আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দু’দিন ধরে কিছু কথা বলছেন। বেশ ভীতি-আতঙ্ক সৃষ্টির মতো কথা! এসবের সার সংক্ষেপ দাঁড়ায় শেখ হাসিনাকে হত্যার ষড়যন্ত্র বা হত্যার ক্ষেত্র তৈরি করা হচ্ছে! এর সঙ্গে দেশের কোন কোন মিডিয়াও জড়িত! ভীতি-আতঙ্ক সৃষ্টি বা সঞ্চারের মতো বক্তব্য বৈকি!

কারণ সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ক্ষমতাসীন দলের দ্বিতীয় প্রধান ব্যক্তি। তার বাবা মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামও বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জেল হত্যার শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন।

তবে এরমাঝে সৈয়দ আশরাফুলের ভীতি সঞ্চারনী বক্তব্যের জবাব দিয়েছেন আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতা ওবায়দুল কাদের।

আশরাফ সাহেবকে আতঙ্ক না ছড়ানোর পরামর্শ দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে। নেত্রীর নিরাপত্তা সমস্যা দেখা দিলে নিরাপত্তা বাড়ানো বা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু এরপরও একই কথা আশরাফ সাহেব সোমবার (২২-০৮-২০১১) আবার বলেছেন । এবার তিনি শেখ হাসিনাকে হত্যার ক্ষেত্র প্রস্তুত ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িয়েছেন মিডিয়াকে। বলেছেন, মিডিয়া রং চড়িয়ে অনেক কিছু প্রচার-প্রকাশ করছে। আন্না হাজারে খুঁজছে, ইত্যাদি!

একই দিনে খবর বেরিয়েছে নৌমন্ত্রী শাহজাহান খানের লোকেরা মাদারীপুর, বগুড়াসহ কয়েকটি অঞ্চলে সংবাদপত্রের বান্ডিল লুট করেছে, আগুন দিয়েছে। আওয়ামী লীগের আগের আমলে এমন কাজ হামেশা করতেন ফেনীর তৎকালীন ত্রাস, গডফাদার নেতা জয়নাল হাজারী। ফেনীতে অনেকদিন তিনি জনকন্ঠ পত্রিকাটির বেচা-বিক্রিও নিষিদ্ধ রাখেন। বলাবাহুল্য এসবের ফল ভালো হয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসার পরই হাজারী ফেনী থেকে পালিয়ে যান । এরপর একনাগাড়ে সাত-আট বছর দেশান্তরী থাকার পর এ  আমলে তিনি দেশে ফিরতে পারেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ আর ওই পূতিগন্ধযুক্ত হাজারীর দায়িত্ব নিতে চায়নি। হাজারী বিষয়ক বদনামও তাই দলটির এখন নেই।

এবার আশরাফ সাহেব দল আর মহাজোটের ভিতরে শেখ হাসিনাকে হত্যার ষড়যন্ত্র-ক্ষেত্র প্রস্তুতের অভিযোগ তোলেন জাতীয় সংসদে অর্থ, যোগাযোগ, বাণিজ্য, স্বরাষ্ট্র, নৌপরিবহন সহ ব্যর্থ মন্ত্রীদের সমালোচনা-পদত্যাগ দাবির পর। তোফায়েল আহমদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, তারানা হালিম প্রমুখ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে এসব সমালোচনায় অংশ নেন।

যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে কি রকম হরিলুট দূর্নীতি হচ্ছে, সারাদেশের রাস্তাঘাট, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার বিষয় নিয়েও খোলামেলা আলোচনা হয় সংসদে। অর্থমন্ত্রী বক্তব্য দিলেই কিভাবে শেয়ারের দাম পড়ে যায়, বাণিজ্য মন্ত্রী কথা বললে কিভাবে অটোমেটিক জিনিসপত্রের দাম বাড়ে এসব নিয়ে ক্ষোভের সঙ্গে আলোচনা হয়। এ কথাগুলাতো একদম অসত্যি না। বরঞ্চ এসব দেশের মানুষের মনের কথা। আক্ষেপের কথা। কারণ বিএনপি-জামায়াতের বেপরোয়া দূর্নীতি-স্বেচ্ছাচারের বিরুদ্ধে দেশের মানুষ বড় আশা করে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছে। বিরোধীদলবিহীন একতরফা সংসদে দেশের প্রকৃত অবস্থা নিয়ে সিনিয়র সদস্যদের খোলামেলা আলোচনা-আত্ম সমালোচনাকে অনেকে গণতন্ত্রের জন্য দরকারি বলে প্রশংসা করেছেন। অনেকে এমনও বলেছেন, গণতান্ত্রিক এই চর্চাটি যতটা আছে তা আওয়ামী লীগেই আছে। বিএনপিতে তা নেই বা সম্ভবও না।

