কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে শনিবার রাত আটটার দিকে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে (৫৫) আটক করেছে। এর আগে গতকাল সকালে ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী শিক্ষকের বসতবাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।

মেয়েটির পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করে বলেন, গত বুধবার সকালে বিদ্যালয়ে যাওয়ার পর সাড়ে নয়টার দিকে প্রধান শিক্ষক মেয়েটিকে ডেকে পানি দিতে বলেন। শিক্ষকের কথামতো মেয়েটি নলকূপ থেকে পানি এনে দেয়। পরে শিক্ষক নিজ কক্ষে মেয়েটিকে ধর্ষণ করেন। মেয়েটি চিৎকার শুরু করলে তিনি ভয়ভীতি দেখান। পরে সে বাড়িতে গিয়ে বাবা-মাকে ঘটনা জানায়। বুধবারই মেয়েটিকে কুলিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়।

ধর্ষণের ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর শুক্রবার রাতে ওই বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির নেতৃত্বে সমাজপতিরা বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য মেয়েটির বাবাকে চাপ দিতে থাকেন। এতে মেয়েটির বাবা রাজি হননি। পরে এলাকায় একটি সালিস বৈঠক ডাকা হয়। সালিসে প্রধান শিক্ষককে অভিযুক্ত করে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। কিন্তু মেয়েটির বাবা সাফ জানিয়ে দেন, মেয়েকে নির্যাতনের ঘটনা তিনি টাকার বিনিময়ে নিষ্পত্তি করবেন না। গতকাল সকালে মেয়ের বাবা গ্রামের লোকজনকে ঘটনা জানিয়ে প্রতিকার চান। গ্রামবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে মিছিল বের করেন।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শিক্ষকের বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়ে বসতঘর পুড়িয়ে দেয় গ্রামবাসী। প্রধান শিক্ষক অভিযোগ অস্বীকার করে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি মেয়েটিকে পানি এনে দিতে বলেছি সত্য। অন্য কিছু করিনি। গ্রামবাসী সুযোগ বুঝে আমার বাড়িতে আগুন ধরিয়ে লুটপাট করে।’

বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি বলেন, ‘আমার ধারণা, ষড়যন্ত্র করে প্রধান শিক্ষককে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।’  যৌন নিপীড়নের শিকার শিশুটির মা বাদী হয়ে প্রধান শিক্ষককে একমাত্র আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছেন।

অপরদিকে বাড়িঘর পোড়ানোর অভিযোগে মামলা করেন প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী। এই মামলায় শিশুটির বাবাসহ ১২ জনকে আসামি করা হয়েছে।
সহকারী পুলিশ সুপার (বাজিতপুর সার্কেল) এন এম নাসির উদ্দিন প্রধান শিক্ষকের বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ও মামলার ব্যপারটি নিশ্চিত করেছেন।