আমরা অনেকেই একটু সমস্যাতেই নিজেকে সামলাতে না পেরে ঘাবড়িয়ে যাই। একেবারেই যেন হাল ছেড়ে দেবার অবস্থা। বাঁচার জন্য শেষ চেষ্টাটুকু সম্পন্ন হওয়ার আগেই মানসিক ভাবে এতটাই দূর্বল হয়ে পড়ি, মনে হয় এই বুঝি এবার সাঙ্গ হবে জীবনের সকল খেলা। ঘুরে দাড়ানোর স্বপ্নটুকুও দেখতে সাহস পাই না। বিষন্নতার কালো ছায়া গ্রাস করে আমাদের হৃদয়াকাশে। আত্মবিশ্বাসে ধরা ঘুন স্বপ্ন দেখায় বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। পৃথিবীর সকল মায়াও আমাদের বেঁচে থাকার ইচ্ছাশক্তিকে সমুন্নত রাখতে পারে না। এদিকে রানা প্লাজার ধ্বংস স্তুপ থেকে দুইদিন আটকে থাকার পরও বেঁচে যায় পোষাক শ্রমিক আন্না খাতুন (১৩), কিন্তু বিনিময়ে হারাতে হয় তার ডান হাতটি। তবুও থেমে থাকেনি আন্না। কিন্তু বিধি বাম।

সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ পড়ে জানতে পারলাম, হঠাৎ সে ঘর থেকে বের হতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে পড়ে যায়। সেই চিকিৎসা সূত্রেই ধরা পড়ে ঘাতক ব্যাধি ক্যানসার। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন এখন চিকিৎসার স্বার্থেই তার ডান পা টি কোমর থেকেই কেটে ফেলতে হবে। তা না হলে এর সংক্রমণ সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়বে। সে বর্তমানে রাজধানীর মহাখালীর ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের তিন তলার মহিলা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। এটি শোনার পরও আন্না বাঁচতে চায়! জীবন সংগ্রামের এই কঠিন পর্বে এসে কি জয়ী হতে পারবে আন্না? বা জয়ী হলেই বাকী জীবনটুকু কিভাবে কাটবে তার? চিন্তা করলে উত্তর খুঁজে পাই না। কিন্তু এত প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েও আন্নারা ঠিকই স্বপ্ন দেখে বাচাঁর। বিধাতা কি আন্নার সেই আকুল ইচ্ছাটুকু পূরণ করবেন? নাকি অদম্য ইচ্ছা থাকা স্বত্ত্বেও আন্নার জীবন প্রদীপটুকু অকালেই নিভে যাবে চিরতরে? খুব আশার কথা, ক্যান্সার ধরা পড়ার পর থেকেই তার চিকিৎসার্থে সহযোগিতার হাতটুকু বাড়িয়ে দিয়েছেন তৈরি পোষাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর।

এই আন্নারা বাস্তবজীবনে হয়তো অনেক গরীব। সুস্থ্য হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ-বিত্ত কোনটাই নেই এঁদের। তবুও এঁদের থেকে এ সমাজ ও সমাজের মানুষগুলোর অনেক কিছু শেখার আছে। কারণ এই আন্নাদের অদম্য ইচ্ছাশক্তির প্রভাব বর্তমান সমাজ জীবনে খুব অভাব। হতাশা আর জীবনের প্রতিকূলতার ভাবনাগুলো প্রতিনিয়তই মানুষকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। তাই বিধাতার কাছে অদম্য আর বেঁচে থাকার প্রাণান্ত ইচ্ছাশক্তির প্রতিক আন্নারা বেঁচে থাকুক সকলের ভালবাসা আর সহযোগিতার মূর্ত প্রতিক হয়ে, এ আমার আকুল প্রার্থনা।

লিখেছেনঃ সুমিত বণিক, প্রোগ্রাম ম্যানেজার
লায়ন মোখলেছুর রহমান ফাউন্ডেশন ,কুমিল্লা।
[email protected]