ড্রাগনফলের  ইংরেজী নাম: Dragon fruit; বৈজ্ঞানিক নাম: Hylocereus undatus – এরউৎপত্তিস্থল সেট্রাল আমেরিকা। সেন্ট্রাল আমেরিকাতে এ ফলটি প্রবর্তন করা হয়এয়োদশ শতাব্দীতে। দণি এশিয়া বিশেষ করে মালেশিয়াতে এ ফলের প্রবর্তন করা হয়বিংশ শতাব্দীর শেষে। তবে ভিয়েতনামে এ ফল সর্বাধিক বাণিজ্যিকভাবে চাষ করাহয়। তবে বর্তমানে এ ফলটি মেঙিকো, সেন্ট্রাল ও দণি আমেরিকা, দক্ষিণ-পূর্বএশিয়া, দণি চীন, ইসরাইল, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ বাংলাদেশেওচাষ করা হচ্ছে। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত অনেকগুলো বিদেশী ফল প্রর্বতন করাহচ্ছে। তার মধ্যে এ্যাভোকেডো, ম্যাঙ্গোঁস্টিন, স্ট্রবেরী, কিউই,রাম্বুটান, লংগান, ল্যাংসাট, ব্রেড ফ্রুট, জাবাটিকাবা, শান্তল, পীচফল,ফ্রুট এবং ডুরিয়ান অন্যতম। এদের মধ্যে কিউই ও  ডুরিয়ান ছাড়া প্রায় সব ফলইএদেশে কমবেশী হচ্ছে এবং কোন কোনটা থেকে আশানুরূপ ফলন পাওয়া যাচ্ছে। যাদেখে অনেকে এসব ফলের বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ করার চিন্তা-ভাবনা করছে। লকরা যাচ্ছে যে , এদেশের অনেক জায়গাতেই বিশেষ করে উত্তর বঙ্গ ও ময়মনসিংহেবাণিজ্যিকভাবে স্ট্রবেরী চাষ করা হচ্ছে। এছাড়া বিদেশী ফলগুলোর মধ্যেড্রাগন ফলের চাষ সম্ভাবনাময়। গবেষকরা মনে করেছেন অচিরেই এ ফলটি এদেশেবাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ করা সম্ভব হবে। বাংলাদেশে এ ফল ২০০৭ সালে প্রথমপ্রবর্তন করে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাউ জার্মপ্লাজম সেন্টার। এসেন্টারের পরিচালক প্রফেসর ড. এম. এ রহিম এ ফলের জাত নিয়ে আসেনথাইল্যান্ড, ফোরিডা ও ভিয়েতনাম থেকে। এখন এ সেন্টার থেকে এ ফলটিবাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য বংশ বিস্তার করা হচ্ছে।

পুষ্টি মূল্যঃ
সবধরনের ডায়েটের জন্য এ ফলটি উপযুক্ত। এ ফল শরীরের জন ফাইবার সরবারহ করে যাপেটের পীড়া এবং লিভার এর জন্য উত্তম। খাবারের পর ডেজার্ট হিসাবে পূর্ব ওদণিপূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে এ ফল খাওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। এ ফলটি প্রচুরপরিমানে ভিটামিন সি, মিনারেল এবং উচ্চ ফাইবার যুক্ত। জুস তৈরিতে জন্যওফলটি অত্যন্ত উপযোগী। প্রতি ১০০ গ্রাম ফলে ফাইবার ০.৯ গ্রাম, ফ্যাট ০.৬১গ্রাম, এ্যাশ ০.৬৮ গ্রাম, ক্যারোটিন ০.০১২ গ্রাম, পানি ৮৩.০ গ্রাম, ফসফরাস৩৬.১ মি. গ্রাম, এসকোরবিক এসিড ৯.০ মি. গ্রাম, প্রোটিন ০.২২৯ গ্রাম,রিবোফাবিন ০.০৪৫ মি. গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৮.৮ গ্রাম, নায়াসিন ০.৪৩০ মি.গ্রাম, ও আয়রন ০.৬৫ মি. গ্রাম থাকে। খাদ্যমানের প্রাচুর্যের জন্য হয়তোব এফল উৎপাদনকারী দেশগুলোতে প্রতিবেলার খাবারের সাথে এ ফল না থাকলে যেন তাদেরকাওয়া অপূর্ণ থেকে যায়। ড্রাগন ফল দেখতে অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও মনোমুগ্ধকর।এমন কথা প্রচলিত আছে যে, একটি তাজা ফল খেয়ে মানব শরীরকে সতেজ ও সুস্থ রাখাযায়। যে সমস্ত মানুষ ডায়াবেটিক রোগে ভোগেন তারা এ ফল খেয়ে শরীরের রক্তেরগ্লুকোজকে সহজেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। ফ্রেশ ফলের চেয়ে শুষ্ক ফল বেশকার্যকরী। এ ফল সালাদের সাথেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