কিন্তু একদিন না যেতেই সৈয়দ আশরাফুল বিষয়টিকে দল-মহাজোটের ভিতরে অন্তর্ঘাতমূলক ষড়যন্ত্র বলা শুরু করেন। সৈয়দ আশরাফুল বলেন ১/১১’র পর কে কোথায় শেখ হাসিনাকে জেলের ভিতর রাখার ষড়যন্ত্র করেছে তা সময়মতো প্রকাশ করা হবে। এসব বিষয় যে তোফায়েল-সুরঞ্জিত-মেনন-ইনুকে ইঙ্গিত করে বলা হয়েছে তা বুঝতে কারো বাড়তি আইকিউ’র দরকার হয়নি। এরমাঝে অর্পিত সম্পত্তি আইন নিয়ে সরকারি গড়িমসির প্রতিবাদে চট্টগ্রামে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের এক সমাবেশে কড়া বক্তব্য রাখেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। সরকারকে মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেছেন সংখ্যালঘুরা সারাজীবন আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংক হয়ে পড়ে থাকবে এমন ভাবাটা ভুল হবে। অর্পিত সম্পত্তি নিয়ে আড়াই বছর সরকার তামাশা করে কাটিয়েছে, এভাবে আইনটি পাশ করলে তা প্রত্যাখ্যান, আন্দোলন শুরুরও কথা বলেন শেখ হাসিনার সঙ্গে গ্রেনেড হামলায় আহত সরকারি দলের প্রবীণ এই আইন প্রনেতা।

যোগাযোগমন্ত্রীকে ব্যর্থ উল্লেখ করে তাকে সরে দাঁড়াতে, মন্ত্রীদের সাবধানে কথা বলতে বলেন ওবায়দুল কাদের। ব্যর্থ মন্ত্রীদের আঁচলের নিচ থেকে বের করে দেবার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে আহবান জানান হাসানুল হক ইনু। বিনা পরীক্ষায় চালকদের লাইসেন্স দেবার নৌপরিবহন মন্ত্রীর আবদারের প্রতিবাদে, তেমন আর একজনকেও লাইসেন্স দেওয়া হলে এর প্রতিবাদে আমরন অনশণ শুরুর ঘোষণা দেন, সরকারি দলের মহিলা এমপি ও বরেণ্য অভিনেত্রী তারানা হালিম। তারানা হালিম বলেছেন, অনশণের ঘোষনা দেবার পর তাঁকে টেলিফোনে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। সৈয়দ আশরাফুলের বক্তব্যের পর বোঝা গেল এসব হুমকি কোন কর্নার থেকে আসছে।

এখন আবার হুমকি দেয়া শুরু করেছেন মন্ত্রী আবুল! পার্লামেন্টে তোপের মুখে যিনি সবার সহানুভূতি ভিক্ষা চেয়েছেন, রংপুর এক্সপ্রেস উদ্বোধন করতে গিয়ে তিনি উল্টো হুমকি দিয়ে বলেছেন, তাকে যারা ধাক্কা দিতে চাচ্ছেন, তাদের পরিণতি ভালো হবে না!

 

দেশের মানুষ-মিডিয়াকে নিত্য হুমকি দিচ্ছেন এরমাঝে নানাভাবে গণবিরোধী চিহ্নিত মন্ত্রী শাহজাহান খান। শিশির ভট্টাচার্য একবার কার্টুন আঁকাতেই মাথা তার আওলাইয়া গেছে? নাজমুল হুদা বা সালাহউদ্দিন চৌধুরীকে নিয়ে জীবনে কতবার এমন কার্টুন আঁকা হয়েছে! তেমন যোগ্যতা অর্জনের পর কি করবেন এই সাবেক জাসদ নেতা?

