বাংলা একাডেমীর সবুজ চত্বরে তিনি এসেছেন বহুবার। একুশে বইমেলায় এসেছেন, সেমিনারে প্রবন্ধ পড়তে বা বক্তৃতা দিতে এসেছেন, এসেছেন নানা বইয়ের সম্পাদনার কাজে একাডেমীর বটতলায় তরুণদের সঙ্গে আড্ডা দিয়েছেন, ঘুরে বেড়িয়েছেন কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে গতকাল সোমবারও আবদুল মান্নান সৈয়দ এসেছিলেন এখানে। কিন্তু ছিলেন নীরব। এসেছিলেন শুভ্র কাফনে আবৃত হয়ে।

বন্ধু-সহপাঠী, স্বজন-শুভানুধ্যায়ী আর নবীন-প্রবীণ লেখক-সাংবাদিকেরা তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে সিক্ত নয়নে সমবেত হয়েছিলেন একাডেমী প্রাঙ্গণে।বিশিষ্ট কবি-কথাশিল্পী-সমালোচক, বাংলা একাডেমীর ফেলো আবদুল মান্নান সৈয়দ হূদরোগে আক্রান্ত হয়ে ৫ সেপ্টেম্বর রোববার সন্ধ্যায় গ্রিন রোডের বাসায় মৃত্যুবরণ করেন। সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তাঁর মরদেহ গতকাল সকালে বাংলা একাডেমীর নজরুল মঞ্চে রাখা হয়।

দুপুর ১২টায় একাডেমী প্রাঙ্গণে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ চত্বরে দ্বিতীয় দফা জানাজা শেষে তাঁকে অন্তিম শয্যায় শায়িত করা হয় আজিমপুর গোরস্থানে।

সকাল সাড়ে ১০টায় কবির মরদেহ বাংলা একাডেমীতে আনা হয়। তাঁর মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান কবি, কথাশিল্পী, নাট্যজন, সংস্কৃতিকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ। তাঁদের মধ্যে ছিলেন সৈয়দ শামসুল হক, রফিকুল ইসলাম, আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, মনিরুজ্জামান, এখলাসউদ্দিন আহমদ, সংস্কৃতিসচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, বেলাল চৌধুরী, আসাদ চৌধুরী, শামসুজ্জামান খান, রামেন্দু মজুমদার, আতাউর রহমান, রশীদ হায়দার, সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, আনোয়ারা সৈয়দ হক, খিলখিল কাজী, কপিরাইট রেজিস্ট্রার মনজুরুর রহমান প্রমুখ।

কবি ও কথাশিল্পী সৈয়দ শামসুল হক বলেন, বাংলা সাহিত্যে মান্নান সৈয়দের বড় বেশি প্রয়োজন ছিল। বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান বলেন, বিশ শতকের ষাটের দশকে বাংলা সাহিত্যের যে নবধারা সৃষ্টি হয়, তার অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রতিনিধি ছিলেন আবদুল মান্নান সৈয়দ। কবিতায় তিনি এনেছিলেন পরাবাস্তববাদী চেতনায় এক নান্দনিক বৈভব।

কবি বেলাল চৌধুরী বলেন, এই দেশে এত পরিশ্রমী লেখক খুব কম আছে। হেন বিষয় নেই যা তিনি লেখেননি। তিনি সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় সব ধরনের নিরীক্ষার চেষ্টা করেছেন। তাঁর মৃত্যুতে বাংলা সাহিত্যের যে ক্ষতি হলো, তা পূরণ হওয়ার নয়।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক: রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশিষ্ট কবি ও গবেষক আবদুল মান্নান সৈয়দের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। সোমবার পৃথক শোকবাণীতে তাঁরা কবির বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন।

১৭ সেপ্টেম্বর নাগরিক শোকসভা: বাংলা একাডেমী কবি আবদুল মান্নান সৈয়দের স্মরণে ১৭ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বিকেল চারটায় একাডেমী প্রাঙ্গণে নাগরিক শোকসভার আয়োজন করেছে। এ ছাড়া বাংলা একাডেমী প্রকাশিত মাসিক উত্তরাধিকার-এর পরবর্তী সংখ্যা আবদুল মান্নান সৈয়দ স্মরণসংখ্যা হিসেবে প্রকাশিত হবে বলে জানান একাডেমীর উপপরিচালক, জনসংযোগ কর্মকর্তা মুর্শিদুদ্দিন আহম্মদ।