রাতের রাণি ড্রাগন ফুলঃ
ড্রাগনফল ক্যাকটাস গোত্রের একটি ফল। গাছ দেখে সবাই  একে চির সবুজ  ক্যাকটাস বলেইমনে করেন। এশিয়ার মানুষের কাছে এ ফল অনেক জনপ্রিয়, হালকা মিষ্টি-মিষ্টি। এফলকে ড্রাগন ফল ছাড়াও পিটাইয়া, টিহায়া ইত্যাদিও নামে ডাকা হয়। ড্রাগন ফলগাছে শুধুমাত্র রাতে ফুল দেয়। ফুল লম্বাটে সাদা ও হলুদ, অনেকটা ‘নাইটকুইন’ ফুলের মত। এ কারণে ড্রাগন ফুলকে ‘রাতের রাণি’ নামে অভিহিত করা হয়েথাকে। ড্রাগন ফলের গাছ লতানো ইউফোরবিয়া গোত্রের ক্যাকটাসের মত কিন্তু এরকোন পাতা নেই। ফুল স্বপরাগায়িত; তবে মাছি, মৌমাছি ও পোকা-মাকড় এর পরাগায়নত্বরান্বিত করে এবং কৃত্রিম পরাগায়নও করা যেতে পারে।

জলবায়ু ও মাটিঃ
এফলটির জন্য শুষ্ক ট্রপিক্যাল জলবায়ু প্রয়োজন। মধ্যম বৃষ্টিপাত এ ফলের জন্যভালো। উপযুক্ত বৃষ্টিপাত ৬০০-১৩০০ মি.মি. ও তাপমাত্রা ৩৮-৪০ড় সে। অতিরিক্তবৃষ্টিপাতে ফুল ঝরে পরে এবং ফলের পঁচন দেখা দেয়। প্রায় সব ধরনের মাটিতেইড্রাগন ফল চাষ করা যায়। তবে পানি জমে না এমন উঁচু জমিতে এ ফলটি চাষ করাভাল। উচ্চ জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ বেলে-দোঁয়াশ মাটিই এ ফল চাষের জন্য উত্তমড্রাগন ফল প্রচুর আলো পছন্দ করে।

জাতঃ
বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সফলভাবে চাষ করার জন্য
বাউ ড্রাগন ফল -১ (সাদা)
বাউ ড্রাগন ফল -২ (লাল)
নির্বাচন করা যেতে পারে। এছাড়া হলুদ ড্রাগন ফল, কালচে লাল ড্রাগন ফল চাষ করা যেতে পারে

রোপন ও সার ব্যবস্থাপনাঃ
জমিভালভাবে চাষ করে গাছ থেকে গাছের দুরত্ব ৩ মি. এবং সারি থেকে সারির দূরত্ব৩মি. দিয়ে হেঙাগোনাল পদ্ধতি ব্যবহার করে এ গাছ লাগানো উত্তম। তবে অবস্থাভেদে দূরত্ব কম বা বেশি দেওয়া যেতে পারে। ড্রাগন  ফলের চারা রোপনের জন্য২০-৩০ দিন আগে প্রতি গত্যে ৪০ কেজি পচা গোবর, ৫০গ্রাম ইউরিয়া, টিএসপি ওএমপি ১০০ গ্রাম করে এবঙ জিমসাম, বোরাঙ ও জিঙ্ক সালফেট ১০ গ্রাম করে দিয়ে,গর্তের মাটি উপরে-নীচে ভালোভাবে মিশিয়ে রেখে দিতে হবে। সার দেওয়ার ২০-৩০দিন পরে গাছ লাগানো যাবে। এরপর প্রতি বছরে প্রতি গাছের জন্য ৪০ কেজি পচাগোবর ঠিক রেখে ইউরিয়া ৫০গ্রাম, টিএসপি ও এমটি ১০০ গ্রাম এবঙ জিমসাম, বোরাঙও জিঙ্ক সালফেট ১০ গ্রাম করে বৃদ্ধিহারে প্রয়োগ করতে হবে। ক্যাকটাসগোত্রের গাছ বিধায় বছরের যে কোন সময়ই লাগানো যায় তবে এপ্রিল-সেপ্টেম্বরমাসের মধ্যে লাগানো ভাল। কাটিংকৃত কলম প্রতি গর্তে ৪-৫ টি করে লাগানো হয়।এক্ষেতের যদি ভিয়েতনাম পদ্ধতি অনুসরন করা হয় তাহলে পিলারের চারদিকেকাটিংকৃত কলম চারা লাগিয়ে পিলারের সাথে বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু যদিথাইল্যান্ড ও ফোরিডা পদ্ধতি অনুসরন করা হয় তাহলে গর্তে সোজা করে ৪-৫ টিকলম চারা রোপন করা হয়। এ গাছ ১.৫-২.৫ মিটার লম্বা হয়। এজন্য এ গাছকে উপরেরদিকে ধরে রাখার জন্য সিমেন্টে/বাঁশের খুঁটির সাথে উপরের দিকে তুলে দেওয়াহয় (ভিয়েতনাম সিস্টেম)। এছাড়া উপরের দিকে ছোট মোটর গাড়ীর (মাইক্রোবাস,প্রাইভেটকার) চাকা বাঁশের চ্যাগারের মধ্যে সেট করে খুব সহজেই এ গাছের শাখাগুলোকে বাড়তে দেওয়া যায়। (শ্রীলঙ্কা সিস্টেম) । থাইল্যান্ড ও ফোরিডাতে দুইপাশে দুটি খুঁটি পুতে মোটা তারের উপরে জাংলার মত তৈরী করে গাছ জাংলায় তুলেচাষ করা হয় (ফোরিডা সিস্টেম)।