এখন বিনা পরীক্ষায় তার সংগঠনের চালকদের লাইসেন্স বের করে নেবেনই নেবেন- এমন সময় তিনি ঘৃতাহুতির মতো লাগামছাড়া ঘোষণাটি দিয়েছেন, যখন সড়ক দূর্ঘটনায় তারেক মাসুদ, মিশুক মুনীরের অপঘাত মৃত্যুকে কেন্দ্র করে পুরো দেশ শোকার্ত-প্রতিবাদমুখর। দেশের ভোটার জনগণের মনের অবস্থা নিয়ে কোন ফিলিংসই এই ‘হামসে বড়া কোন হ্যায়’ মন্ত্রীর নেই। দেশের সাংবিধানিক মন্ত্রিসভার দায়িত্বে থাকা কেউ কি এমন বেআইনি বেপরোয়া ভূমিকা নিতে পারেন? বা আখেরে এমন ভূমিকার রেজাল্ট কী? তাকে মন্ত্রীতো করেছেন শেখ হাসিনা। তিনি একটু কথা বললেতো জাতির মনটা পরিষ্কার হয়।

 

অবশ্য এরমাঝে প্রতিক্রিয়া আসতে শুরু করেছে গণবিরোধী চিহ্নিত শাহজাহান খানের বেপরোয়া বক্তব্যের! গাবতলীতে ভ্রাম্যমান আদালতের কাজকর্মের প্রতিবাদে তার লোকজন সেখানে মস্তানি-মারামারি করেছে। আক্রমন শুরু হয়েছে মিডিয়ার ওপর। সারা দুনিয়াতে সব সরকার-রাজনৈতিক দল মিডিয়ার সঙ্গে বিশেষ একটি সুসম্পর্ক রেখে চলে। যুদ্ধাপরাধীদের, গ্রেনেড হামলার বিচার, হরতাল সন্ত্রাসের প্রতিবাদ থেকে শুরু করে প্রধান ইস্যুগুলোতে মূলধারার কোন মিডিয়াটি এখনতক সরকারের পক্ষে নয়? কিছু ব্যর্থ-অকর্মা মন্ত্রীর ভূমিকায় দেশের মানুষ যেখানে বিক্ষুদ্ধ, সেখানে চোখ থাকিতে অন্ধ’র মতো মিডিয়া উল্টা কী তাদের আহা বেশ বেশ ধরনের তেল মেরে যাবে?

পাঠক-দর্শক, শ্রুতিমন্ডলী জনগণের প্রতি কি মিডিয়ার নিজস্ব একটি দায়বদ্ধতা-জবাবদিহিতার বিষয় নেই? সরকারি দলের সাধারণ সম্পাদকের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে সৈয়দ আশরাফুলের যেখানে মূলধারার মিডিয়াগুলোকে সঙ্গে নিয়ে বা রেখে চলার কথা, তার এ ধরনের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে তা তিনি ভেবে দেখেছেন কী? এত বছর বিলাতে থেকেও মত প্রকাশের স্বাধীনতায় হাত রাখলে কী প্রতিক্রিয়া আউটবার্স্ট হতে পারে সে মর্ম কি বুঝতে ব্যর্থ সৈয়দ আশরাফুল? নিহত জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুলের সন্তান হিসাবে যাকে বিশেষ সহানুভূতি-সমীহের চোখে দেখেন দেশের মানুষ।

১/১১’র অকথিত বিষয়াদি ফাঁস করে দেবার হুমকি দিয়ে সুরঞ্জিত-তোফায়েলদের মুখ বন্ধ করে দিতে পারলে, শুধুমাত্র তোষামোদির রাজত্ব সৃষ্টি করলে প্রলয় কী বন্ধ থাকবে, সৈয়দ আশরাফ সাহেব? আজ যদি তোফায়েল আহমদ মারা যান তাহলে উনসত্তুরের নেতাসহ আরো কত কত বিশেষণের সম্ভারে লেখা হবে রাষ্ট্রীয় শোকবানীর সব শব্দমালা?

