কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর পৌরসভা ও লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ পৌর শহরে গত রোববার রাতে সহিংসতায় মেয়র ও কাউন্সিলর পদপ্রার্থীসহ কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, কুলিয়ারচর পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি-সমর্থিত কাউন্সিলর পদপ্রার্থী আবদুল্লাহ কাজল গত রোববার রাত সাড়ে আটটার দিকে গণসংযোগে শহরের আশ্রপপুর এলাকার এক ব্যক্তির বাড়িতে যান। এ সময় ৬০ থেকে ৭০ জন তাঁকে ধরে একটি কক্ষে নিয়ে তিন ঘণ্টা আটকে রেখে তাঁর ওপর নির্যাতন চালায়। এই ঘটনার সূত্র ধরে একই দিন একই পক্ষের হামলায় মেয়র পদপ্রার্থী বর্তমান মেয়র নুরুল মিল্লাতসহ আরও ১১ জন আহত হন।

নির্যাতনের শিকার আবদুল্লাহ কাজল বলেন, ‘গণসংযোগকালে আমি দলীয় মেয়র পদপ্রার্থী নুরুল মিল্লাতের পক্ষেও প্রচারণা চালাচ্ছিলাম। বিষয়টি আওয়ামী লীগ-সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থী আবুল হাসানের লোকজন মেনে নিতে পারেননি। এই কারণে আমাকে ধরে মুসা মিয়ার মালিকাধীন কুলিয়ারচর কোল্ড স্টোরেজে নিয়ে মারধর করে।’ বিএনপি-সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থী নুরুল মিল্লাত বলেন, ‘আবদুল্লাহ কাজল আমাদের দলের সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করছেন। বর্তমানেও তিনি কাউন্সিলর। তাঁকে ধরে নিয়ে নির্যাতন চালানোর কথা জেনে আমরা বাসস্ট্যান্ডের একটি ক্লাবে জড়ো হই। রাত নয়টার দিকে আবুল হাসানের ছোট ভাই আবুল মুনসুরের নেতৃত্বে একদল লোক এসে আমার ওপর হামলা চালায়। ওই হামলায় আমি, আমার ছেলে নুরুল ইসরাত, পৌর যুবদলের আহ্বায়ক আ. লতিফ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক সোহেল আরমানসহ ১০-১২ জন আহত হন। এই অবস্থায় কুলিয়ারচরে সুস্থ নির্বাচনী পরিবেশ নেই।’

অভিযোগ অস্বীকার করে আবুল মুনসুর বলেন, ‘কুলিয়াচরে হামলা ও মারধরের ঘটনা ঘটেছে সত্য। তবে এ ঘটনার সঙ্গে আমি প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষাভাবেও জড়িত নই। ১ জানুয়ারি আমি বিদেশ থেকে দেশে ফিরেছি। আর কুলিয়ারচরে এসেছি সোমবার দুপুরে।’ কুলিয়ারচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুব্রত কুমার সাহা বলেন, ‘রাত পৌনে ১০টার দিকে আবদুল্লাহ কাজলকে আমরা ডাকবাংলো এলাকায় পাই। দেখে তিনি আমাদের কাছে নিরাপত্তা চান। আমরা তাঁকে নিয়ে থানায় চলে আসি।’

রোববার রাত আটটার দিকে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ পৌরসভার কমরদিয়া গ্রামে বিএনপি-সমর্থিত কাউন্সিলর পদপ্রার্থী ইব্রাহীম মজুমদারের নির্বাচনী গণসংযোগে স্থানীয় সাংসদ উপস্থিত হয়ে প্রচারণা চালানোর জন্য নেতা-কর্মীরা প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এ সময় একই ওয়ার্ডে ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর প্রস্তুতির জন্য ছাত্রলীগের কর্মীরা ক্যাম্পেইন করতে গেলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষে উপজেলা ছাত্রলীগের নেতা রাকিবুল হাছান মাসুদ আহত হন। এরপর রাত নয়টায় মুখোশ পরিহিত দুষ্কৃতকারীরা সিনেমা হলসংলগ্ন চায়ের দোকানে বসা বিএনপি-সমর্থিত ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদপ্রার্থী আশরাফোদৌলাকে পিটিয়ে আহত করে এবং পরে কমরদিয়া ইব্রাহীম মজুমদারের দোকান ও বাড়িতে হামলায় চালায়।

এ ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল সোমবার রামগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যালয়ে এবং স্থানীয় সাংসদ নাজিম উদ্দিন আহমেদ তাঁর বাসভবনে সাংবাদিক সম্মেলন করে পরস্পরকে দোষারোপ করেন।

– প্রথম আলো