বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান ও দ্রুত উন্নয়নশীল দেশ। প্রতিবছর গ্রীস্ম ও শীত মৌসুমে প্রচুর পরিমাণে শাকসব্জি ও ফলমূল উৎপন্ন হয়। তবে বিদু্যতের স্বল্পতার কারণে এবং কোল্ড স্টোরেজ স্থাপন অত্যন্ত ব্যয় সাপেক্ষ হওয়ায় দেশের অধিকাংশ অঞ্চলে শাকসব্জি সংরক্ষণে অসুবিধা হয়। এই কারণে গ্রামাঞ্চলে কৃষকেরা শাকসব্জি ও ফলমূল ক্ষেত থেকে উঠানোর পর অতি দ্রুত বিক্রি করতে বাধ্য হয়। আর এই সুযোগে মধ্যস্বত্বভোগীরা কৃষকদের কাছ থেকে নামমাত্র মূল্যে শাকসব্জি ও ফলমূল কিনে নেয় এবং পরে সেই শাকসব্জি ও ফলমূল চড়া দামে বিক্রি করে। অপরদিকে শহরাঞ্চলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এই সব শাকসব্জি ও ফলমূল কয়েকদিন সতেজ রাখার জন্য ঘন ঘন পানি ব্যবহার করেন। কিন্তু দেখা গেছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা এই পানি অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ থেকে সংগ্রহ করেন।

বাংলাদেশ থেকে থাইল্যান্ড, ভারত ও চীন অর্থনৈতিক অবকাঠামো ও জ্বালানী ব্যবহারের দিক থেকে অনেক উন্নত হলেও ওইসব দেশে দীর্ঘদিন ধরে গ্রামাঞ্চলে শাকসব্জি-ফলমূল সংরক্ষণ করে রাখার জন্য বিদু্যতের ব্যবহার ছাড়াই বিশেষ এক উপায়ে অবকাঠামো তৈরি করে তাতে শাকসব্জি,ফলমূল এমনকি ফুল কয়েকদিন পর্যন্ত সতেজ অবস্থায় সংরক্ষণ করে রাখা হয়।

প্রাকৃতিক পরিবেশে প্রথমে ৯০ সেন্টিমিটার গভীর গর্ত করে ইট দিয়ে আয়তকার (দৈঘর্্য ১৬৫ সেন্টিমিটার ও প্রস্থ ১১৫ সেন্টিমিটার) একটি মেঝে তৈরী করতে হবে। মেঝের চারপাশে তৈরী করতে হবে দুই স্তর দেয়াল। স্তর দুটির মধ্যে পাঁচ ইঞ্চি ফাঁকা থাকবে। ফাঁকা স্থানটি ছোট ছোট পাথরের টুকরো ও মাটি দিয়ে ভরাট করতে হবে। অবশিষ্ট ফাঁকা স্থানটুকু নদীর ভেজা বালু দিয়ে পূর্ণ করে দিতে হবে। চেম্বার ঢেকে রাখতে ব্যবহার করতে হবে বাঁশের তৈরী ঢাকনা এরপর শুকনো খড় অথবা গোলপাতা দিয়ে কক্ষটির চারপাশে একটি দোচালা ছাউনি বানাতে হবে, যাতে সূর্যের আলো সরাসরি পড়তে না পারে।

 এরপর দুই দেয়ালের মাঝে রাখা বালিতে নির্দিষ্ট পরিমাণে ফোঁটায় ফোঁটায় পানি দিতে হবে। এ কাজে কক্ষ থেকে সামান্য উঁচু স্থানে একটি ঢাকনাযুক্ত ড্রাম রাখতে হবে। ওই ড্রামের সঙ্গে যুক্ত পাইপের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ে পানি সরবরাহ করতে হবে। এতে দুই দেয়ালের মাঝের বালি সব সময় ভেজা থাকবে। ওই বালি বাইরের তাপ ভেতরে ঢুকতে দেবে না, আবার ভেতরের তাপ বাইরেও আসতে দেবে না। কক্ষের ভেতরের ও বাইরের তাপমাত্রায় প্রায় ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো পার্থক্য থাকে। কক্ষের আদ্রতাও থাকে বেশি।

ফলে শাকসবজি ও ফলমূল অনেকদিন সতেজ থাকে।বাংলাদেশে শীতলীকরণ চেম্বার গ্রীস্মকালীন শাকসব্জি ও ফল সংরক্ষণের জন্য উপযোগী।ঢেঁড়শ, বেগুন, মরিচ, পটল, টমেটো, করলা ও সাজনা সংরক্ষনের সময়কাল ৮ দিন থেকে ১০ দিন পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব হয় । এখানে উল্লেখ্য, এ ধরনের একটি শীতলীকরণ চেম্বার তৈরি করতে প্রায় ৬০০০ টাকার মত লাগে এবং এটাতে ২০০ কেজির বেশী শাকসব্জি ও ফলমূল সংরক্ষণ করে রাখা যায়। প্রতিটি কক্ষের স্থয়িত্বকাল কমপক্ষে পাঁচ বছর।  এ পদ্ধতিতে দেশীয় ফুলও সংরক্ষন করা যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। উক্ত প্রযুক্তটি বাংলাদেশের গ্রামীন কৃষক পর্যায়ে এবং বাজারে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য অত্যন্ত উপযোগী হবে বলে ধারনা করা হচ্ছে।

-বিজ্ঞানী.কম