হতে পারে সৈয়দ আশরাফকে নিয়ে বিশেষ কিছু লেখালেখির কারনে তিনি মিডিয়ার উপর ক্ষ্যাপা। স্থানীয় সরকারের মন্ত্রী হিসাবে তিনি যে নিয়মিত অফিস করেন না, দাপ্তরিক কাজকর্মের জন্য প্রয়োজনীয় সময় দেন না বা দিতে পারেন না, এসব অভিযোগতো তার দলের। রাতের একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর তাকে আর যে ঠিকমতো পাওয়া যায় না, এমন কথাবার্তাতো আওয়ামী লীগের লোকজনই বলে। পরিবারকে সময় দেওয়া উপলক্ষে বছরের কত সময় তিনি বিদেশে কাটান? সাধারণত একটি সরকারি দলের পু্নর্গঠন ভিত্তি মজবুত করে রাখতে দলের সাধারণ সম্পাদককে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

সৈয়দ আশরাফের বিরুদ্ধে আর্থিক দূর্নীতির কোন অভিযোগ নেই। কিন্তু তিনি স্থানীয় সরকারের মন্ত্রী থাকা অবস্থায় তৃণমূল লেভেলে আওয়ামী লীগ কী উপকার পাচ্ছে, এমনটি তিনি বা আওয়ামী লীগের কোন নেতা দাবি করে জানতে চাইতে পারবেন? স্থানীয় সরকার মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের ইলেকশনের সাহস পান না কেন? ডাকসু ইলেকশনের মতো এই ইলেকশন বছরের পর বছর এভাবে অমিমাংসিত-ঝুলিয়ে রাখা সম্ভব কী?

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার তারা করবেন, কিন্তু দেশের চিহ্নিত এক নম্বর যুদ্ধাপরাধী গোলাম আজম, সবচেয়ে টাকাওয়ালা যুদ্ধাপরাধী মীর কাশিম আলী কেন গ্রেফতার হয় না, দেশের মানুষের মনের এই প্রশ্ন যদি মিডিয়ায় ছাপা-প্রচার হয় সেটি সন্দেহজনক কেন ধারনা হবে? যুদ্ধাপরাধীরা যেখানে বিদেশ থেকে আইনজীবী আনার তোড়জোড় করছে, সেখানে দেশবরেণ্য আইনজীবীদের এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে নিয়ে আসার কোন উদ্যোগ তারা কি নিয়েছেন? সরকারের আড়াই বছর চলে গেল, এই মামলার আটক দাগী যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে এখনও চার্জ গঠন, বিচারের কাজই এখন শুরু হলো না। এরপর এই বিচারের হাইকোর্ট-সুপ্রিমকোর্টও বাকি থাকবে। এসব প্রশ্নইতো মিডিয়ায় ঘুরে ফিরে আসছে তাই নয় কী? এসব কী দোষের?

শেয়ার বাজারে লাখ লাখ বিনিয়োগকারীদের ফতুর করার সঙ্গে জড়িত ক্রিমিনালদের পাকড়াও করে শায়েস্তায় সরকারের সমস্যা কি ছিল? বাজারের কি অবস্থা আশরাফুল সাহেব? কোনদিন কি আপনি বাজারে গেছেন না যাওয়া লাগে?

এই আগুন-ভেজালের বাজার পরিস্থিতি নিয়ে নেক্সট ইলেকশনে কি করে যাবেন? এরমাঝেতো আপনাদের গুরুত্বপূর্ণরা যার যার এলাকার পৌরসভা-ইউপি ইলেকশনে হেরে বসে আছেন! বাজারের কোথাও কারো নিয়ন্ত্রণ-শৃংখলা নেই আর আপনাদের অযোগ্য-ব্যর্থ বাণিজ্যমন্ত্রী মানুষকে কম খাওয়ার নসিহত করেন! ভোটার মানুষজনের সঙ্গে এসব কি ডাইরেক্ট ফাজলামো না? সরকারি দলের এমপিরা এর আগে দেশের রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থা নিয়ে সতর্ক করা সত্ত্বেই যোগাযোগমন্ত্রী পরোয়া দেখাননি।

