আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী। পুরনো বিরোধের জের ধরে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি তারিকুল মোস্তাক রানা এবং পৌর বিএনপির সভাপতি ও পৌরসভার মেয়র তোফাজ্জল হোসেন খান দিলীপ মুখোমুখি অবস্থান নেওয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।তোফাজ্জল হোসেন খান দিলীপ অভিযোগ করেন, ২৯ অক্টোবর রসুলপুরে অনুষ্ঠিত স্বেচ্ছাসেবক লীগের সমাবেশে তারিকুল মোস্তাক রানা প্রকাশ্যে ঘোষণা দেন, তাঁকে (তোফাজ্জল হোসেন খান দিলীপ) কেউ যদি পিটিয়ে মেরে পোঁটলা বেঁধে হাসপাতালে পাঠাতে পারে, তাঁকে নগদ এক লাখ টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে।
৩১ অক্টোবর দুই বাসচালকের মধ্যকার বচসার জের ধরে রানা ও তাঁর সন্ত্রাসী বাহিনী তোফাজ্জলের মালিকানাধীন পাঁচটি দোকান ভাংচুরসহ লুটপাট করে। এ সময় তারা দুটি অটোরিকশা ও একটি মোটরসাইকেল ভাংচুর করে এবং দুজনকে পিটিয়ে আহত করে। তিনি আরো বলেন, ‘রানার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও হুমকিতে আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
আমার ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যের এবং জানমালের ক্ষতি হতে পারে। এর আগেও রানা আমার পেট্রল পাম্পে হামলা ও ভাঙচুর করে। আমি বর্তমান অবস্থা এমপিকে জানিয়েছি। তিনি আমাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। হামলার বিষয়ে এসপিকে অবহিত করেছি।’রিস্থিতি নিয়ে কথা হয় উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি তারিকুল মোস্তাক রানার সঙ্গে। তিনি জানান, মসুয়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মানিক সরকার জলসিঁড়ি বাসে এসে শনিবার কটিয়াদী বাসস্ট্যান্ডে নামেন। এ সময় মেয়রের ভাগ্নে কামাল তাঁকে গালাগাল ও লাঞ্ছিত করে। তিন মাস আগে কামাল পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি নূরুল হককে কুপিয়ে আহত করে। ওই দিন তার পক্ষের কিছু লোক মেয়রের কয়েকটি দোকানে ভাঙচুর করে।
এরপর দিলীপের লোকজন রানার বাসায় হামলা করে। তাঁর অভিযোগ, বিগত জোট সরকারের আমলে কটিয়াদীতে বিএনপির বাধার কারণে আওয়ামী লীগ কর্মসূচি পালন করতে পারেনি। তাই এখন বিএনপিকে কোনো কর্মসূচি পালন করতে দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, ‘দেশের অন্যত্র স্বেচ্ছাসেবক লীগের অবস্থান যাই হোক, কটিয়াদীতে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নিয়ন্ত্রণ করে আওয়ামী লীগকে।’ আওয়ামী লীগ নেতারা রানার কর্মকাণ্ড সমর্থন করছেন না। পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান হামিদ বলেন, ‘উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের বর্তমান কমিটির বৈধতা নেই। রানা নিজেকে ‘সভাপতি’ প্রচার করে অপকর্ম করে বেড়াচ্ছেন। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও তিনি তৎকালীন স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়নমন্ত্রী জিল্লুর রহমানের (বর্তমান রাষ্ট্রপতি) স্বাক্ষর ও সিলমোহর নকল করে জেল খাটেন। তাঁর কর্মকাণ্ডে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে।’
পৌর কাউন্সিলর ও কৃষক লীগের সভাপতি রুস্তম আলী বলেন, ‘১৯৯৭ সালে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থানায় দায়ের করা প্রতারণার মামলায় রানার পাঁচ বছরের জেল-জরিমানা হয়। রানা অল্প কিছু দিনে রহস্যজনকভাবে রাতারাতি বিপুল সম্পদের মালিক বনে গেছেন। রানা কটিয়াদীতে ‘সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন’ উল্লেখ করে তিনি জানান, এর আগে কটিয়াদীতে রাজনৈতিক সহিংসতা ছিল না। কিন্তু রানার কারণে তা নষ্ট হচ্ছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দকে জানানো হয়েছে।’
নাম ও পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে অনেকে জানান, মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পরই রানা চিহ্নিত অপরাধীদের নিয়ে সন্ত্রাসী বাহিনী গঠন করেন। তাঁর বাহিনীর সদস্যরা চাঁদাবাজি, মারামারি, বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন চালাচ্ছে।এ ব্যাপারে কথা হলে রানা বলেন, ‘এলাকায় আওয়ামী লীগের ভূমিকায় কাজ করছে স্বেচ্ছাসেবক লীগ।’ তিনি বলেন, ‘বিএনপি দুই বছর ধরে শান্তিতে আছে এটাই বোনাস। আমি অ্যাকশনে গেলে বিএনপি কটিয়াদীতে রাজনীতি করতে পারবে না। শান্তির জন্য আমি চুপ করে আছি।’ রানা স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সমালোচনা করে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা করে রাজনীতি করে। তাদের জন্য আওয়ামী লীগ কটিয়াদীতে এত দিন পিছিয়ে ছিল।’
-কালের কন্ঠ
‘কটিয়াদীতে আওয়ামী লীগ বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা করে রাজনীতি করে’। আর যাই হোক রানার এ কথা শতভাগ সত্যি।