বংশ বিস্তারঃ
এফলের বংশ বিস্তার অত্যান্ত সহজ। বীজ দিয়েও বংশ বিস্তার করা যেতে পারে। তবেএতে ফল ধরতে একটু বেশি সময় লাগে। তবে হুবহু মাতৃ বৈশিষ্ট্য বজায় থাকে না। সেজন্য কাটিং এর মাধ্যমে বংশ বিস্তার করাই উত্তম। কাটিং এর সফলতার হারপ্রায় শতভাগ এবং ফলও তাড়াতাড়ি ধরে। কাটিং থেকে উৎপাদিত একটি গাছে ফল ধরতে১২-১৮ মাস সময় লাগে। সাধরণত বয়স্ক এবং শক্ত শাখা কেটে (১-১.৫ ফুট) হালকাছায়াতে বেলে দোঁআশ মাটিতে গোড়ার দিকের কাটা অংশ পুতে সহজেই চারা উৎপাদনকরা যায়। ২০ থেকে ৩০ দিন পরে কাটিং এর গোড়া থেকে  শিকর বেরিয়ে আসবে। তখনএটা মাঠে লাগানোর উপযুক্ত হবে। তবে উপযুক্ত পরিবেশ ও প্রয়োজন অনুযায়ীকাটিংকৃত কলম সরাসরি মূল জমিতে লাগানো যায়।

প্রুনিং ও ট্রেনিং
ড্রাগনফল দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং মোটা শাখা (ডগা) তৈরী করে। একটি এক বছরের গাছ ৩০টি পর্যন্ত শাখা তৈরী করতে পারে এবং ৪ বছর বয়সী একটি ড্রাগন ফলের গাছ ১৩০টি পর্যন্ত প্রশাখা তৈরী করতে পারে। তবে শাখা-প্রশাখা উৎপাদন উপযুক্তট্রেনিং ও ব্যবস্থাপনার উপর নির্ভর করে। একটি গবেষনায় দেখা গেছে যে,বাংলাদেশের প্রোপটে ১২-১৮ মাস পর একটি গাছ ফল ধারণ করে। ফল সংগ্রহের পর৪০-৫০টি প্রধান শাখাঃয় প্রত্যেকটিতে ১/২টি সেকেন্ডরী শাখা অনুমোদন করা হয়।তবে এ ক্ষেতের টারসিয়ারী ও কোর্য়াটরনারী প্রশাখা কে অনুমোদন করা হয় না ।ট্রেনিং এবং প্রুনিং এর কার্যক্রম দিনের মধ্য ভাগে করাই ভালো। ট্রেনিং ওপ্রুনিং করার পর অবশ্যই যে কোন ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করতে হবে। অন্যথায়বিভিন্ন প্রকার রোগ বালাই আক্রমন করতে পারে।

গাছ লাগানোর পর থেকে ফল ধারন পর্যায় পযর্ন্ত ড্রাগন
ফলের প্রুনিং ও ট্রেনিং এর কৌশল

