দিনটা উদযাপন করা শুরু হয়েছিলো ১৮৬৮ এ, গৃহযুদ্ধে মারা যাওয়া সৈনিকদের সম্মান জানানোর জন্য। দিনটার নাম ছিলো “ডেকোরেশন ডে” মুলতঃ বাৎসরিক “কবর সাজানোর” দিন। ফুলে ফুলে ভরে যায় যুক্ত্ররাস্ট্রের সব কবরস্থান। ১৯৬৮ এ দিনটির নাম বদল করে রাখা হয় “মেমোরিয়াল ডে” যুক্তরাষ্ট্রের সকল যুদ্ধে নিহত, যুদ্ধাহত, নিখোজ, যুদ্ধবন্দি সকলের জন্য নিবেদিত এ বিশেষ দিনটি।

অনেকগুলি বছর যাবৎ এ দিবসটি পালন হতে দেখছি। কিন্তু প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধের পরপরই এখানে এ দিনটি পালনের তাৎপর্যতা অনেক গুনে বেড়ে যায় এবং ক্রমাগত বাড়ছে। ভাবি, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্ত্ররাষ্ট্র, ভিয়েতনাম/কোরিয়ান যুদ্ধের পরে অনেকগুলো বছর সরাসরি কোন যুদ্ধে অংশ নেয়নি তাই হয়তো “আরেক টা ছুটির দিন” “তিন দিনের উইকেন্ড”,পরিবারের সাথে “মাংশ পুড়িয়ে খাওয়ার “(BBQ) রেওয়াজ টাই বেশী দৃশ্যমান ছিলো, দ্বিতীয়তঃ ভিয়েতনাম যুদ্ধে জড়ানো যুক্ত্ররাষ্ট্র’র জনমতে যেমন বিতর্কিত ছিল এখনকার যুদ্ধগুলো আর বিতর্কিত নয়। ৯/১১ যুক্ত্ররাষ্ট্র’র জনমতে যুদ্ধে জড়ানোর যৌক্তিকতা পালটে দিয়েছে বহুলাংশে। মার্কিনীদের দেশপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে অনেকাংশে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেয়া সৈনিকরা হাতেগোনা এখনো জিবীত আছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অনেক জিবীত সৈনিকদের এখনো দেখি…আর অন্যান্য যুদ্ধের সৈনিকদের তো কথাই নেই। দেখে অনেক ভালো লাগে। এখানকার নতুন প্রজন্মরা দেশ রক্ষার/স্বাধীনতা রক্ষার অকুতোভয় অতন্দ্র সৈনিকদের/বীরদের সম্মানে শ্রদ্ধায় দারুন ভাবে নবপ্রানে উজ্জিবিত।

আমরা একটাই মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেছিলাম, ভৌগলিক অবস্থানে আমাদের গড় আয়ূ কম হওয়াতে আমাদের জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের আমরা দ্রুত হারাচ্ছি। উনাদের কোন বিশেষ দিবস নাই, একামাত্র বিজয় দিবস/স্বাধীনতা দিবসের দায়সারা গোছের “সংবর্ধনা” ছাড়া।দেশের সোনার ছেলে, অকুতোভয় জীবিত বীরমুক্তি যোদ্ধা যারা এদেশটার জন্ম দিলো শুধু তাদের জন্য দীর্ঘ চল্লিশ বছরেরও বেশী সময় ধরে বছরের কোন একটা বিশেষ দিনের জন্ম আমরা না দিতে পারলেও, মুক্তিযুদ্ধে বিরোধীতাকারীদেরকে আস্কারা দিয়ে গাড়ীতে জাতীয় পতাকায় লাগামহীন আস্পর্ধা সহ্য করলাম।

এখন একটু স্বার্থের কথায় আসি, আমরা যুক্ত্ররাষ্ট্রে উদযাপিত অনেক দিবস ই দেশে পালন করি, যেমন যুক্ত্ররাষ্ট্র’র চকলেট কোম্পানি সম্ভবত “ হার্সি” কতৃক আবিস্কত পরে রেহমান সাহেব কতৃক আমদানিকৃত “বিশ্ব ভালোবাসা দিবস” তারপরে “বন্ধু দিবস” “মা” দিবস “বাবা দিবস” “মেয়ে দিবস” “নারী দিবস” ইত্যাদি বেশীর ভাগ দিবসই মার্কিনীদের পয়দা।

অতি লজ্জার সাথে বলতে হয়, আমরা যেহেতু মার্কিন দুনিয়ার প্রায় সব “দিবস” পালনেই আমরা মোটামোটি অভ্যস্ত হয়ে গেছি, এবং পালনও করছি একযোগে মহাসমারহে, তাহলে ওদের আদলে আরেকটা দিবস পালনে ক্ষতি কি? আর সেটা হউক “জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা দিবস” যে দিনটির মহান বীরগাথার তাৎপর্য, এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের আলোক বর্তিকা আমরা পৌছে দেবো আমাদের প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে।

লিখেছেনঃ
এ,জেড আসিফ ইকবাল খান, মেমোরিয়াল ডে,
মে,২৮. ২০১২, মিসৌরি, যুক্তরাস্ট্র