ক্লাস থেকে বের হওয়ার সময় গায়ে ধাক্কা লাগায় নবম শ্রেণীর মেধাবী ছাত্রকে জুটাপেটা করেছে সহপাঠী এক ছাত্রী। বিষয়টি মীমাংসাও করে দেয় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ছাত্রীর ভাই ও তার এক সহযোগী কদিন পরে ওই ছাত্রকে রড দিয়ে পিটিয়েছে, ছুরি দিয়ে খুঁচিয়ে তার ডান চোখ উৎপাটনের চেষ্টা করেছে। গত শনিবার কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার কটিয়াদী ডিগ্রি কলেজ মাঠে নৃশংস এ ঘটনা ঘটে।আহত আবদুল মালেক (১৫) বর্তমানে কিশোরগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সে উপজেলার আচমিতা জর্জ ইনস্টিটিউশনের বিজ্ঞান বিভাগের নবম শ্রেণীর ছাত্র। তার রোল নম্বর দুই। বাবা মো. আসাদ মিয়া উপজেলার গণেরগাঁও গ্রামের বাসিন্দা। আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় শিক্ষকেরা তাকে বিনা মূল্যে পড়ান।

কটিয়াদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবদুল মোক্তাদির ভূঁইয়া বলেন, ‘মালেকের ডান চোখের অবস্থা ভালো নয়। আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বলা যাবে, চোখটি রাখা যাবে কি না।’প্রত্যক্ষদর্শী ও আচমিতা জর্জ ইনস্টিটিউশন সূত্রে জানা যায়, ১৪ নভেম্বর বিদ্যালয়ের কক্ষ থেকে বের হওয়ার সময় মালেকের সঙ্গে তাঁর সহপাঠী এক ছাত্রীর ধাক্কা লাগে। ওই ছাত্রী ক্ষুব্ধ হয়ে মালেককে জুতাপেটা করে। বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ব্যবস্থাপনা কমিটি তাৎক্ষণিক জরুরি সভা ডেকে বিষয়টি মীমাংসা করে দেয়। ওই ছাত্রী বাসায় গিয়ে বিষয়টি পরিবারের সদস্যদের জানায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত শনিবার সকালে কটিয়াদী ডিগ্রি কলেজ মাঠসংলগ্ন বদিউল আলম ওরফে মাহফুজ মাস্টারের বাসায় পড়তে যায় মালেক। সকাল ১০টার দিকে কলেজের মাঠে এলে মেয়েটির ভাই ভিটাদিয়া গ্রামের সাদ্দাম হোসেন (২৫) ও তাঁর এক বন্ধু মালেককে ধরে রড দিয়ে বেধড়ক পেটান। মালেক মাটিতে লুটিয়ে পড়লে সাদ্দাম তার বুকের ওপর উঠে ছুরি দিয়ে ডান চোখ খুঁচিয়ে উৎপাটনের চেষ্টা করে। মালেকের চিৎকারে আশপাশের লোকজন ও শিক্ষক বদিউল আলম ছুটে এসে তাকে উদ্ধার করেন। পালিয়ে যান সাদ্দাম ও তাঁর সহযোগী। গুরুতর অবস্থায় মালেককে প্রথমে কটিয়াদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে অবস্থার অবনতি হলে ওই দিনই তাকে কিশোরগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

মালেকের চাচা রেনু মিয়া গতকাল সোমবার রাতে সাদ্দাম ও তাঁর বাবা জালাল উদ্দীনকে আসামি করে কটিয়াদী থানায় মামলা করেছেন। তবে ঘটনার দুই দিন পেরিয়ে গেলেও পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।মালেকের বাবা মো. আসাদ মিয়া বলেন, ‘আমরা গরিব হওয়ায় আমার ছেলের ওপর এই বর্বর নির্যাতন করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই।’হামলাকারী সাদ্দাম ও তাঁর সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন মালেকের শিক্ষক ও সহপাঠীরা। শিক্ষক বদিউল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রকাশ্যে একজন মেধাবী ছাত্রকে রড দিয়ে পেটানো এবং চোখ উৎপাটনের চেষ্টা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’

আচমিতা জর্জ ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক মো. আলাউদ্দিন বলেন, আবদুল মালেক ছাত্র হিসেবে খুবই মেধাবী। তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে তার চোখ উৎপাটনের চেষ্টা দুঃখজনক। তা ছাড়া বিষয়টি বিদ্যালয়ে জরুরি সভা ডেকে মীমাংসাও করা হয়েছিল।প্রধান শিক্ষক জানান, মালেকের পরিবারের আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় বিদ্যালয় ও স্থানীয় ব্যক্তিদের সহযোগিতায় তার চিকিৎসা করা হচ্ছে।বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও কটিয়াদী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আলী আকবর হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পুলিশের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।

কটিয়াদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করা উপপরিদর্শক (এসআই) মনসুর আহাম্মেদ বলেন, আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।অভিযুক্ত সাদ্দাম ও তার পরিবারের সদস্যরা ঘটনার পর থেকে পলাতক থাকায় তাদের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। তবে সাদ্দামের চাচা ও আচমিতা জর্জ ইনস্টিটিউশনের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য হেলাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ভাতিজা যে কাজ করেছে, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। তিনিও এ ঘটনার বিচার চান।

-Prothom Alo