টানা ভারী বর্ষণ এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে হাকালুকি হাওর উপচে সম্প্রতি মৌলভীবাজারের জুড়ী, কুলাউড়া ও বড়লেখা এবং সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জ উপজেলার হাওর-তীরবর্তী প্রায় ৫৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে কয়েক হাজার একর জমির বোরো ধানের খেত। জুড়ী নদীর নাব্যতা হ্রাস ও এর শাখা-নদীর মোহনায় বাঁধ নির্মাণের কারণে এলাকায় দীর্ঘ জলাবদ্ধতার আশঙ্কা করছে স্থানীয় লোকজন।
এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ধর্মনগর এলাকা থেকে জুড়ী নদী উৎপন্ন হয়ে জুড়ী উপজেলার কয়েকটি গ্রাম ও হাকালুকি হাওর হয়ে ফেঞ্চুগঞ্জের কুশিয়ারা নদীতে গিয়ে মিলিত হয়েছে। ফেঞ্চুগঞ্জের বুড়িকোয়ারি বিলের কাছে নদীটি ভাগ হয়ে আরেকটি শাখার মাধ্যমে কুশিয়ারায় মিশেছে।
পলিতে ভরাট হয়ে যাওয়ায় জুড়ী নদীর নাব্যতা কমে গেছে। এ ছাড়া এটির শাখা-নদী দিয়ে আসা পাহাড়ি ঢলে ফেঞ্চুগঞ্জের পিটাইটুক গ্রামে ভাঙন দেখা দেওয়ায় ২০০৪ সালের দিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সিলেট কার্যালয় নদীর মোহনায় বুড়িকোয়ারি বিলে প্রায় ৫০০ ফুট দীর্ঘ একটি উঁচু মাটির বাঁধ নির্মাণ করে।
কৃষক সমিতির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ও কুলাউড়ার ভূকশিমইল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিন আহমদ অভিযোগ করেন, জুড়ীর মূল ও শাখা-নদী দিয়েই হাকালুকি হাওরে জমা হওয়া ঢলের পানি কুশিয়ারা নদীতে নিষ্কাশিত হতো। কিন্তু পিটাইটুকে বাঁধ নির্মাণ করায় পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ ছাড়া মূল নদীর মোহনার কাছে স্থাপিত দুটি ইটভাটার খোয়া নদীতে ফেলায় পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, গত এপ্রিলে তিন দফা পাহাড়ি ঢলে হাওরপাড়ের পাঁচ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের হাজার হাজার একর বোরো ধানের খেত তলিয়ে গেছে। এখন মানুষ পানিবন্দী। আগামী আশ্বিন-কার্তিকের আগে জলাবদ্ধতা কাটবে কি না বলা মুশকিল।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, অকালবন্যায় এ বছর প্রায় ৭০ কোটি টাকার ধান নষ্ট হয়েছে। হাকালুকি বাঁচাও আন্দোলন কমিটির সভাপতি এম এ ওয়াদুদ বলেন, বুড়িকিয়ারিতে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে এখন আর হাওরের পানি দ্রুত বের হয়ে কুশিয়ারা নদীতে যেতে পারে না। বোরো ও আউশ ধানের ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। এখন আমন ধানের ফসলও না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। জলাবদ্ধতা কাটাতে বাঁধটি খুলে দিতে হবে। অন্যদিকে ভারতীয় এলাকায় বৃষ্টিপাত হলে কুশিয়ারা নদীতে পানি বেড়ে যায়। তখন আগাম বন্যা রোধ করতে একটি স্লুইসগেট নির্মাণ করতে হবে।
ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ হামিম হাসান বলেন, মূলত জুড়ী নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় হাওরের পানি নিষ্কাশন ব্যাহত হচ্ছে। পিটাইটুকের বাঁধের কারণে খুব একটা সমস্যা হচ্ছে না। ওই বাঁধ না থাকলে পিটাইটুক গ্রামকে রক্ষা করা সম্ভব হতো না। ইটভাটার মালিকদের ইটের খোয়া না ফেলতে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।
পাউবো মৌলভীবাজার কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী এম আমিনুল হক বলেন, হাকালুকি হাওর নিয়ে এখন কোনো কার্যক্রম তাঁদের নেই। তবে সিলেট বিভাগের চারটি জেলার ৩৪টি হাওর নিয়ে একটি প্রকল্প হচ্ছে। এর মধ্যে হাকালুকি ও হাইল হাওর আছে। তখন হয়তো সমস্যাগুলোর সমাধান হতে পারে।