, ১০ মাস আগে কেন্দ্রীয় সভাপতির উপস্থিতিতে সম্মেলনে কাউন্সিলরদের গোপন ভোটের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করার কথা। ওই সময় কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে কাউন্সিলররা ভোটও দিয়েছিলেন। কিন্তু নেতারা ভোট গণণা না করেই ব্যালট বাক্স ঢাকায় নিয়ে যান। এর ১০ মাস পর অছাত্র ও বিবাহিতদের দিয়ে কমিটি গঠন করে দলীয় কোন্দলকে উসকে দেওয়া হয়েছে। তাঁরা অভিযোগ করেন, কিশোরগঞ্জে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থাকার পরও ঠিকাদার ও অছাত্রদের নিয়ে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ছাত্রদলের আন্দোলনরত নেতা-কর্মীরা অভিযোগ করেন, নতুন আহ্বায়ক কমিটির সভাপতি তারিকউজ্জামান এবং যুগ্ম সম্পাদক মো. মনিরুজ্জামান, আবু নাসের, ফয়েজ উল্লাহ, মাশরুর আহমেদ অছাত্র। এ ছাড়া সাজ্জাদ হোসেন, মোকাম্মেল হক, রাফিউল করিম ও শাকিলুর রহমান—এঁরা সবাই বিবাহিত ও অছাত্র।
ছাত্রদলের একটি অংশ ১৫ মার্চ ছাত্রদল রক্ষা কমিটির ব্যানারে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। ছাত্রদলের জেলা কমিটির সাবেক সহসভাপতি হাবিবুল গণিসহ আট নেতার স্বাক্ষর করা ওই বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, দুঃসময়ে ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে অছাত্র, ব্যবসায়ী ও বিবাহিত নেতাদের নিয়ে গঠিত কমিটি তাঁরা প্রত্যাখ্যান করেছেন। অবিলম্বে এ কমিটি বাতিল করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে হবে। নতুন আহ্বায়ক কমিটির (আংশিক) আহ্বায়ক তারিকউজ্জামান বলেন, কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিনি আহ্বায়ক হয়েছেন। এখন ছাত্রদলের সব নেতা-কর্মীর তাঁকে মেনে নেওয়া উচিত।