দেশের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ও সাফ গেমসের সোনাজয়ী অ্যাথলেট মাহবুব আলমের লাশ পরশু শনিবার রাতে কিশোরগঞ্জ স্টেডিয়ামে নিয়ে আসার পর হাজার হাজার মানুষ তাঁকে একনজর দেখতে ভিড় জমায়। প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে ফুলের তোড়া দিয়ে শ্রদ্ধা জানান জেলা প্রশাসক মো. সিদ্দিকুর রহমান, পুলিশ সুপার মীর রেজাউল আলম, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক এম এ বারী খান প্রমুখ। এ সময় শত শত মানুষের কান্নায় বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। পরে স্টেডিয়াম মাঠে রাত সাড়ে নয়টায় তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

জানাজার পর মাইকে ঘোষণা করা হয়, গতকাল (রোববার) কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদে শেষ জানাজার পর তাঁকে হয়বতনগর কবরস্থানে দাফন করা হবে। এদিকে কিশোরগঞ্জ স্টেডিয়ামে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার আসার পর মাহবুব আলমের মা হালিমা খাতুন, বোন মাহমুদা বেগম, স্ত্রী স্বপ্না বেগম ও স্ত্রীর বড় ভাই মো. মুখলেছুর রহমান লাশের ময়নাতদন্তের জন্য দাবি জানান। তাঁরা আহাজারি করে বলতে থাকেন, ‘মাহবুবকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। গাড়িতে কতজন ছিল তা আমাদের জানা নেই। তা ছাড়া লাশ রাস্তায় রেখে গাড়ির অন্যরা কেন-ই বা চলে গেল’! এসব প্রশ্নের জবাব মিললে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার তাঁদের সংশ্লিষ্ট থানা ও প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পরামর্শ দেন।

শনিবার রাতে স্টেডিয়ামে শেষ জানাজা হবে—এমন ঘোষণা দেওয়ার পরও পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত হয় থানায় মামলা ও লাশের ময়নাতদন্ত না হওয়া পর্যন্ত দাফন করা হবে না। ফলে গতকাল পাগলা মসজিদে হাজার হাজার মানুষ জানাজা পড়তে গিয়ে ফিরে আসে। বর্তমানে মাহবুবের লাশ বাড়ির সামনের মাঠে রাখা হয়েছে। সেখানে অসংখ্য মানুষ তাঁকে দেখে ফিরে যাচ্ছে।কাল সকালে মা হালিমা খাতুন, বোন মাহমুদা বেগম, স্ত্রী স্বপ্না বেগমসহ আত্মীয়স্বজন নারায়ণগঞ্জ হাইওয়ে থানায় মামলা করতে যান। ঘটনাস্থল বন্দর থানা হওয়ায় পরবর্তী সময়ে এজাহার লিখে সন্ধ্যায় বন্দর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। মাহবুবের স্ত্রী স্বপ্না বেগম বাদী হয়ে অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের সদস্য ও কমলাপুর স্টেডিয়ামের প্রশাসক মো. ইয়াহিয়া ও শাহ আলমের নাম উল্লেখ করে আরও অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে বন্দর থানায় একটি মামলা করেছেন।

গতকাল বিকেলে কিশোরগঞ্জের সর্বস্তরের মানুষ মাহবুবের অকালমৃত্যুতে শহরে এক বিশাল শোকযাত্রা বের করে। শোকযাত্রাটি সারা শহর প্রদক্ষিণ করে হারুয়া এলাকায় গিয়ে শেষ হয়। শোকযাত্রায় মাহবুবের মৃত্যুর প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটনের দাবি ওঠে।নারায়ণগঞ্জ বন্দর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে জানান, এ ব্যাপারে ফৌজদারি কার্যবিধির ৩০৪(ক) ১০৯/৩৪ ধারায় (দুর্ঘটনা ঘটিয়ে হত্যা) একটি মামলা করা হয়েছে। তদন্ত করে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্বপ্না বেগমের বড় ভাই মুখলেছুর রহমান জানান, ইয়াহিয়া ও মাহবুব একই গাড়িতে থাকলেও দুর্ঘটনার পর ইয়াহিয়া দ্রুত পালিয়ে আসেন। অথচ ওই গাড়িতে মাহবুবের লাশ ছিল, চালক ছিল অচেতন অবস্থায়। সঙ্গীদের ও নিজের মালিকানাধীন গাড়ি (হাইএইস, ঢাকা মেট্রো-চ-১১-৩৫৮১) ফেলে রেখে এসে ইয়াহিয়া নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছেন। মুখলেছ আরও জানান, শনিবার সকালে তিনি ও তাঁর পরিবার মাহবুবের মৃত্যুর খবর পেয়ে কিশোরগঞ্জ থেকে দ্রুত নারায়ণগঞ্জ ছুটে আসেন। এ সময় মাহবুবের ময়নাতদন্তের জন্য উপস্থিত ফেডারেশন কর্মকর্তা ও অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম চেঙ্গিসকে অনুরোধ করেন। কিন্তু তাঁরা উল্টো ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ নিয়ে যাওয়ার জন্য পরিবারকে চাপ দেন। এ নিয়ে নারায়ণগঞ্জ শহরের মাসদাইর এলাকায় নিহতের পরিবারের সঙ্গে ফেডারেশন কর্মকর্তাদের বাগিবতণ্ডা হয়।

মামলার অন্যতম আসামি বাংলাদেশ অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম জানান, তিনি কোনোভাবেই মাহবুবের এ দুর্ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। শনিবার সকালে তিনি মাহবুবের মৃত্যুর খবর শুনেছেন। তাঁকে মামলার আসামি করাটা দুঃখজনক।

-prothom Alo