সেচঃ
ড্রাগনফলে পানি খুব কম লাগে। শুষ্ক মৌসুমে অবশ্যই সেচ ও বর্ষা মৌসুমে নিষ্কাশনেরব্যবস্থা করতে হবে। এর দুই সারির মাঝখানে ৫০-১০০ সে.মি. আকারে  নালা তৈরীকরা যেতেহ পারে। এতে করে নালায় ১/২ দিন পানি জমা রেখে গাছের মাটিতে রসসরবরাহ করা যেতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে যে, এই গাছ অতিরিক্ত পানি সহ্যকরতে পারে না।

অসময় ফল উৎপাদনের কলাকৌশলঃ
বাউজার্মপ্লাজম সেন্টারে পরীক্ষামূলক চাষে দেখা গেছে যে ফল আসা শুরু হয় জুনমাসে এবং নভেম্বর মাস পর্যন্ত সংগ্রহ করা যায়। ভিয়েতনামে শীত কালে দিবসেরদৈর্ঘ্য বাড়িয়ে প্রতি চার টি গাছের জন্য একটি করে ৬০/১২০ ওয়াটের বাল্বসন্ধ্যা থেকে ৫-৬ ঘন্টা জ্বালিয়ে রেখে ফল আনা হচ্ছে। এতে সুবিধা হচ্ছে যে,চাহিদা মোতাবেক সময়ে ফল নেওয়া যায়।

রোগ বালাই ও পোকা মাকড়ঃ
এ ফলে রোগ বালাই খুবই একটা চোখে পড়ে না। তবে কখনো কখনো এ ফল গাছে মূলপচা, কান্ড ও গোড়া পঁচা রোগ দেখা যায়।

মূল পঁচাঃ
গোড়ায়অতিরিক্ত পানি জমে গেলে মূল পচে যায়। এ রোগ হলে মাটির ভিতরে গাছের মূলএকটি দুটি করে পঁচতে গাছের সমস্ত মূল পঁচে যায়। গাছকে উপরের দিকে টান দিলেমূল ছাড়া শুধু কান্ড উঠে আসে। তবে এ থেকে পরিত্রান পেতে হলে উঁচু জমিতে এফলের চাষ করা ভাল। এ রোগটি  <!–[endif]–> Fusarium sp দ্বারা সংঘটিত হয়।

কান্ড ও গোড়া পঁচা রোগঃ
ছত্রাকঅথবা ব্যাকটিরিয়া দ্বারা এ রোগ হতে পারে। এ রোগ হলে গাছের কান্ডে প্রথমেহলুদ রং এবং পরে কালো রং ধারণ করে এবং পরবতীতে ঐ অংশে পচন শুরু হয় এবংপঁচার পরিমান বাড়তে থাকে। এ রোগ দমনের জন্য যে কোন ছত্রাকনাশক (বেভিস্টিন,রিডোমিল, থিওভিট ইত্যাদি)  ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে প্রয়োগ করে সহজেইদমন করা যায়।

পোকা-মাকড়ঃ
ড্রাগনফলের জন্য তিকর পোকা-মাকড় খুব একটা চোখে পড়ে না, তবে মাঝে মাঝে এফিড ওমিলি বাগের আক্রমণ দেখা যায়। এফিডের বাচ্চা ও পূর্ণ বয়স্ক পোকা গাছের কচিশাখা ও পাতার রস চুষে খায়, ফলে আক্রান্ত গাছের কচি শাখা ও ডগার রংফ্যাকাশে হয়ে যায় ও গাছ দূর্বল হয়ে পড়ে। এ পোকা ডগার উপর আঠালো রসের মতোমল ত্যাগ করে ফলে শুটিমোল্ড নামক কালো ছত্রাক রোগের সৃষ্টি হয়।  এতে গাছেরখাদ্য তৈরি ব্যহত হয়। এতে ফুল ও ফল ধারন কমে যায়। এ পোকা দমনেসুমিথিয়ন/ডেসিস/ম্যালাথিয়ন ইত্যাদি কীটনাশক প্রতি ১০ লিটার পানিতে ২৫মি.লি./৫ক্যাপ ভালভাবে মিশিয়ে স্প্রে করে সহজেই এ রোগ দমন করা যায়।

ফলনঃ
১২-১৮বছর বয়সের একটি গাছে ৫-২০টি ফল পাওয়া যায় কিন্তু পূর্ণ বয়স্ক একটি গাছে২৫-১০০টি পর্যন্ত ফল পাওয়া যায় । হেক্টর প্রতি  ফলন ২০-২৫ টন।

ড্রাগন ফলের কিছু ছবিঃ


লিখেছেনঃ  কৃষিবিদ মো. নজরুল ইসলাম