গত আমলে সরকারকে না জানিয়ে ব্যক্তিগত ব্যবসার কাজে সিঙ্গাপুর চলে যাবার অপরাধে চাকরি হারানো অযোগ্য আবুল কিসিমের মানুষটা ‘কাহাকে’ খুশি করতে পারাতে এবার ডাইরেক্ট ফুল মন্ত্রী হিসাবে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মতো দেশের সবচেয়ে বেশি টাকা পয়সার মন্ত্রণালয়ে স্থান পেয়ে গেছেন, তাই কোথাও কাউকে পরোয়া করেন না, এর প্রকৃত রহস্য-তথ্যটি কী দেশের মানুষকে জানানোর মতো সাহস-সঙ্গতি আপনার আছে? রাস্তাঘাট মেরামত-রক্ষণাবেক্ষণের বাজেট বরাদ্দের অতিরিক্ত গৌরিসেনের ৬৯০ কোটি টাকা দেওয়া হয়ে গেলো, আড়াই বছরে হাজার হাজার কিঃমিঃ বেহাল সড়ক-মহাসড়কের মেরামতযজ্ঞ ঈদের আগে অর্থাৎ দু’সপ্তাহে করে ফেলার বিষয়টি নিয়ে কতগুলো দূর্নীতির মামলার আশংকা সৃষ্টি হয়ে থাকল ভবিষ্যতের জন্য?

এই মন্ত্রী আবুল কিনা এরমাঝে আবার সবাইকে ভয় দেখানো শুরু করেছে! বলা শুরু করেছে তাকে যারা ধাক্কা দেবার চেষ্টা করেছে তাদের পরিণতি ভালো হবেনা! এরপর আপনি আবার বললেন সমালোচকরা শেখ হাসিনাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করছে! মিডিয়া খুঁজছে আন্না হাজারে! কেইসটা কী?

তারানা হালিমের বোনের ছেলে মারা গেছে সড়ক দূর্ঘটনায়। একজন খালা হিসাবে তিনি অনেকদিন থেকেই নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। এরপর তারেক মাসুদ-মিশুক মুনীর ট্র্যাজেডিতে ক্রন্দনরত দেশবাসীর সঙ্গে উপহাস করলেন হালের গণবিরোধী চিহ্নিত মন্ত্রী শাহজাহান খান! এর প্রতিবাদে যদি আপনাদের এমপি তারানা হালিম অনশনে নামতে চান তাতে মিডিয়া দোষটা কি?

এই শাহজাহান খান লোকটাকে কী আপনারা পরিবহন শ্রমিক নেতা, হরতালের সময় গাড়ি নামানোর কোটায় মন্ত্রী করেছিলেন! উনিতো আবার দুঃস্থ কিসিমের মানুষ! নিজের কোন বিষয়-সম্পত্তি নেই বা করেন না! পরিবহন ব্যবসা, ইটভাটা থেকে শুরু করে ঢাকা-মাদারীপুরসহ আরো কিছু এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্য ভাইসহ নানাজনের নামে করে যাচ্ছেন!

তা এই লোকটিকে মন্ত্রী করার পর দূর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদের ঘোষণা দিয়ে শুরু করা সরকারের ইমেজ জায়গামতো আছে কিনা তা কী পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে?

নিজের সংগঠনের মেম্বার অদক্ষ চালকদের পরীক্ষা ছাড়া রাস্তায় মানুষ মারার লাইসেন্স দিতে হবে জাতীয় চিল্লাচিল্লি আবদার একজন কেবিনেট মেম্বার হিসাবে উনি এভাবে করেন কোন সাহসে? এ ব্যাপারে কিছুই আপনারা বলছেন না, তাহলে কী পরীক্ষা ছাড়া লাইসেন্স দেবার বিষয় আপনারা তাকে কেবিনেটে পাশ করিয়ে দেবেন? না পারবেন? সবাইতো নিজের ভালো চায় তাইনা? এই আবুল, কম খান চিনি ফারুক, পরিবহন সন্ত্রাসী জাতীয় তিন-চারজন অযোগ্য-অদক্ষ মন্ত্রীকে যদি বাদ দিতে না পারেন, উল্টো তাদের প্রশ্রয় দেন, তাদের বিরুদ্ধে বললে ‘নাশকতা’, ‘শেখ হাসিনাকে হত্যার ক্ষেত্র প্রস্তুতের ষড়যন্ত্র’ গবেষণা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন, তাহলে যে নেক্সট ইলেকশনে আওয়ামী লীগকে বাদ দেবার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলবে যে দেশের মানুষ!

