হঠাৎ দেখলে মনে হবে যমজ শিশু দুটি ঘুমিয়ে আছে। যে কোনো সময় জেগে উঠে দুষ্টুমিতে ভরিয়ে তুলবে মায়ের মন। কিন্তু না, পাষণ্ড বাবা ঘুমন্ত শিশু দুটিকে শ্বাস রোধে হত্যার পর লাশ বাড়ির পাশের পুকুরে ফেলে রাখে। সকালে পুকুর থেকে ৯ মাস বয়সী দুই যমজ শিশু সীমান্ত ও শিমুর ভাসমান লাশ উদ্ধার করেন মা সালমা বেগম। গতকাল
মঙ্গলবার সিদ্ধিরগঞ্জের কদমতলীর দক্ষিণপাড়া নোয়াব আলী মিয়ার বাড়িতে সোমবার রাতের কোনো এক সময় মর্মস্পশী ওই ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর দু’সন্তানকে হত্যার অভিযোগে সন্তান হন্তারক বাবা আবুল কাশেমকে (৩৪) এলাকাবাসীর সহায়তায় গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে সে সন্তান হত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে। ওই সময় তাকে বেশ শান্ত ও স্বাভাবিক দেখাচ্ছিল। তাকে দেখতে সিদ্ধিরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার নারী-পুরুষ থানায় ভিড় করে।
শিশু সীমান্ত ও শিমুর মা গার্মেন্টকর্মী সালমা বেগম জানান, কাশেম গাজীপুরের একটি গার্মেন্টে কাজ করে। গত রোববার সে বাড়িতে আসে। সোমবার রাতে বিদ্যুৎ না থাকায় বাচ্চা দুটি ঘুমাতে চাইছিল না। রাত ১টায় শিশু দুটি ঘুমিয়ে পড়লে সালমাও স্বামীকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। ভোরে কাশেমের ডাকে সালমার ঘুম ভাঙলে তিনি দেখতে পান বিছানায় বাচ্চা দুটি নেই এবং ঘরের দরজা খোলা। সালমা পাশের ঘরে থাকা তার মা সাজু বেগমকে দরজা খোলা কেন এবং বাচ্চা দুটি কোথায় তা জানতে চান। এক পর্যায়ে প্রতিবেশী এক মহিলা বাচ্চা দুটি পুকুরে ভাসছে বলে সালমাকে জানান। সালমা পুকুর থেকে ভাসমান অবস্থায় সীমান্ত ও শিমুকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করেন। ওই সময় কাশেম নির্বিকার অবস্থায় বিছানায় শুয়ে ছিল। সালমা বেগম জানায়, সাবি্বর নামে ৪ বছর বয়সী আরেকটি সন্তান রয়েছে তার। ঘটনার রাতে সে পাশের রুমে তার মামা নোয়াব ও নানির সঙ্গে ঘুমিয়ে ছিল।
৮ মাস পর বাড়ি ফিরেই খুন : সামলা বেগম জানান, কাশেম ৮ মাস পর বাড়ি আসে গত রোববার। এর আগে একদিন বাড়ি এলেও বেশি সময় ছিল না। কাশেম তার ৩ সন্তানের ভরণ-পোষণ দিত না বলে তিনি জানান। এর মধ্যে ৬ মাস আগে কাশেমের মোবাইলে ফোন করলে অপরিচিত এক লোক ফোন ধরে জানায়, কাশেম গাজীপুরে আরেকটি বিয়ে করেছে। এ ঘটনা জানার পর থেকে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্কের আরো অবনতি ঘটে।
হত্যার নেপথ্য কারণ : সালমা বেগম জানান, ২০০৫ সালের ২৩ জানুয়ারি ভালোবেসে তারা বিয়ে করেন। ওই সময় কাশেম কাঁচপুরের নিউ ঢাকা গার্মেন্ট এবং সালমা সিনহা গার্মেন্টে কাজ করতেন। কিছুদিন পরই কাশেম চাকরি ছেড়ে দিয়ে সালমাকে ফেলে গাজীপুরে চাকরি নেয়। পরে কাশেমের এক আত্মীয়ের মাধ্যমে তাকে ফিরিয়ে আনেন। সীমান্ত ও শিমু গর্ভে এলে সালমাকে কাশেম তার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের কদমপুর গ্রামের বাড়িতে রেখে আসে। সেখানে যৌতুকের জন্য শাশুড়ি পিরু বেগম এবং ননদ তানিয়া তার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালায়। এক পর্যায়ে নির্যাতন থেকে বাঁচতে কাশেমের মায়ের কাছে ৫০ হাজার টাকা যৌতুক দেওয়া হয়। যমজ দুই সন্তানের জন্মের পর কাশেম সিদ্ধিরগঞ্জ আসা প্রায় ছেড়েই দেয়। এর মধ্যে গাজীপুরে সে দ্বিতীয় বিয়ে করে। পথের কাটা সরাতে এবং স্ত্রীকে শায়েস্তা করতেই ৮ মাস পর বাড়িতে এসে দুই সন্তানকে হত্যা করেছে বলে সালমার দাবি।
পুলিশের কাছে যাওয়ার ধমক দেওয়াই কাল : সালমা জানান, তার ও সন্তানদের ভরণ-পোষণ না দেওয়ায় কিছুদিন আগে তিনি কাশেমের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করার কথা বলেন। ওই সময় কাশেম তাকে বলেছিল, ‘আমার কাছে অনেক মেয়ে টাকা দিয়ে বিয়ে বসতে রাজি আছে। তোকে আমার দরকার নেই।’ তিনি জানান, বর্তমানে সে আদমজী ইপিজেডের ডিএনবি গার্মেন্টে কাজ করে।
গতকাল বিকেলে এ ঘটনায় শিশু দুটির মা সালমা বেগম বাদী হয়ে সন্তান হত্যার অভিযোগ এনে স্বামী আবুল কাশেমকে আসামি করে মামলা করেন। সিদ্ধিরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ বদরুল আলম জানান, শিশু দুটির লাশ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসার পরই কীভাবে শিশু দুটিকে হত্যা করা হয়েছে, তা জানা যাবে।