মানুষের দেহে পরীক্ষা এখনো বাকি। সেই পরীক্ষায় পাস করতে পারলে বিশ্বের প্রথম প্রতিস্থাপনযোগ্য কৃত্রিম কিডনি তৈরির কৃতিত্বের অধিকারী হবেন এক বাঙালি। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক শুভ রায়সহ ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষকের দাবি, তাঁরা এমন একটি কৃত্রিম কিডনি তৈরি করেছেন, যা শুধু রক্ত থেকে বর্জ্য পদার্থ পরিশোধনই করে না, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং ভিটামিন ডি সংশ্লেষ করার মতো গুরুত্বপূর্ণ শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায়ও সাহায্য করে। ইতিমধ্যেই ইঁদুর ও শূকরের দেহে সফলভাবে এই কৃত্রিম কিডনি প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হয়েছে।

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক শুভ রায়সহ ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষকের দাবি, তাঁরা একটি কৃত্রিম কিডনি তৈরি করেছেন

তবে সব থেকে কঠিন পরীক্ষা এখনো বাকি। মানবদেহ কীভাবে এই ‘কৃত্রিম’ অঙ্গে সাড়া দেয় তার ওপরই নির্ভর করছে এই গবেষণার ভবিষ্যৎ। গবেষকদের বক্তব্য, মানুষের দেহে এই কিডনি প্রতিস্থাপনের আগে কিছু প্রয়োজনীয় পরীক্ষা বাকি। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী পাঁচ থেকে সাত বছরের মধ্যে মানবদেহের ওপর এই ‘কৃত্রিম’ অঙ্গের পরীক্ষা করতে চান তাঁরা। সমপ্রতি ম্যাসাচুসেটসের ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে প্রকাশিত পত্রিকা ‘টেকনোলজি রিভিউ’-এ কৃত্রিম কিডনি তৈরির খবরটি প্রকাশিত হয়। শুভ রায় বলেন, ‘কিডনি প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে কিডনিদাতা সব সময় পাওয়া যায় না। চিকিৎসাটি খুবই ব্যয়সাপেক্ষ। আর প্রতিস্থাপনের সময় কিডনিদাতার দেহ থেকে সংক্রামক রোগের জীবাণু চলে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকে। সে সব সমস্যা কৃত্রিম কিডনির বেলায় হবে না।’

শুভ রায় বলেন, ‘কফি কাপের আকারের এই কৃত্রিম কিডনি শুধু বর্জ্য পদার্থ শোধনের কাজই করে না, স্বাভাবিক কিডনির মতো পরিপাকতন্ত্রের কাজ এবং হরমোনের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত কিছু কাজও করে। ডায়ালিসিসে এই কাজ হয় না।’ সিলিকনের আস্তরণ দিয়ে তৈরি এই অংশটিতে অসংখ্য সূক্ষ্ম ও সুবিন্যস্ত ছিদ্র দিয়ে এমন ব্যবস্থা করা হয়েছে যা বর্জ্য শোধনের কাজ করে। সিলিকনের আস্তরণের ওপর মানবদেহের কিডনির কোষের মতো আরো একটি আস্তরণ রাখা হয়েছে। যাতে প্রাথমিকভাবে বর্জ্য শোধনের পর তা থেকে প্রয়োজনীয় কিছু লবণ, শর্করা ও পানি একটি আলাদা অংশে জমা হবে। যেখান থেকে তা দেহ আবার শোষণ করে নিতে পারবে।

১৯৬৯ সালের ১০ নভেম্বর শুভ রায় জন্মগ্রহণ করেন চট্টগ্রামে। তাঁর বাবার নাম ডা. অশোক নাথ রায়, তিনি চট্টগ্রামের আশকারদিঘির উত্তর পাড়ের মাউন্ট হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। মা রত্না রায় গৃহিণী। দাদা নগেন্দ্র দে ছিলেন বোয়ালখালীর কানুনগোপাড়া কলেজের ইংরেজির অধ্যাপক।

বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে শুভ রায়কে ভারতীয় হিসেবে উল্লেখ করায় তিনি বেশ বিব্রত। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের ছেলে। বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশে গেছি। আমাকে কেন ভারতীয় হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে_এই নিয়ে আমি বিব্রত।’ শুভ রায় জানান, দশ বছর আগে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০ জন সহকর্মীকে নিয়ে তাঁরা কৃত্রিম কিডনি তৈরির প্রকল্প শুরু করেন। প্রাণীদেহ অর্থাৎ ইঁদুর ও শূকরের দেহে সফলভাবে এই কৃত্রিম কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। আশা করা যায়, আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যে মানবদেহে সেটি সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হবে।

সম্প্রতি ক্যালিফোর্নিয়া থেকে কলকাতায় আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে এসেছেন শুভ রায়। তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গেছেন তাঁর মা-বাবা। মা রত্না রায় বলেন, ‘দুই ভাই এক বোনের মধ্যে শুভ সবার বড়। ছোটবেলায় বাংলাদেশ থেকে শুভ আমাদের সঙ্গে আফ্রিকা মহাদেশের উগান্ডায় চলে যায়।’ চাকরি সূত্রে শুভর মা-বাবা উগান্ডায় গিয়েছিলেন। পরে তাঁরা বাংলাদেশে ফিরে আসেন। আর উচ্চশিক্ষার জন্য শুভ চলে যান আমেরিকায়। শুভ বলেন, ‘এবার সময় নেই, কলকাতায় খালার বাসা থেকে সরাসরি ক্যালিফোর্নিয়া চলে যাব। আগামী বছর বাংলাদেশে আসব।’

সুত্রঃ thebengalitimes.ca