আওয়ামী লীগ বাদ দিলেতো কোন সমস্যা হবেনা সৈয়দ আশরাফুলের! তিনি আবার বিলাতের প্রবাস জীবনে ফেরত চলে যাবেন! তার পরিবারতো বরাবর সেখানেই থাকেন। পকেটে লুকিয়ে রাখা ব্রিটিশ নাগরিকত্ব-পাসপোর্টের কারনে তারও সেখানে অবিরাম অবস্থানের সমস্যা নেই। সমস্যাতো হবে আওয়ামী লীগের সাধারণ নেতা-কর্মী-সমর্থকদের। বিএনপির লোকেরা তাদের ধরে ধরে র্যাবকে দিয়ে লিমন বানাবে। লিমনরা যে সন্ত্রাসী! পরিবার শুদ্ধ সন্ত্রাসী এমন টেস্টিমোনিয়েলতো আওয়ামী এডভান্সরা র্যাবকে দিয়ে রেখেছে।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে না পারলে বা ফিরতে না পারলেতো ক্ষতি হবে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শহীদ পরিবারগুলোর। ৩৯ বছর পর স্বজনদের খুনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে রাজি হয়েছে রাষ্ট্র। দাঁত-নখ বের করে হুড়মুড়িয়ে বেরিয়ে যাবে রাজাকার-যুদ্ধাপরাধীদের দল!

আর এখন দেশের মিডিয়ার অবস্থা কী আশরাফুল সাহেব একটু খোঁজখবর নিয়ে দেখেছেন! বিপুল ভূমিধস বিজয় নিয়ে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগের ভালো কাজের প্রশংসা করে কিছু লিখলেও সে কাগজ এখন আর চলেনা। এমন কি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও তা কেনেন না। এমন কেন হয়ে গেল আশরাফুল সাহেব? হত্যার ষড়যন্ত্র নকশা অনুসন্ধানে সময় নষ্ট না করে এসব যদি একটু খুঁজে দেখতেন? নামাজ রোজা আপনি কতটা করেন তা আপনি আর আল্লাহই জানেন! কিন্তু আপনার দল যে এখন দেশের এক নম্বর নামাজি আর আল্লাহওয়ালা সংগঠন তাতো সংবিধান স্বীকৃত। সংবিধানে বিসমিল্লাহ-ইসলাম রাষ্ট্র ধর্ম, সাবেক ক্ষমতালোভী দুই সামরিক জেনারেলের ধর্ম বিষয়ক মতলববাজির দুটিই আপনাদের হাতে বহাল।

মুজিবকোটের সঙ্গে এত গোলটুপিওয়ালা নেতা দেশের আর কোন দলে নেই। কাজেই সত্যিকারের ধর্ম বিশ্বাসী হয়ে থাকলে হায়াত-মউত নিয়ে দলের সিনিয়র নেতাদের এমন সন্দেহ না করে ভালো কাজকর্মে মন দেয়া, দুষ্টের দমন-শিষ্টের পালনই কী উত্তম না? উল্টো যদি এই আবুল-ফারুক-শাহজাহান কিসিমের দুষ্টদের লালনই নিয়ত হয় তাহলে বেহুলা-লখীন্দরের বাসরঘরের মতো ঘরেও কী শেখ হাসিনাকে নিরাপদ করে রাখা সম্ভব?

রাজনীতিকদের নিরাপত্তা তৈরি-নিশ্চিত করেতো জনগণ। জনগণের পক্ষে থাকলেই তা করে। দেশের জনপ্রিয় মূলধারার মিডিয়া মানে জনগণের পক্ষের মিডিয়া। কারণ জনগণ পয়সা দিয়ে কেনে-দেখে বলেই সেগুলো জনপ্রিয়। সেগুলোর বাজার কাটতি আছে। কাজেই দেশের পপুলার মূলধারার মিডিয়ার বিরুদ্ধে বলা মানে জনগণের বিরুদ্ধে বলা। আর পপুলার মিডিয়াকে যদি নিজেদের বিরুদ্ধে ঠেলে দিতে পারেন, তাহলে কার লাভ? অতএব বাঁচতে চাইলে তোফায়েল আহমদদের না, শাহজাহান খানদের এখনই আটকান। আপনাদের এই শাহজাহান খানরা এখনও জয়নাল হাজারীর চেয়ে বড় কিসিমের হয়ে যাননি।

 

ফজলুল বারীঃ সিডনি প্রবাসী সাংবাদিক।