সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে নিয়ে কিশোরগঞ্জের মেডিল্যাব হেলথ সেন্টারে এক চিকিত্সকের কাছে এসেছিলেন করিমগঞ্জের টামনি নয়াপাড়া গ্রামের মজিবুর রহমান। চিকিত্সক ব্যবস্থাপত্র দিয়ে রোগীকে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু কোথায় ভর্তি হতে হবে সে সম্পর্কে কোনো নির্দেশনা ব্যবস্থাপত্রে লিখেননি তিনি। গত রোববার ওই চিকিত্সকের কাছ থেকে যাওয়ার পথে প্রসূতি জাহানারা বেগমের (৩৬) অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে কিশোরগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগের চিকিত্সকেরা জামশেদ খানের ব্যবস্থাপত্র দেখে হতবাক হয়ে পড়েন। ব্যবস্থাপত্রে ওই চিকিত্সক লিখেছেন, জাহানারার শরীরের ‘পালস’ পাওয়া যাচ্ছে না। তাঁর অবস্থা সংকটাপন্ন। এ জন্য রোগীকে পুরোমাত্রায় খাবার গ্রহণ করতে হবে। তিনি ব্যবস্থাপত্রে রোগীকে পাঁচটি ইনজেকশন দিতে বলেছেন। যার কোনোটিই এই রোগীর জন্য প্রযোজ্য নয় বলে সদর হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগের চিকিত্সকেরা জানিয়েছেন। কিশোরগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগের চিকিত্সক তাসনীম আরা জানান, ওই চিকিত্সক যে ব্যবস্থাপত্র দিয়েছেন, তা রোগীর জন্য নেতিবাচক ফল বয়ে আনতে পারত। গত সোমবার অস্ত্রোপচার সফল হওয়ায় ভাগ্যক্রমে ওই রোগী বেঁচে গেছেন। হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগের প্রধান সুফিয়া খাতুন ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞ শশাংক কুমার সূত্রধর বলেন, ‘জাহানারার মতো সংকটাপন্ন রোগীর চিকিৎসা যেভাবে দেওয়া হয়েছে, তা নৈতিকতাবিরোধী। ভুল চিকিৎসা চিকিত্সকদের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন করে।’ জানা গেছে, জামশেদ খান একজন বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক। তাঁর কর্মস্থল বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ। তিনি ওই কলেজের সহযোগী অধ্যাপক। তিনি নিজেকে ওই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লিভার বিভাগের প্রধান দাবি করেন (রোগীর দেওয়া ব্যবস্থাপত্রে তা-ই লেখা আছে)। শুধু তা-ই নয়, কর্মস্থল বরিশাল হওয়া সত্ত্বেও সপ্তাহে পাঁচ দিন তিনি কিশোরগঞ্জে রোগী দেখেন। চিকিত্সক জামশেদ খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ছয় মাসের ছুটিতে আছেন বলে দাবি করেন। এক বছর ধরে সপ্তাহে পাঁচ দিন আপনি কিশোরগঞ্জে রোগী কীভাবে দেখছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি চুপ করে থাকেন। প্রসূতি চিকিত্সক না হয়েও একজন প্রসূতিকে ভুল চিকিৎসা দেন কীভাবে? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি সব ধরনের রোগী দেখতে পারি। রোগীর অবস্থা খারাপ বলেই ভর্তি হতে লিখেছি। কোথায় ভর্তি হবে, তা লিখিনি।’

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ), কিশোরগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক নৌশাদ খান বলেন, ‘রোগী রেফার্ড করলে অবশ্যই চিকিত্সক বা হাসপাতালের নাম লিখতে হবে।’ ওই চিকিত্সক দেড় বছর ধরে কিশোরগঞ্জে রোগী দেখেন বলে জানান তিনি। বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ আবরার আহাম্মেদ বলেন, ‘জামশেদ খান ছুটিতে আছেন, এটা মিথ্যা কথা। তিনি অন্যত্র রোগী দেখেন বলে শুনেছি। তা ছাড়া তিনি লিভার বিভাগের বিভাগীয় প্রধান নন, ওই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। অভিযোগ পেলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’