কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার কারপাশা ইউনিয়নের পুঁতিপাড়া গ্রামের তাসলিমা (২৮) আর্সেনিকোসিসে আক্রান্ত। তাঁর সাত বছরের ছেলে রুবেলও একই রোগে আক্রান্ত। চিকিৎসকেরা আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিলেও তাঁদের ভয় কাটছে না কিছুতেই। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, দুই বছর আগে এ উপজেলায় আর্সেনিকোসিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ২০। এখন তা বেড়ে ৮৫-তে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছ থেকে পাওয়া প্রাথমিক জরিপে এ তথ্য জানা গেছে। সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি আর্সেনিক রয়েছে এমন নলকূপের পানি পান করায় লোকজন এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

জানা গেছে, শুধু কারপাশা ইউনিয়নেই এ রোগে আক্রান্ত ২২ জন রোগী রয়েছে। তাদের মধ্যে পুঁতিপাড়া গ্রামের তাসলিমা ও রুবেলসহ এজেনা বেগম (৩১), দিনা বেগম (২৪), অমৃতা (২৭), খুদিজা (৬০), হুসনে আরা (২০), রন্তা (৩০), রমজান আলী (৭০), রুবিনা (১৪), আবদুল আহাদ (৩৮), বকুল (২৯), নূরজাহান (৩৭), রুবিনা (১৪), ফুল মামুদ (৫) আর্সেনিকোসিসে আক্রান্ত। একই ইউনিয়নের ফাজিপাড়া গ্রামে আছে আরও সাতজন রোগী। এসব রোগীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা ১৫টি নলকূপের পানি পান করেন। ওই ১৫টি নলকূপের মধ্যে ১৪টিতেই মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক ধরা পড়েছে। এসব নলকূপের গায়ে ‘লাল চিহ্ন’ দেওয়া হয়েছিল। কিছুদিন ওই সব নলকূপের পানি কেউ পান করেনি। তবে চিহ্ন মুছে যাওয়ার পর এলাকার মানুষের মন থেকেও যেন মুছে গেছে ওই সতর্কতা।

কারপাশা ইউনিয়নের স্বাস্থ্য সহকারী মো. মশিউর রহমান ভূঞা ও সিংপুর ইউনিয়নের স্বাস্থ্য সহকারী ইমাম হোসেন বলেন, নলকূপে লাল চিহ্ন দেওয়ার কিছুদিনের মধ্যে রং মুছে যায়। এরপর মানুষ আগের মতোই ওই সব নলকূপের পানি পান করতে শুরু করে। উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, আর্সেনিক মিটিগেশন ওয়াটার সাপ্লাই প্রকল্পের আওতায় ২০০৩ সালে নিকলীর মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিকযুক্ত নলকূপগুলো চিহ্নিত করা হয়। উপজেলার সবচেয়ে বেশি আর্সেনিকপীড়িত এলাকা হলো কারপাশা ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের ৪৬৭টি নলকূপের মধ্যে ৩৪৬টির পানিতেই মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক রয়েছে। তা ছাড়া নিকলী সদর ইউনিয়নে ২৫৬টি, সিংপুরে ১০০, দামপাড়ায় ১৬৭, জারইতলায় ১২০, গুরই ও ছাতির চর ইউনিয়নে ১২৬টি নলকূপে সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি আর্সেনিক পাওয়া গেছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম বলেন, নিকলীতে আর্সেনিকোসিস রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। তবে কারপাশা ও দামপাড়া ইউনিয়নের আর্সেনিকোসিসের ভয়াবহতা বেশি। তিনি জানান, সরকারিভাবে ওষুধের সরবরাহ না থাকায় এসব রোগীকে সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। নিকলীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফজলুর রহমান বলেন, এক ইউনিয়নে ২২ জন আর্সেনিকোসিসে আক্রান্ত হওয়ার খবরটি পীড়াদায়ক। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে সহযোগিতা করার ব্যাপারে চিন্তা করা হচ্ছে।

-Prothom Alo