সুন্দরবনে গোলপাতা আহরণ শুরু হতে না হতেই চাঁদাবাজরা তৎপর হয়ে উঠেছে। সমকালের লোকালয় পাতায় প্রকাশিত এ সম্পর্কিত রিপোর্টে দেখা যায়, সুন্দরবনের গোলপাতা আহরণ মৌসুমকে টার্গেট করে বনদস্যু গ্রুপগুলো চাঁদাবাজিতে নেমে পড়েছে। তারা ইতিমধ্যেই নৌকার মহাজন ও বাওয়ালিদের কাছে চাঁদার নির্ধারিত অর্থ পরিশোধের জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে খবর পাঠিয়েছে। ধার্যকৃত চাঁদা পরিশোধ না করা হলে গোলপাতা সংগ্রহে গহিন অরণ্যে গমনকারী বাওয়ালি ও তাদের মাঝিসমেত নৌকা জিম্মি করার হুমকিও দিয়েছে। ফলে গোলপাতা সংগ্রহের উদ্দেশ্যে সুন্দরবনে প্রবেশের প্রস্তুতরতদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে আতঙ্ক। অথচ বিডিংয়ের মাধ্যমে বাওয়ালিরা সুন্দরবন থেকে গোলপাতা সংগ্রহের অধিকার লাভ করেছেন। বনদস্যুদের ধার্যকৃত চাঁদার অর্থ পরিশোধ করতে গেলে গোলপাতা সংগ্রহের পর তা বিক্রিলব্ধ অর্থে তাদের জীবিকা নির্বাহের মতো লাভ থাকবে না। সুন্দরবনের বাওয়ালিরা গহিন বনে বাঘসহ নানা শ্বাপদের মুখোমুখি হয়ে তবেই না জীবিকা নির্বাহ করেন। কোনো কোনো বাওয়ালির ওপর বাঘ হামলে পড়ে এবং অনেক আহত-নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ধরনের বিপজ্জনক পেশাকে আশ্রয় করে বেঁচে থাকা ও পরিবার-পরিজনের নূ্যনতম ব্যবস্থা করার পথও কুসুমাস্তীর্ণ নয়। তারা ‘ডাঙ্গায় বাঘ জলে কুমির’ প্রবচনের মতো সাক্ষাৎ বিপদকে সঙ্গী করেই বেঁচে থাকেন। প্রশাসনের উচিত সুন্দরবন থেকে গোলপাতা আহরণকারী বাওয়ালিদের জীবন ও জীবিকাকে নিরাপদ করা। এ জন্য গহিন বনের বিপদ থেকে রক্ষার পাশাপাশি বনদস্যুদের চাঁদাবাজিমুক্ত রাখাও জরুরি। সেখানে কারা এ ধরনের চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত সেটা স্থানীয় প্রশাসন ও বনরক্ষীরা ভালোভাবেই অবগত রয়েছেন। বনদস্যুদের গডফাদাররা আবার বনে নয় লোকালয়েই ভদ্রবেশে বিচরণ করে। সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তাদের নাম ও চেহারায় পরিবর্তন ঘটে মাত্র। তাছাড়া স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে তাদের দহরম-মহরমের কথা ওপেনসিক্রেট। তাই প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন মহল সিদ্ধান্ত নিলে বনদস্যুদের দমন করা দুঃসাধ্য হবে না। বাওয়ালিরা যখন সুন্দরবন থেকে গোলপাতা সংগ্রহ করতে যাচ্ছেন তখন তাদের যেন জীবন-জীবিকা নিয়ে সংশয়ে না থাকতে হয়।