রংপুর চিড়িয়াখানায় বাঘ ও সিংহকে গরুর মাংসের বদলে দেওয়া হচ্ছে ব্রয়লার মুরগি। এতে করে প্রাণীগুলো দিনদিনই দুর্বল হয়ে পড়ছে। প্রায় সময়ই থাকছে অসুস্থ। শর্ত ভঙ্গ করে ঠিকাদাররা গরুর বদলে ব্রয়লার মুরগি দিচ্ছে। অযত্ন আর অবহেলায় মাত্র ৬ মাসের ব্যবধানে এ চিড়িয়াখানার একমাত্র চিতা বাঘ ও অলিভ বেবুন মারা গেছে। সিংহ ও রয়েল বেঙ্গল টাইগারের অবস্থাও ভালো নয়। যে কোনো সময় এসব মূল্যবান প্রাণীর জীবন প্রদীপ নিভে যেতে পারে। বাঘ দিবসেও বাঘের প্রতি নেওয়া হয়নি আলাদা যত্ন।
চিড়িয়াখানা সূত্রে জানা গেছে, দরপত্রে চিড়িয়াখানায় বাঘ-সিংহসহ মাংসাশী প্রাণীকে গরুর মাংস দেওয়ার কথা রয়েছে। ঠিকাদার চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে প্রায় সময়ই অসুস্থ ও বয়স্ক ব্রয়লার মুরগির মাংস সরবরাহ করছে। অনেক সময় বাঘ ও সিংহ ব্রয়লার মুরগি মুখে দিতে চায় না। দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর একমাত্র চিতা বাঘটি গত ২৭ জানুয়ারি মারা গেছে। যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয়ে অলিভ বেবুনটিও মারা যায় গত ১৭ মার্চ। অবশ্য চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ বলেছে, বার্ধক্যের কারণেই এসব প্রাণী মারা গেছে। চিকিৎসার কমতি ছিল না। চিড়িয়াখানায় অসুস্থ হয়ে পড়েছে দুটি ভারতীয় সিংহ ও দুটি রয়েল বেঙ্গল টাইগারও। সিংহ দুটি সারাক্ষণ খাঁচার মধ্যে চুপচাপ শুয়ে-বসে থাকে। তেমন একটা চলাফেরা করে না। সিংহ দুটির পায়ে এবং শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ঘা হয়েছে। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় লোম উঠে গেছে। একই অবস্থা হয়েছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার দুটিরও। তারা মাঝেমধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। চিড়িয়াখানার ওয়াটার বাক, চিত্রা হরিণ, জলহস্তী, ডোরাকাটা হায়েনা, ভালুকটিও বয়সের ভারে নড়াচড়া করতে পারছে না।

এর আগে গত আগস্টে ঢাকা চিড়িয়াখানা থেকে রংপুর চিড়িয়াখানায় একটি ওয়াটার বাক নিয়ে আসা হলেও সেটিকে একদিনও বাঁচিয়ে রাখা যায়নি। চিড়িয়াখানার গেটেই সেটি মারা যায়। এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটির রিপোর্টে বলা হয়েছে, ট্রাকে করে নিয়ে আসার পথে রংপুরে এসে ওয়াটার বাকটির ফুসফুস ফেটে যায়। এ কারণেই সেটি মারা গেছে। এসব প্রাণী ছাড়াও অন্য পশু-পাখির খাঁচাগুলো নোংরা দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।

এ ব্যাপারে রংপুর চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর ডা. গোলাম রসুল সমকালকে জানান, শুনেছি চিতা বাঘটি বয়সের কারণে মারা গেছে। অলিভ বেবুনটি মারা গেছে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে। এখন বয়সের ভারে কাবু হয়ে পড়েছে সিংহ, রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ অন্য কয়েকটি প্রাণী। চিকিৎসা সেবাও দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, চিড়িয়াখানায় নেই কোনো পশু হাসপাতাল, লোকবলও রয়েছে কম। এছাড়া চিড়িয়াখানা সংস্কারে কোনো অর্থ বরাদ্দ না থাকায় খাঁচাগুলো পুরনো হলেও ঠিকঠাক করা যাচ্ছে না। তিনি দাবি করেন, তার যোগদানের পর থেকে কোনো ব্রয়লার মুরগি দেওয়া হচ্ছে না। -সমকাল